প্রত্যেক ধর্মের অনুসারী বিশ্বাস করে তার ধর্মই সঠিক। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী বিশ্বাস করে তার ধর্মই আদর্শ ধর্ম ও যথাযথ পন্থা। আপনি যদি বিকৃত ধর্মের অনুসারী কিংবা মানবরচিত মতবাদের অনুসারীদেরকে তাদের বিশ্বাসের পক্ষের যুক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে তারা যুক্তি দিবে যে তারা তাদের বাপ-দাদাদেরকে এই ধর্মমতের উপরে পেয়েছে এবং তারা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। তারপর তারা এমন-সব গল্প ও কাহিনী বর্ণনা করবে যেগুলোর সূত্র সঠিক নয় এবং টেক্সট দোষ-ত্রুটি মুক্ত নয়। তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত এমন কিছু বইয়ের উপর নির্ভর করে যেগুলোর রচয়িতা ও লেখক জানা যায় না। কোন ভাষায় প্রথম রচিত হয়েছে, আর কোন দেশে তা পাওয়া গিয়েছে তাও জানা যায় না। বরং সেগুলো একটা মিশ্রণ যা সংকলন করা হয়েছে, সেগুলোকে সম্মান করা হচ্ছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেগুলোকে গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলোর সূত্র নির্ণয় ও টেক্সটকে নির্ধারণের কোনরূপ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াই।
এই সমস্ত অজ্ঞাত বই, কিচ্ছা-কাহিনী এবং অন্ধ অনুকরণ ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রমাণ হওয়ার উপযুক্ত নয়। সুতরাং এই সকল বিকৃত ধর্ম এবং মানবরচিত মতাদর্শ কি সঠিক; নাকি বাতিল? ...
সকল ধর্ম সঠিক হওয়া অসম্ভব। কারণ সত্য এক; একাধিক নয়। সকল বিকৃত ধর্ম ও মানবরচিত মতাদর্শ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগমন করা এবং সত্য হওয়া অসম্ভব। যেহেতু ধর্ম ও মানবরচিত মতাদর্শ অনেক, অথচ সত্য মাত্র একটি, সুতরাং কোনটি সত্য? তাই বাতিল ধর্ম থেকে সত্য ধর্ম আলাদা করার কিছু মূলনীতি অবশ্যই থাকতে হবে। আমরা যদি কোনো ধর্মে এই মূলনীতিগুলো পরিপূর্ণ দেখি তাহলে বুঝতে পারব যে এটি সত্য ধর্ম। আর যদি এ মূলনীতিগুলো বা এর কোনোটি কোনো ধর্মে অনুপস্থিত থাকে তাহলে বুঝে নিবো যে এটি বাতিল।
সঠিক ধর্ম ও বাতিল ধর্মের মাঝে আমরা যে সমস্ত মূলনীতির মাধ্যমে পার্থক্য করব সেগুলো হলো:
এক:
এই ধর্মটি আল্লাহর কাছ থেকে আসা; যা তিনি একজন ফেরেশতার মাধ্যমে একজন রাসূলের ওপর অবতীর্ণ করেছেন যাতে করে সে রাসূল তাঁর বান্দাদের কাছে এই ধর্ম পৌঁছে দিবেন। কারণ আল্লাহর ধর্মই সত্য ধর্ম। আর মহান আল্লাহ তাদের উদ্দেশে প্রেরিত ধর্মের উপর তাদের বিচার করবেন এবং হিসাব নিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ كَمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ نُوحٖ وَٱلنَّبِيِّـۧنَ مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَٰرُونَ وَسُلَيۡمَٰنَۚ وَءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ زَبُورٗا
“আমি তোমার কাছে ওহী পাঠিয়েছি; যেমন ওহী পাঠিয়েছিলাম নূহের কাছে ও তার পরবর্তী নবীদের কাছে। আরো ওহী পাঠিয়েছিলাম ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তার সন্তানদের কাছে এবং ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের কাছে। আর দাউদকে দিয়েছিলাম যাবূর।”[সূরা নিসা: ১৬৩]
তিনি আরো বলেন:
وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ
“তোমার পূর্বে আমি যে রাসূলই পাঠিয়েছি তাকে ওহীর মাধ্যমে এ কথাই বলেছি যে আমি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই; অতএব তোমরা আমার ইবাদত করো।”[সূরা আম্বিয়া: ২৫]
সুতরাং কোনো মানুষ যদি কোনো ধর্ম নিয়ে আসে এবং সেটিকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত না করে নিজের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে; তাহলে নিঃসন্দেহে সেটি বাতিল ধর্ম।
দুই:
এই ধর্ম এক আল্লাহর উপাসনা করার দিকে আহ্বান করবে, শির্ককে হারাম করবে এবং শির্কের দিকে ধাবিত করে এমন সকল পথকে হারাম করবে। কারণ একক উপাস্যের উপাসনার আহ্বান এটি ছিল সকল নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূলভিত্তি। প্রত্যেক নবী তার সম্প্রদায়কে বলেছে:
ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُ
“তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো উপাস্য নেই।”[সূরা আ’রাফ: ৭৩] সুতরাং যে ধর্মে শির্ক আছে এবং আল্লাহর সাথে অন্য কোনো নবী, ফেরেশতা বা ওলীকে অংশীদার করা হয়েছে সেটি বাতিল ধর্ম; যদিও এর অনুসারীরা কোনো একজন নবীর অনুসরণের দাবি করে।
তিন:
রাসূলরা যে সব মৌলিক বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন সেগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া; যেমন এক আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর পথের দিকে দাওয়াত দেওয়া, শির্ককে হারাম করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতাকে হারাম করা, অন্যায়ভাবে হত্যা করাকে হারাম করা, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীলতাকে হারাম করা । আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ
“তোমার পূর্বে আমি যে রাসূলই পাঠিয়েছি তাকে ওহীর মাধ্যমে এ কথাই বলেছি যে আমি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই; অতএব তোমরা আমার ইবাদত করো।”[সূরা আম্বিয়া: ২৫]
তিনি আরো বলেন:
قُلۡ تَعَالَوۡاْ أَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَيۡكُمۡۖ أَلَّا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡـٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗاۖ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ
বলো, “এদিকে এসো, তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা আমি পড়ো শোনাই। তা এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কোনো কিছু শরীক করবে না। এছাড়া পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না।” তোমাদেরকে ও তাদেরকে আমিই জীবিকা দান করি। “প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক অশ্লীল কাজের কাছেও যাবে না। ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করবে না, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে এই আদেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।”[সূরা আন’আম: ১৫১]
তিনি আরো বলেন:
وَسۡـَٔلۡ مَنۡ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رُّسُلِنَآ أَجَعَلۡنَا مِن دُونِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ءَالِهَةٗ يُعۡبَدُونَ
“আমি তোমার পূর্বে যেসব রাসূল পাঠিয়েছিলাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখ, ইবাদত করার জন্য করুণাময় আল্লাহ ছাড়া আমি কি অন্যান্য উপাস্য ঠিক করেছিলাম? ”[সূরা যুখরুফ: ৪৫]
চার:
এই ধর্মের একটি বিষয় অন্য বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক এবং বিরোধপূর্ণ হবে না। অর্থাৎ এই ধর্ম এমন কোনো নির্দেশ দিবে না যেটি অন্য নির্দেশ দিয়ে বাতিল করা হয়। একটি বিষয়কে হারাম করার পর কোনো কারণ ছাড়াই অনুরূপ কোনো বিষয় হালাল করে না। একটি গোষ্ঠীর জন্য কিছু হারাম অথবা বৈধ করার পর অন্য গোষ্ঠীর উপর সেটি হারাম করে দেয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا
“তারা কি কুরআন অনুধাবন করে না? এই কুরআন যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসত তাহলে তারা এতে অনেক বৈপরিত্য দেখতে পেত।”[সূরা নিসা: ৮২]
পাঁচ:
এই ধর্ম এমন আদেশ-নিষেধ, প্রতিরোধক ও নৈতিকতা বিধিবদ্ধ করবে যেগুলোর মাধ্যমে মানুষদের মৌলিক পাঁচটি অধিকার তথা ধর্ম, ইজ্জত, সম্পদ, জান ও বংশধারাকে রক্ষা করবে।
ছয়:
এই ধর্ম মানুষ নিজে নিজের উপর অন্যায় করা থেকে এবং একে অপরের উপর অন্যায় করা থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে রহমত হিসেবে আবির্ভূত হওয়া; চাই এই অন্যায় অধিকারগুলো লঙ্ঘন করার মাধ্যমে হোক কিংবা নেয়ামতরাজীকে কুক্ষিগত করার মাধ্যমে হোক কিংবা অগ্রজগণ কর্তৃক অনুজদেরকে পথভ্রষ্ট করার মাধ্যমে হোক। আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিস সালামের উপর যে তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন তাতে এই রহমত অধিভুক্ত থাকা সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে তিনি বলেন:
وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى ٱلۡغَضَبُ أَخَذَ ٱلۡأَلۡوَاحَۖ وَفِي نُسۡخَتِهَا هُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلَّذِينَ هُمۡ لِرَبِّهِمۡ يَرۡهَبُونَ
“পরে যখন মুসার রাগ প্রশমিত হয় তখন সে ফলকগুলো তুলে নেয়। ফলকসমূহের লিপিতে সেইসব লোকের জন্য পথ-নির্দেশ ও রহমতের কথা লেখা ছিল যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে।”[সূরা আ’রাফ: ১৫৪]
মহান আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামকে প্রেরণের ব্যাপারে বলেন:
وَلِنَجۡعَلَهُۥٓ ءَايَةٗ لِّلنَّاسِ وَرَحۡمَةٗ
“আর যাতে আমরা তাকে মানুষদের জন্য নিদর্শন ও রহমত বানাতে পারি।”[সূরা মারইয়াম: ২১]
সালেহ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে তিনি বলেন:
قَالَ يَٰقَوۡمِ أَرَءَيۡتُمۡ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٖ مِّن رَّبِّي وَءَاتَىٰنِي رَحۡمَةٗ
“সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়! বলো দেখি, আমার কাছে যদি আমার প্রভুর কোনো স্পষ্ট প্রমাণ থাকে এবং তিনি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে কোনো রহমত প্রদান করে থাকেন।”[সূরা হূদ: ৬৩]
কুরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِ مَا هُوَ شِفَآءٞ وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ
“আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত।”[সূরা ইসরা: ৮২]
সাত:
এই ধর্মে আল্লাহর শরীয়তের (আইনের) দিকে নির্দেশনা থাকা এবং আইন দ্বারা আল্লাহর কী উদ্দেশ্য সেটি মানুষকে দেখিয়ে দেয়া এবং মানুষকে আরও জানানো যে, সে কোথা থেকে এসেছে, কোথায় তার গন্তব্য? আল্লাহ তাআলা তাওরাত সম্পর্কে বলেন:
إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِيهَا هُدٗى وَنُورٞۚ
“আমরা তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, এতে রয়েছে পথ-নির্দেশ ও আলো।”[সূরা মায়েদা: ৪৪]
ইঞ্জিল সম্পর্কে জানিয়ে আল্লাহ বলেন:
وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَ فِيهِ هُدٗى وَنُورٞ
“আমরা তাকে ইঞ্জিল দিয়েছি, যাতে রয়েছে পথ-নির্দেশ ও আলো।”[সূরা মায়েদা: ৪৬]
কুরআন কারীম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ
“তিনি সেই সত্তা, যিনি তার রাসূলকে পথ-নির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন।”[সূরা তাওবা: ৩৩]
সত্য ধর্ম হলো ঐ ধর্ম যা আল্লাহর শরীয়তের (আইনের) দিকে পথ দেখায় এবং মানুষের মনে নিরাপত্তা ও প্রশান্তি নিশ্চিত করে। তা এভাবে যে, মন থেকে যাবতীয় কুমন্ত্রণা দূর করে দেয়, মনের সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে এবং সকল সমস্যার স্পষ্ট সমাধান দেয়।
আট:
এই ধর্ম উত্তম চরিত্র ও কর্মের দিকে আহ্বান করে। যেমন: সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারিতা, লজ্জাশীলতা, পবিত্রতা ও বদান্যতা। আর মন্দ কাজ করতে নিষেধ করে, যেমন: পিতামাতার অবাধ্যতা, মানুষ হত্যা করা, অশ্লীলতা, মিথ্যাচার, যুলুম, সীমালঙ্ঘন, কৃপণতা ও পাপাচার।
নয়:
যে ব্যক্তি এই ধর্মে বিশ্বাস করবে তার জন্য সাফল্য সুনিশ্চিত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ
“ত্বাহা। তুমি কষ্ট পাবে, এ জন্য আমি তোমার কাছে কুরআন নাযিল করিনি।”[সূরা ত্বাহা: ১-২]
এই ধর্ম সঠিক ফিতরাতের (সহজাত প্রবৃত্তির) সাথে সামঞ্জস্যশীল হবে। আল্লাহ বলেন:
فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ
“আল্লাহর স্বাভাবিক রীতি (মেনে চলো), যে রীতির উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।”[সূরা রূম: ৩০]
এই ধর্ম সঠিক আকলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। কারণ সঠিক ধর্মই আল্লাহর শরীয়ত (আইন)। আর সঠিক আকল আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর শরীয়ত ও আল্লাহর সৃষ্টি পরস্পর বিরোধী হওয়া অসম্ভব।
দশ:
এই ধর্ম সত্যের পথ দেখিয়ে দিবে, আর বাতিল থেকে সতর্ক করবে। এই ধর্ম হেদায়াতের নির্দেশনা দিবে, আর বিভ্রান্তি থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। এই ধর্ম মানুষকে এমন সরল-সঠিক পথের দিকে আহ্বান করবে যাতে কোনো ধরনের বক্রতা ও বিচ্যুতি নেই। জীনেরা কুরআন শোনার পর একে অন্যকে কী বলেছিল তা উদ্ধৃত করে আল্লাহ বলেন:
يَٰقَوۡمَنَآ إِنَّا سَمِعۡنَا كِتَٰبًا أُنزِلَ مِنۢ بَعۡدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلۡحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٖ مُّسۡتَقِيمٖ
“তারা বলল: হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা একটি কিতাব শুনে এসেছি, যা মুসার পরে অবতীর্ণ হয়েছে, পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যতা সমর্থন করছে এবং সত্য ও সরল পথের সন্ধান দিচ্ছে।”[সূরা আহক্বাফ: ৩০]
এমন কিছুর প্রতি আহ্বান করবে না যা তাদের কষ্টের কারণ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ
“ত্বাহা। তুমি কষ্ট পাবে, এ জন্য আমি তোমার কাছে কুরআন নাযিল করিনি।”[সূরা ত্বাহা: ১-২]
এমন কিছুর নির্দেশ দিবে না যার ফলে তাদের ধ্বংস হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا
“তোমরা নিজেরা খুনোখুনি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াবান।”[সূরা নিসা: ২৯]
জাতি-বর্ণ-গোত্রের ভিত্তিতে অনুসারীদের মাঝে পার্থক্য করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٞ
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হও। তোমাদের মাঝে যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়ার অধিকারী, সে-ই তোমাদের সবার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ।”[সূরা হুজুরাত: ১৩]
অতএব, সত্যধর্মের তারতম্যের কষ্ঠিপাথর হলো আল্লাহর ভয়।