সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। পর সমাচার:
মহান আল্লাহ বলেন:
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
“আল্লাহর কাছে ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।”[সূরা আলে-ইমরান: ১৯]
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তার কাছে ইসলাম ছাড়া আর কোনো গ্রহণযোগ্য ধর্ম নেই।
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য, সমর্পণ এবং তাঁর সামনে অবনত হওয়া। আর কেবল তারই ইবাদত করা, তাঁর উপর ঈমান আনা, তাঁর রাসূলদের উপর ঈমান আনা এবং তারা আল্লাহর কাছ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তাতে ঈমান আনা। প্রত্যেক রাসূলের রয়েছে শরীয়ত ও কর্মপদ্ধতি। আল্লাহ এই রাসূলদের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। তাকে তিনি সকল মানুষের জন্য প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তার পরে তিনি ইসলাম ছাড়া আর কোনো ধর্ম কারো থেকে গ্রহণ করবেন না, যে ইসলাম নিয়ে এসেছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারী মুমিনরা সাধারণ অর্থে মুসলিম। তারা তাদের ইসলামের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তাদের কেউ যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তকাল পেয়ে থাকেন তাহলে তাঁর অনুসরণ করা ছাড়া আর কোনো কিছু তাদের থেকে গ্রহণ করা হবে না।
কাতাদাহ (রহঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: ‘ইসলাম হচ্ছে- এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কোনো উপাস্য সত্য নয় আল্লাহ ছাড়া), আল্লাহর কাছ থেকে যা এসেছে তার স্বীকৃতি প্রদান করা। এটাই আল্লাহর সেই ধর্ম যা তিনি নিজে প্রণয়ন করেছেন, যা সহকারে তাঁর রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে যে ধর্মের দিশা দিয়েছেন। তিনি এ ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করবেন না এবং এটি ছাড়া কোনো কিছুর জন্য তিনি প্রতিদানও দিবেন না।’
আবুল আলিয়া বলেন: ‘ইসলাম হচ্ছে এক আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া এবং কোনো ধরনের শরীক ছাড়া কেবল তার ইবাদত করা।’[তাফসীরুত ত্বাবারী (৬/২৭৫)]
ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
‘আল্লাহর বাণী: ‘আল্লাহর কাছে ধর্ম হচ্ছে ইসলাম’ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞাপন করা যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম কারো কাছ থেকে তিনি গ্রহণ করবেন না। ইসলাম হচ্ছে যুগে যুগে আল্লাহ রাসূলদেরকে যা সহকারে প্রেরণ করেছেন তার অনুসরণ করা। এই রাসূলদের সমাপ্তি ঘটেছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। আল্লাহ তার কাছে যাওয়ার অন্য সকল পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন; কেবল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যম ছাড়া। সুতরাং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করার পরে কেউ যদি আল্লাহর সাথে এমন কোনো ধর্ম নিয়ে সাক্ষাৎ করে যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরীয়ত নয় তাহলে তা গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: “কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম চাইলে তার কাছ থেকে সেটা কখনো গ্রহণ করা হবে না।” আর তিনি এই আয়াতে তার কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্মকে কেবল ইসলামের মাঝে সীমাবদ্ধ করে বলেছেন: “আল্লাহর কাছে ধর্ম হচ্ছে ইসলাম”।’[সমাপ্ত][তাফসীরে ইবনে কাসীর (২/২৫)]
ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘আয-যাজ্জাজ বলেছেন: (ইসলাম) ধর্ম: এমন একটি নাম আল্লাহ যা কিছুর মাধ্যমে সৃষ্টিকুলকে তাঁর বন্দেগী করতে বলেছেন, যা কিছুর উপর তাদেরকে অটল থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং যার বিনিময়ে তিনি তাদেরকে প্রতিদান দিবেন।
আমাদের শাইখ আলী ইবনে উবাইদুল্লাহ বলেন: (ইসলাম) ধর্ম হচ্ছে: বান্দা মহান আল্লাহর জন্য যা মেনে চলে।
ইবনে কুতাইবা বলেন: ইসলাম হচ্ছে سِلْم এ তথা আনুগত্য ও অনুসরণে প্রবেশ করা। অনুরূপভাবে আত্মসমর্পণেও। বলা হয়: অমুক ব্যক্তির তোমার নির্দেশের সামনে নিজেকে সমর্পণ করেছে (سلَّمَ), আত্মসমর্পণ করেছে (اسْتَسْلَمَ) এবং অনুগত হয়েছে (أسْلَمَ)।’[সমাপ্ত][যাদুল মাসীর (১/২৬৭)]
সা’দী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আল্লাহ তা’আলা জানাচ্ছেন যে ‘আল্লাহর কাছে ধর্ম হচ্ছে’ অর্থাৎ যে ধর্ম ছাড়া আল্লাহর আর কোনো ধর্ম নেই এবং যে ধর্ম ছাড়া আর কিছু গ্রহণযোগ্য নয়: "ইসলাম"। আর ইসলাম হচ্ছে: প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এক আল্লাহর প্রতি নতি স্বীকার করা এবং তিনি তাঁর প্রেরিত রাসূলদের বচনে যে অনুশাসন জারী করেছেন সেটার প্রতি নতি স্বীকার করা। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: “কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম চাইলে তার কাছ থেকে সেটা কখনো গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” সুতরাং কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করেনি। কারণ সে আল্লাহর প্রেরিত রাসূলদের বচনে প্রণীত পথ অনুসরণ করেনি।”[সমাপ্ত][তাফসীরুস সা’দী (পৃ. ৯৬৪)]
ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘সাধারণ অর্থে ইসলাম হলো: আল্লাহর দেয়া শরিয়ত (আইন) অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করা; যখন থেকে তিনি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন তখন থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা বহু আয়াতে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। যা প্রমাণ করে যে পূর্ববর্তী সকল শরীয়তও 'ইসলাম' তথা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ। আল্লাহ তা’আলা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম (এর দোয়া উদ্ধৃত করে তার) সম্পর্কে বলেন: رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً "হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুজনকে আপনার প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) বানিয়ে দিন এবং আমাদের বংশধর থেকেও আপনার প্রতি মুসলিম (অনুগত) একটি জাতি তৈরি করে দিন।”
অন্যদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হওয়ার পর থেকে ইসলামের বিশেষ অর্থ: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা সহকারে প্রেরিত হয়েছেন তার সাথে খাস। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা পূর্ববর্তী সকল ধর্মকে রহিত করে দিয়েছে। ফলে যে ব্যক্তি তাঁর অনুসরণ করে সে মুসলিম, আর যে ব্যক্তি তাঁর বিরোধিতা করে সে অমুসলিম। অন্যান্য রাসূলদের অনুসারীরা তাদের রাসূলদের যামানায় মুসলিম। ইহুদিরা মুসা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় মুসলিম। খ্রিষ্টানরা ঈসা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় মুসলিম। কিন্তু নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হওয়ার পর তারা তাকে অস্বীকার করে; সুতরাং তারা মুসলিম নয়।
এই ইসলাম ধর্মই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্ম, যে ধর্ম এর অনুসারীর জন্য কল্যাণবহ হবে। মহান আল্লাহ বলেন: إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْأِسْلامُ "আল্লাহর কাছে ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।" তিনি আরো বলেন: وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْأِسْلامِ دِيناً فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ "কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম চাইলে তার কাছ থেকে সেটা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।"
এই ইসলামই হচ্ছে সেই ইসলাম যা প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার উম্মতের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإسْلامَ دِيناً
"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করলাম। তোমাদের জন্য আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ধর্ম হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য পছন্দ করলাম।"[সমাপ্ত][শারহু সালাসাতিল উসূল (পৃ. ২০)]
শাইখ সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বলেন:
“নবীদের ধর্ম অভিন্ন; যদিও তাদের শরীয়ত (আইন-কানুন) বিভিন্ন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحاً وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
"তিনি তোমাদের জন্য সেই দ্বীন (ধর্ম) বিধিবদ্ধ করেছেন যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি তোমার কাছে প্রত্যাদেশ করেছি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকেও এই বলে যে: ‘তোমরা দ্বীন (ধর্ম) প্রতিষ্ঠা করো এবং এক্ষেত্রে বিভেদ সৃষ্টি করো না’।”[সূরা শূরা: ১৩]
তিনি আরো বলেন:
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحاً إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ
“হে রাসূলগণ! তোমরা হালাল খাদ্যসামগ্রী থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা করো অবশ্যই তা আমি ভালোভাবে অবহিত আছি। আর এটাই আমার ধর্ম, অভিন্ন ধর্ম; আর আমি তোমাদের প্রভু। অতএব, আমাকে ভয় করো।”[সূরা মুমিনূন: ৫১-৫২]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আমরা নবী সম্প্রদায়, আমাদের দ্বীন (ধর্ম) অভিন্ন। নবীরা হচ্ছেন একে অন্যের বৈমাত্রেয় ভাই।’
নবীদের ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। এই ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। ইসলাম হচ্ছে: তাওহীদসহ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর আনুগত্য করার মাধ্যমে তাঁর অনুগত থাকা এবং শির্ক ও মুশরিকদের থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
আল্লাহ তা’আলা নূহ প্রসঙ্গে বলেন:
وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“আর আমাকে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আদেশ করা হয়েছে।”[সূরা ইউনুস: ৭২]
আল্লাহ তা’আলা ইব্রাহীম প্রসঙ্গে বলেন:
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
“যখন তার রব তাকে বললেন: 'তুমি ইসলাম গ্রহণ করো' তখন সে বলল: “আমি বিশ্বপ্রভুর প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) হলাম।”[সূরা বাকারা: ১৩১]
আল্লাহ তা’আলা মুসা প্রসঙ্গে বলেন:
وَقَالَ مُوسَى يَا قَوْمِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ
“আর মুসা বলল: হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান থাকে তাহলে তার প্রতি ভরসা করো, যদি তোমরা মুসলিম (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী) হও।”[সূরা ইউনুস: ৮৪]
আল্লাহ তা’আলা ঈসা প্রসঙ্গে বলেন:
وَإِذْ أَوْحَيْتُ إِلَى الْحَوَارِيِّينَ أَنْ آمِنُوا بِي وَبِرَسُولِي قَالُوا آمَنَّا وَاشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُونَ
“আর স্মরণ করো; যখন আমি হাওয়ারীদেরকে (ঈসার শিষ্যদেরকে) নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনো; তখন তারা বলল: ‘আমরা ঈমান আনলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)।”[সূরা মায়েদা: ১১১]
আল্লাহ তা’আলা পূর্বোক্ত নবীগণ ও তাওরাত প্রসঙ্গে বলেন:
يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا
“এর মাধ্যমে নবীরা, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তারা ইহুদিদের মাঝে বিচার করে।[সূরা মায়েদা: ৪৪]
আল্লাহ তা’আলা সাবা রাজ্যের রাণীর কথা উদ্ধৃত করতে গিয়ে বলেন:
رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي وَأَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
“হে আমার প্রভু! (এতদিন ঈমান না এনে) আমি আমার নিজের প্রতি অন্যায় করেছি। আমি সুলাইমানের সাথে জগতসমূহের প্রভু আল্লাহর প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) হলাম।”[সূরা নামল: ৪৪]
ইসলাম সকল নবীর ধর্ম। ইসলাম হচ্ছে এক আল্লাহর সামনে নিজেকে সঁপে দেয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কারো প্রতি নিজেকে সঁপে দেয় সে মুশরিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে নিজেকে সঁপে দেয় না সে অহংকারী। মুশরিক ও আল্লাহর ইবাদত করা থেকে ঔদ্ধত্য প্রকাশকারী ব্যক্তি উভয়ে কাফের।
আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হলো কেবল তাঁর ইবাদত করা ও তাঁর আনুগত্য করা। সেটা এভাবে: তিনি যে সময়ে যা করার নির্দেশ দিয়েছেন সে সময়ে তা করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা। তিনি যখন ইসলামের সূচনালগ্নে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে নামায পড়তে বলেছিলেন এবং পরবর্তীতে কাবার দিকে ফিরে নামায পড়তে বলেছেন; তখন প্রত্যেক কাজের নির্দেশকালীন সময় সে কাজ করা ছিল ইসলামের অন্তর্ভুক্ত। তাই ইসলাম হচ্ছে: আনুগত্য করা। আর এ কাজদ্বয়ই আল্লাহর ইবাদত। বরং কাজের কিছু রূপের শ্রেণীভেদ ঘটে; যেমন মুসল্লীর নামাযে কিবলার দিক।
অনুরূপভাবে রাসূলদের দ্বীন বা ধর্ম অভিন্ন; যদিও শরীয়ত ও কর্মপন্থা, ইবাদতের দিক ও ধরন বিভিন্ন হয়ে থাকে। এই বিভিন্নতা অভিন্ন ধর্ম হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। যেমনিভাবে একই রাসূলের শরীয়তে এমন বিভিন্নতা থাকতে কোনো বাধা নেই। আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত থেকে এর উদাহরণ পেশ করেছি: শুরুতে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফেরা ও পরবর্তীতে কাবার দিকে ফেরা।
সুতরাং নবীদের দ্বীন অভিন্ন; যদিও শরীয়ত বিভিন্ন। আল্লাহ কোনো এক সময়ে প্রজ্ঞাবলে কোন এক নির্দেশ দেন। পরে অন্য সময়ে প্রজ্ঞাবলে ভিন্ন কোনো নির্দেশ দেন। রহিত হওয়ার আগে রহিতের উপর আমল করাই আল্লাহর আনুগত্য। আর রহিত হয়ে যাওয়ার পরে রহিতাদেশের উপর আমল করা আবশ্যক। কেউ যদি রহিত হয়ে যাওয়া আমলকে আঁকড়ে ধরে এবং রহিতাদেশকে প্রত্যাখ্যান করে সে ইসলাম ধর্মের উপরে নেই এবং সে কোনো নবীর অনুসারী নয়। এ কারণেই ইহুদি-খ্রিষ্টানরা কাফের। যেহেতু তারা পরিবর্তিত ও রহিত শরীয়তকে আঁকড়ে ধরেছিল।
আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্য তার পরিস্থিতি ও সময়ের উপযুক্ত বিধান প্রণয়ন করেন, যা তাদের সংশোধনের জন্য উপযুক্ত এবং তাদের জন্য যাবতীয় কল্যাণকে অন্তর্ভুক্তকারী। পরবর্তীতে সময়সীমা ফুরিয়ে গেলে আল্লাহ উক্ত শরীয়তের মধ্য থেকে যা ইচ্ছা রহিত করেন। অবশেষে তিনি সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদকে পৃথিবীর বুকে থাকা সকল মানুষের উদ্দেশ্যে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তার জন্য এমন পূর্ণাঙ্গ শরীয়ত প্রদান করেছেন যা সকল যুগ ও স্থানে উপযুক্ত। এই শরীয়ত পরিবর্তন হওয়া বা রহিত হওয়ার নয়। পৃথিবীবাসী সবার জন্য তাঁকে অনুসরণ করা ও তাঁর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন: قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعاً "আপনি বলুন: হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল।”[সমাপ্ত][আল-ইরশাদ ইলা সহীহিল ই’তিক্বাদ (পৃ. ১৯৪)]
দেখুন: (172775) নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ।