0 / 0

পেশাব-ঝরা রোগীর পবিত্রতা ও নামায

প্রশ্ন: 39494

আমি অনুভব করি যে কয়েক ফোঁটা পেশাব বের হয়েছে। আমি নামাযের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। আমাকে উত্তর দেওয়া হয়, প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য অযু করবে এবং যত ইচ্ছা নামায পড়বে। অন্য নামাযের ওয়াক্ত শুরু হলে নতুন করে অযু করবে। আমার প্রশ্ন হলো: আমার জন্য কি নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার আগে অযু করা জায়েয হবে? যেমন: মসজিদে জামাতের সাথে নামায ধরার জন্য? যখন আমি বাসার বাইরে থাকবো তখন কি এক অযু দিয়ে যে নামাযগুলোর ওয়াক্ত হয় সেগুলো আদায় করতে পারবো? যদি জায়েয না হয় তাহলে আমি আমার আন্ডার ওয়্যার কিভাবে পবিত্র করবো যাতে করে সেটি দিয়ে অযু ও নামায পড়তে পারি? আমার জন্য কি এক অযু দিয়ে দীর্ঘ নামায পড়া জায়েয? যেমন: এশার পর তারাবীহর নামায? আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

যে ব্যক্তির অপবিত্রতা চলমা, যেমন: পেশাব-ঝরা রোগী সে ব্যক্তি আলেমদের দৃষ্টিতে ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর হুকুমে পড়বে। এমন ব্যক্তি অপবিত্রতা ছড়িয়ে যায় এমন কিছু থেকে বেঁচে থাকবে, প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য অযু করবে এবং ঐ অযু দিয়ে যত খুশি ফরয ও নফল নামায পড়বে। যদি পেশাব-ঝরা রোগী অযু করার পর অন্য নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করার পরও তার প্রস্রাবের অঙ্গ থেকে কিছু বের না হয়, তাহলে তার জন্য  (পুনরায়) অযু করা আবশ্যক হবে না। সে প্রথম অযুর উপর বলবৎ থাকবে। তার জন্য দুই নামায একত্রে পড়ার ছাড় (রুখসত) রয়েছে।

উত্তর

পেশাব-ঝরা রোগীর হুকুম ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর হুকুমের অধিভুক্ত

১- যে ব্যক্তির অপবিত্রতা স্থায়ী ও চলমান, যেমন: পেশাব-ঝরা রোগী কিংবা অনবরত বায়ু ত্যাগের রোগী, তিনি প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের জন্য অযু করবেন। এই অযু দিয়ে তিনি যত রাকাত ইচ্ছা ফরয ও নফল নামায পড়বেন; যতক্ষণ না আরেক নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়।

দলিল হলো: সহিহ বুখারী ও মুসলিমে আছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: ফাতেমা বিনতে আবু হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইস্তেহাযাগ্রস্ত হই। তারপর আর পবিত্র হই না। আমি কি নামায ছেড়ে দিব? তিনি বললেন: সেটি শিরা (থেকে রক্তক্ষরণ); হায়েযের স্রাব নয়। যখন তোমার হায়েযের স্রাব শুরু হবে তখন নামায পড়বে না। যখন হায়েযের স্রাব থেমে যাবে তখন তুমি রক্ত ধৌত করবে এবং নামায পড়বে। এরপর প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্ত এলে সেটির জন্য অযু করবে।”[হাদীসটি বুখারী (২২৬) বর্ণনা করেন, হাদীসের ভাষা তার। মুসলিম (৩৩৩) হাদীসটি বর্ণনা করেন]

আলেমদের কাছে পেশাব-ঝরা রোগী ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর হুকুমের অধিভুক্ত।

কিন্তু যদি জানা যায় যে তার পেশাব একটা সময়ে থেমে থাকে যে সময়টুকু পবিত্রতা অর্জন করা ও নামায আদায় করার জন্য যথেষ্ট তাহলে ঐ সময় পর্যন্ত দেরী করা তার উপর আবশ্যক।

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “পেশাব-ঝরা রোগীর দুই অবস্থা:

ক. যদি তার পেশাব এমনভাবে চলমান থাকে যে থামে না, মূত্রাশয়ে কিছু জমলেই নেমে যায়: এমন ব্যক্তি ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর অযু করবে, কিছু একটা দিয়ে (যেমন ডায়াপার, ন্যাকড়া) তার লজ্জাস্থানকে আবদ্ধ করে রাখবে, তারপর সে নামায পড়বে। এর মধ্যে যা বের হবে এতে তার নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।

খ. যদি পেশাব করার পর পেশাব-ঝরা থেকে যায়; এমন কি সেটা দশ মিনিট অথবা পনের মিনিট পরে হলেও: এমন ব্যক্তি পেশাব থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তারপর অযু করে নামায পড়বে, এমনকি এতে করে তার জামাতের সাথে নামায আদায় ছুটে গেলেও।”[সমাপ্ত][আসইলাতুল বাবিল মাফতূহ: প্রশ্ন-১৭, পর্ব:৬৭]

ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর পবিত্রতা

ইস্তেহাযার রোগী ও সমধরণের রোগীর পবিত্রতা সম্পর্কে আলেমরা এই মর্মে মতভেদ করেছেন যে, ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলেই কি ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর পবিত্রতা শেষ হয়ে যায়; নাকি অন্য ওয়াক্ত প্রবেশ করলে পবিত্রতা শেষ হয়। এই মতভেদের ফলাফল প্রকাশ পায় ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে ফজরের নামাযের জন্য অযু করেছে, সে কি তার এই অযু দিয়ে চাশতের নামায ও দুই ঈদের নামায পড়তে পারবে; নাকি পারবে না?

যারা বলেন: ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর পবিত্রতা বাতিল হয়ে যায়, তারা এভাবে করা থেকে বারণ করবেন। যেহেতু সূর্যোদয়ের মাধ্যমে তার পবিত্রতা শেষ হয়ে গিয়েছে।

আর যারা বলেন: আরেক নামাযের ওয়াক্ত শুরু হলে তার পবিত্রতা বাতিল হয়, তারা তার জন্য ফজরের অযু দিয়ে চাশত ও দুই ঈদের নামায পড়াকে জায়েয বলেন। কারণ যোহরের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত তার পবিত্রতা বলবৎ থাকে।

উভয় মত ইমাম আহমদের মাযহাবে রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য মাযহাবেও রয়েছে।[আল-ইনসাফ (১/৩৭৮), আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা (৩/২১২)]

তবে নিরাপদ হলো চাশত ও দুই ঈদের নামাযের জন্য নতুন করে অযু করা। শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ এই ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন: (22843) নং প্রশ্নোত্তর।

২- উপর্যুক্ত বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বলা যায়: আপনি কোন ওয়াক্তের নামায পড়ার জন্য ওয়াক্ত হওয়ার আগেই অযু করবেন না; চাই সেটা জামাত ধরার জন্য হোক বা অন্য কিছুর জন্য। কারণ নতুন ওয়াক্ত প্রবেশ করলে আপনার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যাবে।

তবে আমরা বলে রাখছি যে এই বিধানটি ‘অনবরত অপবিত্রতা এবং অপবিত্র কিছু বের হওয়ার’ সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু যদি পেশাব-ঝরা রোগী অযু করার পর অন্য ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত তার থেকে কিছু বের না হয়, তাহলে তার উপর অযু আবশ্যক হবে না। বরং সে প্রথম অযুর উপর বলবৎ আছে।

সুতরাং ফকীহদের বক্তব্য: “প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য অযু করা” এটি সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য যদি কোনো কিছু বের হয়।

বুহূতী রাহিমাহুল্লাহ আর-রাওদুর মুরবি (পৃ. ৫৭) গ্রন্থে বলেন: “ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারী এবং তার অনুরূপ যাদের অনবরত পেশাব ঝরে, অনবরত কামরস বের হয় কিংবা বায়ু নির্গত হয় ... তারা প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশ করলে অযু করবে, যদি কোনো কিছু বের হয়। আর যতক্ষণ ওয়াক্ত আছে ততক্ষণ ফরয ও নফল নামায পড়বে। আর যদি কোনো কিছু বের না হয় তাহলে অযু করা ওয়াজিব হবে না।”[সমাপ্ত]

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীকে প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে অযু করতে হবে, যদি কোনো কিছু বের হয়। যদি কোনো কিছু বের না হয়, তাহলে প্রথম অযুর উপরই সে বলবৎ আছে।[আশ-শারহুল মুমতি’ (১/৪৩৮) থেকে সমাপ্ত]

৩- যদি আপনি ঘরের বাইরে থাকেন, আর ওয়াক্ত প্রবেশের কারণে আপনার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়, তখন আপনি নামায পড়তে চান; তাহলে আপনাকে অপবিত্র স্থান ধৌত করার পর ও স্থানটি (ডায়াপার বা ন্যাকড়া দিয়ে) আবদ্ধ করার পর পুনরায় অযু করতে হবে। এজন্য আবদ্ধ করতে হবে যাতে করে সাধ্যানুযায়ী নির্গত নাপাকিকে ছড়ানো থেকে প্রতিরোধ করা যায়।

আন্ডার ওয়্যারকে ধুয়ে পবিত্র করতে হবে। যদি আপনি নামায পড়ার জন্য আলাদা কিছু পবিত্র পোশাক আপনার সাথে রাখেন সেটা আপনার জন্য বেশি সহজ। যদি কাপড় ধৌত করা বা পাল্টানো আপনার জন্য কঠিন হয়ে যায়; তাহলে যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থাতেই নামায পড়বেন।

শাইখ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘পেশাব-ঝরা রোগে আক্রান্ত যে রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেননি, তিনি প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশের পর অযু করবেন। তার শরীরে যা লেগেছে তা ধুয়ে ফেলবেন। যদি তার জন্য কষ্টকর না হয় তাহলে নামাযের জন্য পবিত্র কাপড় রাখবেন। আর যদি কষ্টকর হয় তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্বীনে কোনো রূপ সংকীর্ণতা রাখেননি।” তিনি আরো বলেন: “আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, তোমাদের জন্য কঠিন চান না।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি যখন তোমাদেরকে কোনো নির্দেশ প্রদান করবো তখন তোমরা সাধ্যমত তা করার চেষ্টা করবে।” তারপর সে নিজের জন্য এমন কোন সতর্ক উপায় অবলম্বন করবেন যা তার কাপড়ে, পোশাকে অথবা নামায পড়ার স্থানে পেশাব ছড়াতে বাধা দিবে।’[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (১/১৯২) থেকে সমাপ্ত]

পেশাব-ঝরা রোগী দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করতে পারবেন

আপনার জন্য যদি প্রত্যেক নামাযের জন্য অযু করা ও কাপড় ধৌত করা কঠিন হয় তাহলে যোহর ও আসরের নামায একত্রে পড়া আপনার জন্য বৈধ। আপনি এক অযু দিয়ে যে কোনো একটির ওয়াক্তে উভয় নামায পড়বেন। অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশার নামায একত্রে আদায় করতে পারবেন, হোক সেটি ঘরের ভেতরে কিংবা বাইরে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ মাজমুউল ফাতাওয়া (২৪/১৪) বইয়ে বলেন: “রোগী ও ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারী নামায একত্রে আদায় করতে পারবে।”[সমাপ্ত]

শাইখ ইবনে উছাইমীন ‘আশ-শারহুল মুমতি’ বইয়ে (৪/৫৫৯) বলেন: “ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর জন্য দুই যোহর (যোহর ও আসর) এবং দুই এশা (মাগরিব ও এশা) একত্রে আদায় করা জায়েয। কারণ প্রত্যেক নামাযের জন্য অযু করা কঠিন।”[সমাপ্ত]

ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারী কি এশার অযু দিয়ে কিয়ামুল লাইল নামায আদায় করতে পারবে?

৪- আপনি এশার অযু দিয়ে কিয়ামুল লাইল নামায পড়তে পারবেন, যদিও কিয়ামুল লাইলের নামায মধ্যরাতের পর পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়।

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর জন্য কি মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়ার পর এশার অযু দিয়ে কিয়ামুল লাইল পড়া জায়েয?

তিনি উত্তর দেন:

“এই মাসআলায় মতভেদ রয়েছে। কিছু আলেম মনে করেন যে মধ্যরাত পেরিয়ে গেলে তার জন্য অযু নবায়ন করা আবশ্যক। কেউ কেউ বলেন: তার উপর অযু নবায়ন করা আবশ্যক নয়। এটি প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত।”[সমাপ্ত][ফাতাওয়াত-ত্বাহারাহ (পৃ. ২৮৬)]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android