গায়েবের প্রকারভেদ
গায়েব দুই প্রকার:
১. পরম গায়েব। এই প্রকার গায়েব আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। যেমন: কিয়ামতের সময়, বৃষ্টি বর্ষণের সময় প্রভৃতি।
২. আপেক্ষিক গায়েব। এটি হচ্ছে এমন গায়েব যা কিছু সৃষ্টজীব জানে না; আর কিছু সৃষ্টজীব জানে। এটি ঐ সমস্ত ব্যক্তির জন্য গায়েব যারা এটি জানে না। আর যারা এটি জানে তাদের জন্য গায়েব নয়।
গায়েব কী?
ইসলামে গায়েব হচ্ছে মানুষের ইন্দ্রিয় থেকে অদৃশ্য সকল কিছু। সেটি উহ্য গোপন থেকে যাক যা জানতে মানুষ অক্ষম, যা কেবল সূক্ষ্মদর্শী সম্যক অবহিত আল্লাহ ছাড়া কেউ জানতে পারবে না। কিংবা সেটি এমন কিছু হোক যা মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নিশ্চিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে।
কিছু গায়েব মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ বা অনুরূপ মাধ্যমসমূহ ব্যবহার করে জানতে পারে। এ কথা এমন বস্তুসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেগুলোর ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়ের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়ক মাধ্যম ব্যবহারের দ্বারা পৌঁছানো সম্ভব। যেমন: দূরবীন বা এ ধরনের যন্ত্রপাতি। এগুলো আপেক্ষিক গায়েবের অন্তর্ভুক্ত যেমনটি আমরা অচিরেই তুলে ধরব।
গায়েবের প্রতি ঈমানের গুরুত্ব
যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টি থেকে পৃথক করে তার মাঝে গায়েবের প্রতি ঈমান অন্যতম। কারণ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলো অনুধাবনে মানুষ ও প্রাণী উভয়ে সমান। কিন্তু গায়েবের উপর ঈমান আনার যোগ্যতা কেবল মানুষেরই আছে; প্রাণীর নেই। তাই সকল আসমানী ধর্মের প্রতি ঈমানের অন্যতম বুনিয়াদ হচ্ছে গায়েবের প্রতি ঈমান আনা। এ কারণে শরীয়তসমূহ এমন অনেক গায়েবী বিষয় নিয়ে এসেছে যেগুলো মানুষ কেবল কুরআন-সুন্নাহতে প্রমাণিত ওহীর মাধ্যমেই জানতে পারে। যেমন: আল্লাহ তায়ালা, তাঁর গুণাবলি ও কর্মসমূহ, সাত আসমান, ফেরেশতা, নবীগণ, জান্নাত ও জাহান্নাম, শয়তান ও জীনসহ অন্যান্য সকল গায়েবী ঈমানের প্রকৃত জ্ঞানসমূহ যা কেবল আল্লাহ ও তার রাসূল থেকে প্রাপ্ত সত্য সংবাদের মাধ্যমে জানা সম্ভব।
গায়েবের বিভাজন:
১. পরম গায়েব (الغيب المطلق): যে গায়েব জ্ঞানার্জনের মাধ্যমসমূহ বা ইন্দ্রিয়সমূহ ব্যবহার করে মানুষের পক্ষে জানা সম্ভবপর নয়। এটি দুই প্রকার।
প্রথম প্রকার: যা আল্লাহ তাআলা বার্তাবাহক রাসূলদের মাধ্যমে মানুষদেরকে জানিয়েছেন বা যার কিছু অংশ তাদেরকে জানিয়েছেন।
এর উদাহরণ হচ্ছে: শয়তান ও জীন এবং তাদের নানান খবরাখবর। যেমন: আল্লাহ বলেন:
قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ وَلَنْ نُشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا
“বলুন: আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, একদল জীন কান পেতে (কুরআন) শুনেছে। তারপর তারা বলেছে: আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা (সকলকে) সৎপথ প্রদর্শন করে; তাই আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আমাদের প্রভুর সাথে কাউকে কখনও শরীক করব না।”[সূরা জীন: ১,২]
দ্বিতীয় প্রকার: যার জ্ঞান আল্লাহ এককভাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। কোনো সৃষ্টিকে তা জানাননি; না কোনো প্রেরিত নবীকে, আর না কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাকে। আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীতে এটাই উদ্দেশ্য:
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
“যাবতীয় গায়েবী বিষয়ের চাবি তাঁরই কাছে। কেবল তিনিই সেসব জানেন।”[সূরা আন’আম: ৫৯]
এর উদাহরণ হচ্ছে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় জানা, মৃত্যুর সময়-স্থান-কারণ জানা এবং আল্লাহ নিজে নিজের নামকরণ করেছেন এমন কিছু নাম জানা (যা মানুষের অজানা)। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ
“কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাতৃগর্ভে যা (সন্তান) আছে তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন ভূখণ্ডে সে মারা যাবে।”[সূরা লুকমান: ৩৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দোয়ায় বলেন:
اللهُمَّ إني أسْألُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أوْ عَلَّمْتَهُ أحداً مِنْ خَلْقِكَ أو اسْتأثَرْتَ بِهِ في عِلْمِ الغَيْبِ عِنْدَكَ
‘আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার প্রতিটি নামের উসীলায়; যে নাম আপনি নিজের জন্য রেখেছেন অথবা আপনার সৃষ্টজীবের কাউকে শিখিয়েছেন অথবা নিজ গায়েবী জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন।’
সীমাবদ্ধ আপেক্ষিক গায়েব: এটি হচ্ছে এমন গায়েব যা কিছু মানুষের কাছে অজানা ছিল। যেমন: ঐতিহাসিক ঘটনাবলি; যারা এ ঘটনাগুলো জানেনি তাদের কাছে এগুলো গায়েব। তাই আল্লাহ তা’আলা ইমরানের পরিবারের ঘটনা উল্লেখ করার পর নবী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন:
ذَلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ أَقْلَامَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ
“এ হচ্ছে গায়েবী সংবাদ যা আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে অবহিত করছি। তাদের মধ্যে কে মরিয়মের দায়িত্ব নিবে তা ঠিক করার জন্য তারা যখন তাদের (লটারির) কলম নিক্ষেপ করছিল তখন তুমি তাদের মধ্যে ছিলে না। তারা যখন (বিষয়টি নিয়ে) ঝগড়া করছিল তখনও তুমি তাদের কাছে ছিলে না।”[সূরা আলে-ইমরান: ৪৪]
সীমাবদ্ধ অ-আপেক্ষিক গায়েব: এটি হচ্ছে এমন সব বিষয় যা ইন্দ্রিয় থেকে অনুপস্থিত; সেটা সময়ের ব্যবধানের কারণে (ভবিষ্যত) বা স্থানের ব্যবধানের কারণে বা অন্য যে কারণে হোক না কেন; যতক্ষণ না সেই ব্যবধান দূর হয়ে যায়। যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেন:
فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ الْمَوْتَ مَا دَلَّهُمْ عَلَى مَوْتِهِ إِلَّا دَابَّةُ الْأَرْضِ تَأْكُلُ مِنْسَأَتَهُ فَلَمَّا خَرَّ تَبَيَّنَتِ الْجِنُّ أَنْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ الْغَيْبَ مَا لَبِثُوا فِي الْعَذَابِ الْمُهِينِ
“যখন আমি সুলাইমানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন উইপোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল; যে পোকা সোলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন তখন জিনদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, গায়েবের জ্ঞান থাকলে তারা এই লাঞ্ছনাকর শাস্তির মধ্যে অবস্থান করত না।”[সূরা সাবা: ১৪] এটি সুলাইমান আলাইহিস সালামের মৃত্যুর প্রসঙ্গে।
গায়েবী বিষয়াবলির কিছু উদাহরণ
রুহ: আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
“তারা আপনাকে রূহ (আত্মা) সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন: ‘রূহ হলো আমার প্রভুর আদেশজাত। (এ সম্পর্কে) তোমাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।”[সূরা ইসরা: ৮৫]
কিয়ামতের ছোট-বড় আলামতসমূহ: যে আলামত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে জিবরীলে জানিয়েছেন: “আর তুমি দেখতে পাবে (এককালের) নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, দরিদ্র, বকরীর রাখালদের বড় দালান-কোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় গর্ব অহংকারে মত্ত।”
এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত গায়েবী সংবাদ, যা বাস্তবে ঘটেছে। বড় আলামতের মাঝে আরো রয়েছে: মাসীহ দাজ্জালের হাদীস। মাসীহ শেষ যমানায় বের হবে। শেষ যমানায় একটি জন্তুর আত্মপ্রকাশ ঘটাবে।[ওয়াক্বফ এবং ইসলামী বিষয়াবলির মন্ত্রণালয় রচিত ‘আল-আকীদাহ’ গ্রন্থ থেকে সমাপ্ত, শামেলা সংস্করণ]
সুতরাং আপনার বন্ধু যা করেছে সেটি আপেক্ষিক গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। এটি পরম গায়েবের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং এমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অনুভবযোগ্য কারণসম্বলিত বিষয় বা অনুরূপ বিষয়াবলি জানার ক্ষেত্রে কোন আপত্তি নেই।
তবে, বিবেকবান ব্যক্তির কাছে এটি অজানা নয় যে এমন অগণিত বিষয় রয়েছে যেগুলোতে বক্তার বক্তব্য ও জ্ঞানীর জ্ঞান সঠিক হয়নি। এমন কত ঘটনা ঘটে যে, কেউ একজন সিদ্ধান্ত দিল: ট্রেনটি বা প্লেনটি নির্ধারিত সময়ে পৌঁছবে; কিন্তু সেটি নির্ধারিত সময়ে পৌঁছায়নি। কিংবা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে জেনে গর্ভস্থিত ভ্রূণের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দিল পরে যা বাস্তবে যা ঘটেনি।
হতে পারে ঘড়িটির এলার্ম বাজার আগে আপনি নিজেই ঘড়িটিকে বন্ধ করে দিবেন; ফলে সেটি আর বাজবে না। হতে পারে ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ায় সেটি বাজবে না। ...
তাই এ ধরনের বিষয় দিয়ে আপত্তি করার দুর্বল দিক স্পষ্ট। এর উত্তর দেওয়া কঠিন নয়। বস্তুতঃ অলস মনকে শয়তান এমন বিষয়ে ব্যস্ত করে তোলে যার কোনো প্রকৃত সত্যতা ও গুরুত্ব নেই। আছে কেবল কৃত্রিমতা ও আদম সন্তানকে শয়তান কর্তৃক ব্যস্ত রাখা।
কাযা (নিয়তি) ও তাকদীর (ভাগ্য) এর প্রতি ঈমান আনার ক্ষেত্রে তাকদীর লিখনে অবস্থান:
প্রশ্নে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে তাকদীর লিখনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বরং এই উদাহরণ দিয়ে করা প্রশ্ন দেখে বিস্মিত হচ্ছি।
যদি আল্লাহ তার কিতাবে ওহী পাঠিয়ে বলতেন যে এলার্ম বাজবে না, তারপর এলার্ম বাজত, তাহলে এই প্রশ্ন তোলা প্রযোজ্য হত। কারণ তখন বাস্তবতা আল্লাহ প্রদত্ত সংবাদের বিপরীত ঘটেছে।
পক্ষান্তরে, বান্দা অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোনো কিছু জানা যেটা এখনো ঘটেনি, সেটা তাঁর মাধ্যমে জানা এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সে সব কিছু লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করে রাখার মধ্যে জটিলতা কোথায়?!
যাইহোক, লিপিবদ্ধকরণ: তাকদীর (ভাগ্য) ও কাযার (নিয়তির) উপর ঈমান আনার অন্যতম একটি স্তর। আর তা হলো: এই ঈমান আনা যে আসমান-যমীন সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর আগে লওহে মাহফুযে (সংরক্ষিত ফলকে) আল্লাহ সব কিছু লিখে রেখেছেন।
তাকদীরের প্রতি সঠিক ঈমানের অনিবার্য ফলাফল:
তাকদীরের উপর সঠিক ঈমান আনার অনিবার্য ফলাফল হচ্ছে আপনি এ ঈমান রাখবেন যে:
- বান্দার ইচ্ছা ও এখতিয়ার রয়েছে, যার মাধ্যমে তার কার্যাবলি বাস্তবায়িত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: لِمَنْ شاءَ مِنْكُمْ أنْ يَّسْتَقِيْمَ "তার জন্য, তোমাদের মধ্যে যার সরল পথে চলার ইচ্ছা রয়েছে।"[সূরা তাকওয়ীর: ২৮] তিনি আরও বলেন: لا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْساً إلا وُسْعَها “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।”[সূরা বাকারা: ২৮৬]
- বান্দার ইচ্ছা ও ক্ষমতা আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার বাইরে নয়। তিনিই বান্দাকে এটি প্রদান করেছেন এবং বান্দাকে ভালমন্দ বিচার করা ও বেছে নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَمَا تَشَاءُونَ إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ “আর তোমরা ইচ্ছে করতে পার না যদি না সৃষ্টিকুলের প্রভু আল্লাহ ইচ্ছে করেন।”[সূরা তাকওয়ীর: ২৯]
সুতরাং আপনি আপনার এলার্ম নির্ধারণ করেছেন এবং জানেন যে এটি বাজবে, তারপর এটি যদি বাজে তাহলে এটি আল্লাহর নির্ধারণ এবং সৃষ্টি। আপনি এটি ঘটার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা এসে যেতে পারে যার কারণে এলার্ম নাও বাজতে পারে। এ সব কিছুই আল্লাহর লিখিত বিষয় ও তাঁর নির্ধারিত ভাগ্য।
ভাগ্য লিখনের প্রকারভেদ
জেনে রাখুন, ভাগ্য লিখন দুই প্রকার:
- এমন লিখন যা পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপন হয় না। এটি হচ্ছে যা লওহে মাহফুযে আছে।
- এমন লিখন যা পরিবর্তিত হয় ও প্রতিস্থাপিত হয়। এটি হচ্ছে যা ফেরেশতাদের হাতে রয়েছে। তাদের কাছে সর্বশেষ যে বিষয়টি স্থিত হয় সেটি হচ্ছে লওহে মাহফুযে যা লেখা রয়েছে। আর এটাই আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর একাধিক অর্থের একটি অর্থ: يَمْحُوا اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ “আল্লাহ যা ইচ্ছা নিশ্চিহ্ন করেন এবং (যা ইচ্ছা) ঠিক রাখেন। আর তাঁরই কাছে রয়েছে মূল গ্রন্থ (লাওহে মাহফূয)।”[সূরা রাদ: ৩৯]
এর আলোকে আমরা সহীহ সুন্নাহতে বর্ণিত সে সমস্ত বর্ণনা বুঝতে পারি যেগুলোতে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার কারণে আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া বা রিযিক প্রশস্ত হওয়ার কথা উদ্ধৃত হয়েছে। অথবা যে হাদীসে বলা হয়েছে যে দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়। বিষয়টি হলো: আল্লাহ তা’আলা জানেন যে, তার বান্দা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে এবং বান্দা তার কাছে দোয়া করবে, তাই লওহে মাহফুযে (সংরক্ষিত ফলকে) তিনি বান্দার জন্য রিযিকে প্রশস্ততা ও আয়ুতে বৃদ্ধি লিখে রেখেছেন।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।