বদনজরের স্বরূপ, এর থেকে সুরক্ষার উপায়সমূহ ও এর চিকিৎসা

প্রশ্ন: 20954

বদনজর কী? আমি এই ওয়েবসাইটে উক্ত পরিভাষাটি বহুবার পড়েছি। দয়া করে এটি ব্যাখ্যা করে বলবেন।

উত্তরের সার-সংক্ষেপ

বদনজর সত্য। শরীয়ত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার দ্বারা এটি প্রমাণিত। এর থেকে সতর্ক থাকা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। এর থেকে সুরক্ষার উপায়: আল্লাহর উপর নির্ভর করা, তাঁর কাছে ধর্ণা দেওয়া এবং নিয়মতি যিকির-আযকার ও তাউজ পড়া (সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস)। এর দ্বাারা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার উপায় হলো: রুকইয়া করা, যে ব্যক্তি নজর লেগেছে তার গোসলকৃত পানি আক্রান্ত ব্যক্তির উপর ঢেলে দেওয়া। এর বিস্তারিত বিবরণ উত্তরে পড়ুন।

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ

উত্তর

বদনজরের স্বরূপ ও এর প্রভাব

বদনজর সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর ও ফতোয়া নিম্বরূপ, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি তিনি যেন এ ফতোয়াগুলোর দ্বারা কল্যাণ দান করেন।

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

বদনজরের স্বরূপ কী? আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে (আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসা করে”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “কবরে যাওয়া মানুষদের এক-তৃতীয়াংশ বদনজরের কারণে” শীর্ষক হাদিসটি কি সহিহ? যদি কোনো মানুষ কারো হিংসার ব্যাপারে সন্দেহ করে, তখন সে মুসলিমের কী বলা ও কী করা উচিত? যে ব্যক্তি বদনজর দিয়েছে তার গোসলের পানি দিয়ে কি আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করা যায়? এ পানি কি পান করবে; নাকি এর দ্বারা গোসল করবে?

তারা উত্তর দেন:

“العين শব্দটি عان يعين ক্রিয়া থেকে গৃহীত হয়েছে, যার অর্থ কাউকে চোখ দিয়ে আক্রান্ত করা। এর উৎস হচ্ছে বদনজর প্রদানকারীর কোনো কিছুর প্রতি মুগ্ধতা থেকে। তারপর তার কু-আত্মার বিশেষ অবস্থা সেই জিনিসকে অনুসরণ করে এবং কু-আত্মা আক্রান্ত ব্যক্তির উপর বিষ প্রয়োগ করার জন্য দৃষ্টির সহযোগিতা নেয়। আল্লাহ তা’আলা তার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিংসুক থেকে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ  “আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে (আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসা করে।”[সূরা ফালাক: ৫] সুতরাং প্রত্যেক বদনজর প্রদানকারী ব্যক্তি হিংসুক; কিন্তু প্রত্যেক হিংসুক ব্যক্তিই বদনজর দেয় না। যেহেতু ‘হিংসুক’ শব্দটি ‘বদনজর প্রদানকারী’ শব্দের তুলনায় ব্যাপক অর্থবোধক তাই হিংসুক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা কার্যতঃ বদনজর প্রদানকারী থেকেই আশ্রয় প্রার্থনা। বদনজর হচ্ছে এমন কিছু তীর যা হিংসুক ও বদনজর প্রদানকারী ব্যক্তির আত্মা থেকে হিংসা ও বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষ্যপানে ছুটে আসে; কিন্তু তীরগুলো কখনো বিদ্ধ করে, আবার কখনো বিদ্ধ করতে পারে না। যদি তাকে প্রতিরক্ষা বিহীন অবস্থায় পায় তাহলে তার উপর আঘাত হানে। আর যদি তাকে সতর্ক ও অস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় পায়, তাকে তীরে বিদ্ধ করার কোনো স্থান না থাকে, তখন তার উপর আঘাত হানতে পারে না। বরং এমনও হয় যে তীরটিকে নিক্ষেপকারীর কাছে ফিরিয়ে দেয়।[যাদুল মা’আদ থেকে সংক্ষেপে সমাপ্ত]

বদনজর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু হাদীস সাব্যস্ত হয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীস, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদনজর থেকে রুকইয়া করার নির্দেশ দিতেন।” এছাড়া মুসলিম, আহমদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বদনজরের প্রতিক্রিয়া সত্য। যদি কোনো কিছু তাকদীর তথা ভাগ্যকে ছাড়িয়ে যেত, তাহলে বদনজর ছাড়িয়ে যেত। যদি তোমাদেরকে (বদনজর সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে) গোসল করতে বলা হয় তাহলে তোমরা গোসল করবে।”[হাদীসটি শাইখ আলবানী ‘সিলসিলাহ সহীহা’তে (১২৫১) বিশুদ্ধ বলে গণ্য করেছেন]

ইমাম আহমদ ও তিরমিযী (২০৫৯) বর্ণনা করেন এবং সহিহ বলে গণ্য করেন: আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল! জাফরের সন্তানেরা বেশি বেশি বদনজরে আক্রান্ত হয়, আমরা কি তাদেকে রুকইয়া করাব?’ তিনি বলেন: “হ্যাঁ, কারণ কোনো কিছু যদি ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত তাহলে সেটি হলো বদনজর।”[শাইখ আলবানী ‘সহীহুত তিরমিযী’ গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলে গণ্য করেন]

আবু দাউদ বর্ণনা করেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: “বদনজর প্রদানকারী ব্যক্তিকে নির্দেশ দেওয়া হত যেন সে অযু করে এবং সেই পানি দিয়ে বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তি গোসল করে।”[শাইখ আলবানী সহীহ আবু দাউদে হাদীসটিকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন]

ইমাম আহমদ (১৫৫৫০), মালেক (১৮১১), নাসাঈ ও ইবনে হিব্বান বর্ণনা করেন: শাইখ আলবানী ‘মিশকাত’ (৪৫৬২) গ্রন্থে সহীহ বলে গণ্য করেন: সাহল ইবনে হানীফ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মক্কার উদ্দেশ্যে সফরে বের হলেন। তার সাথে সাহল ইবনে হানীফও যাত্রা করলেন। জুহফার নিকটবর্তী আল-খার্‌রার নামক স্থানে তারা পৌঁছানোর পরে সাহল ইবনে হানীফ গোসল করলেন। তিনি শুভ্র বর্ণের এবং সুন্দর গড়ন ও চামড়ার মানুষ ছিলেন। তখন আদী ইবনে কাব গোত্রের এক লোক ‘আমের ইবনে রাবীয়া’ তাকে গোসল করতে দেখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন: “আজকের মতো (এত সুন্দর) চামড়া আমি কোন কুমারী মেয়েরও দেখিনি।” আমের কথাটা বলার সাথে সাথে সাহল সেখানে লুটিয়ে পড়ল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলা হল: “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি সাহল ইবনে হানীফের ব্যাপারে কিছু জেনেছেন? আল্লাহর কসম! সে তো মাথা তুলতে পারছে না।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তোমরা কি এ ব্যাপারে কাউকে অভিযুক্ত করো?” তারা বলল: ‘হ্যাঁ, আমের ইবনে রাবীয়া তার দিকে বদনজর দিয়েছে।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমের ইবনে রাবীয়াকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁকে বললেন: “কোন কারণে তোমাদের কেউ নিজের মুসলমান ভাইকে হত্যা করে? তুমি কোন কিছু দেখে অভিভূত হলে কেন তুমি বরকতের দোয়া কর না (বারাকাল্লাহু ফিক- আল্লাহ তোমাকে বরকতময় করুন)? এরপর তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন: ‘তুমি তার জন্য গোসল করবে’। তখন আমের তার চেহারা, হাত, হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের আঙ্গুল এবং লুঙ্গির অভ্যন্তরের দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি একটি পাত্রে জমা করল। তারপর সেই পানি সাহলের দেহে ঢেলে দিবে। কেউ একজন পেছন থেকে তার মাথার উপর ও পিঠের উপর ঢেলে দিবে। এরপর পাত্রটি উল্টো করে তার পেছনে রেখে দিবে। এভাবেই করা হলো। তখন সাহল সবার সাথে এমনভাবে যাত্রা করলেন; যেন তার কোন সমস্যাই নাই।

উপর্যুক্ত হাদীসগুলোসহ অন্যান্য হাদীস এবং দৃশ্যমান বাস্তবতার কারণে অধিকাংশ আলেম বদনজরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত করেন।

অন্যদিকে আপনি যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন: ‘কবরে থাকা মানুষদের এক-তৃতীয়াংশ বদনজরের কারণে’ এ হাদিস সহিহ কিনা তা আমরা জানি না। তবে নাইলুল আওত্বার গ্রন্থের প্রণেতা উল্লেখ করেছেন: বায্‌যার হাসান সনদে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর তাকদীর ও ফয়সালার পরে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে কারণে মানুষ মারা যায় সেটি হচ্ছে আত্মাগুলোর প্রভাবে। অর্থাৎ বদনজরের প্রভাবে।”

একজন মুসলিমের করণীয় হলো নিজেকে উদ্যত জীন শয়তান ও মানুষ শয়তান থেকে রক্ষা করা। আর তা হবে আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান, তাঁর উপর নির্ভরতা, তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা, হাদিসে বর্ণিত তাউজগুলো (আশ্রয় প্রার্থনার দোয়াগুলো) পড়া ও তাঁর দরবারে কাকুতি-মিনতি করার মাধ্যমে, বেশি বেশি সূরা ফালাক, সূরা নাস, সূরা ইখলাস, সূরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসী পড়ার মাধ্যমে। কিছু তাউজ বা আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া:

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

“আমি আল্লাহর পূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে তাঁর অনিষ্টকর সকল সৃষ্টি থেকে আশ্রয় চাই।”

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَمِنْ شَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ

“আমি আল্লাহর ক্রোধ ও আযাব থেকে, তাঁর বান্দাগণের অনিষ্ট থেকে, শয়তানদের প্ররোচনা হতে এবং আমার কাছে শয়তানের আগমন থেকে আল্লাহর পূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

আল্লাহর বাণী:

حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

“আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ সত্য নয়। আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি। তিনিই মহান আরশের মালিক।” এ ধরণের শরিয়তে অনুমোদিত অন্যান্য দোয়া। উত্তরের প্রথম অংশে ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহুর উদ্ধৃত কথার মর্মার্থ এটাই।

যদি জানা যায় যে কোনো নির্দিষ্ট মানুষ তাকে আক্রান্ত করেছে অথবা ঐ ব্যক্তির দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে বদনজর প্রদানকারী ব্যক্তিকে তার ভাইয়ের জন্য গোসল করার নির্দেশ প্রদান করা হবে। গোসলের পদ্ধতি হলো: তার জন্য একটি পানি-ভর্তি পাত্র আনা হবে। সে পানির ভেতরে হাতের কব্জিদ্বয় ঢুকিয়ে কুলি করবে। তারপর কুলির পানি পাত্রে ফেলবে। ঐ পাত্রের ভেতরে তার চেহারা ধৌত করবে। এরপর তার বাম হাত পানিতে ঢুকিয়ে ঐ পাত্রের ভেতরে তার ডান হাঁটুর উপর পানি ঢালবে। এরপর তার ডান হাত পানিতে ঢুকিয়ে বাম হাঁটুর উপর পানি ঢালবে। তারপর লুঙ্গি ধৌত করবে। অতঃপর সেই পানি বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির পেছন থেকে তার মাথার উপর একবারে ঢেলে দিবে। ইন শা আল্লাহ, তখন সে সুস্থ হয়ে যাবে।”[ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ লিল-বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল-ইফতা (১/১৮৬)]

শাইখ মুহাম্মাদ আস-সালিহ আল-উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

‘মানুষ কি বদনজরে আক্রান্ত হয়? এর চিকিৎসা কী? এর থেকে সতর্ক থাকা কি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী?’

তিনি উত্তর দেন:

‘বদনজরের ব্যাপারে আমাদের অভিমত হচ্ছে: শরীয়ত ও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বদনজর প্রমাণিত সত্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ  “কাফেররা তাদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে স্খলিত করার উপক্রম করে (অর্থাৎ তোমার দিকে এমন বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় যে পারলে তোমাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দেয়)।”[সূরা কলম: ৫১] ইবনে আব্বাস ও অন্যান্যরা এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: অর্থাৎ তারা তোমার প্রতি বদনজর দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বদনজর সত্য। কোনো কিছু যদি ভাগ্যকে অতিক্রম করত তাহলে বদনজর তা করত। তোমাদেরকে (বদনজর প্রদানকারী ব্যক্তিকে) গোসল করতে বলা হলে তোমরা গোসল করবে।”[হাদীসটি মুসলিম বর্ণনা করেন] এছাড়া আরো বর্ণিত হয়েছে নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ থেকে বর্ণিত হাদীস যেখানে উল্লেখ আছে: আমের ইবনে রাবীয়া সাহল ইবনে হানীফকে গোসলরত অবস্থায় অতিক্রম করছিলেন।... এরপর তিনি পূর্ণ হাদীস উল্লেখ করেন।

এবং বাস্তবতা বদনজর সত্য হওয়ার পক্ষে সাক্ষী; বদনজরকে অস্বীকার করা সম্ভবপর নয়।

বদনজরের চিকিৎসা

বদনজরে আক্রান্ত হলে শরয়ী চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে:

১. রুকইয়া করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কেবল বদনজর অথবা বিষাক্ত প্রাণীর দংশন থাকলেই ঝাড়ফুঁক দেওয়া চলে।”[হাদীসটি তিরমিযী (২০৫৭) ও আবু দাউদ (৩৮৮৪) বর্ণনা করেন] জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই বলে রুকইয়া করতেন:

بِسْمِ الله أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللهُ يَشْفِيكَ بِسمِ اللهِ أُرقِيكَ

“আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি: এমন সকল কিছু থেকে যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সকল আত্মা ও হিংসুক চক্ষুর অনিষ্ট থেকে, আল্লাহ আপনাকে রোগমুক্ত করুন। আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।”

২. গোসল চাওয়া। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমের ইবনে রবীয়াকে পূর্বোক্ত হাদীসে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে ঢেলে দিতে হবে।

তবে বদনজর প্রদানকারীর পেশাব-পায়খানা থেকে কিছু গ্রহণ করা ভিত্তিহীন। অনুরূপভাবে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু গ্রহণ করাও ভিত্তিহীন। বরং হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে যা ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, যথা: তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও লুঙ্গির অভ্যন্তরের অংশ ধৌত করার মাধ্যমে প্রাপ্ত পানি। সম্ভবতঃ তার মাথার রুমাল, টুপি ও জামার ভেতরের অংশের ব্যাপারেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

বদনজর থেকে সুরক্ষার উপায়

পূর্ব থেকেই বদনজর থেকে সতর্ক থাকতে কোনো সমস্যা নেই। এটি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী তো নয়ই; বরং এটিই তাওয়াক্কুল। কারণ তাওয়াক্কুল হচ্ছে আল্লাহর উপর নির্ভর করার পাশাপাশি তিনি যে উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা বৈধ করেছেন কিংবা গ্রহণের আদেশ করেছেন সেগুলো গ্রহণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে হাসান-হোসাইনের জন্য (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন:

أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

“আমি তোমাদের দুজনকে আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি; যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনজর) থেকে।”[হাদীসটি তিরমিযী (২০৬০) ও আবু দাউদ (৪৭৩৭) বর্ণনা করেন]

তিনি আরো বলতেন: “তোমাদের পিতা (ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম) এই কালেমার দ্বারা তার সন্তান ইসমাঈল ও ইসহাককে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতেন।”[হাদীসটি বুখারী (৩৩৭১) বর্ণনা করেন][ফাতাওয়াশ শাইখ ইবনে উছাইমীন (২/১১৭,১১৮) থেকে সমাপ্ত]

আরো দেখুন (10543) ও (125543) নং প্রশ্ন দুটির উত্তর।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

answer

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ

at email

নিউজলেটার

ওয়েবসাইটের ইমেইল ভিত্তিক নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত পৌঁছতে ও ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করতে

download iosdownload android