এক:
তোমার মতো ছোট ছেলেদের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়া আমাদের জন্য বড় আনন্দের ব্যাপার, যে ছেলেরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং যারা বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। এই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী। প্রশ্নটির ভাষাশৈলী সংক্ষিপ্ত ও শিষ্টাচারপূর্ণ। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তোমাকে নিরাপদে করেন, তোমার দেখভাল করেন এবং তোমাকে উত্তমরূপে প্রতিপালনের জন্য যারা অবদান রেখেছেন তাদের সবাই্কে উত্তম প্রতিদান দান করেন।
দুই:
পোষা প্রাণী রাখা এবং প্রতিপালন করা ইসলামে মুবাহ তথা বৈধ একটি কাজ। এতে কোনো সমস্যা নেই।
বুখারী (৬২০৩) এবং মুসলিম (২১৫০) বর্ণনা করেন: আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম আখলাকের মানুষ ছিলেন। আমার একটি ভাই ছিল যাকে আবু উমায়ের বলে ডাকা হত। বর্ণনাকারী বলেন: তার দুধ ছাড়ানোর বয়স হয়েছিল। তিনি যখন (বাসায়) আসতেন তখন তাকে বলতেন: ‘আবু উমায়ের, তোমার নুগায়ের কী করেছে?’ আবু উমায়েরের একটা নুগায়ের পাখি ছিল। সে পাখিটি নিয়ে খেলত। নুগায়ের এক প্রকার ছোট পাখি, যার চঞ্চু তথা ঠোঁট লাল।
হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
‘উক্ত হাদীস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা হলো: ছোট পাখি দিয়ে খেলা বৈধ। বাবা-মায়ের জন্য তাদের সন্তানকে এমন বৈধ খেলনা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া জায়েয যা দিয়ে খেলা বৈধ। সন্তান বৈধ যে সমস্ত খেলনায় ব্যস্ত থাকে তার জন্য ব্যয় করা জায়েয। পাখিকে খাঁচা বা অনুরূপ স্থানে আটকে রাখা জায়েয। পাখীর ডানার পালক কেটে দেওয়া জায়েয। কেননা আবু উমায়েরের পাখি নিঃসন্দেহে উপর্যুক্ত কোনো একটি অবস্থার অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে অবস্থাতেই সে পড়ুক, অন্যগুলো হুকুমের ক্ষেত্রে সেটির অনুগামী হবে।’[সমাপ্ত][ফাতহুল বারী (১০/৫৮৪)]
প্রাণী পোষার বেশ কিছু শর্ত ও মূলনীতি রয়েছে। যথা:
১- পোষা প্রাণী কুকুর হতে পারবে না। ইসলামে পাহারা কিংবা শিকারের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কুকুর পোষা হারাম। (69840) নং প্রশ্নের উত্তরে এর বিবরণ গত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ঘরে কুকুর রয়েছে তাতে কোনো ফেরেশতা প্রবেশ করে না।”[হাদীসটি বুখারী (৩২২৫) ও মুসলিম (২১০৬) বর্ণনা করেন] ঘরে কুকুর থাকার কারণে রহমতের ফেরেশতারা তার সঙ্গী হবে না; এমনটি কি কোনো মুসলিম পছন্দ করতে পারে?
২- প্রাণী পুষতে গিয়ে নিন্দনীয় বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে না যাওয়া। আমরা দেখেছি কিছু মানুষ নির্দিষ্ট একটি প্রাণী কেনার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে হাজার হাজার এমনকি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে। কিছু মানুষ তো নিজের সম্পদের কিয়দংশ ঐ প্রাণীর জন্য ওসীয়ত করে যায়। কিছু দেশে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকে নিয়ে অনুষ্ঠান এবং মেলার আয়োজন হয়। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। এগুলো সবই নির্বুদ্ধিতার অন্তর্ভুক্ত।
৩- প্রাণীর প্রতি ইহসান তথা অনুগ্রহ করা। কোনো মুসলিম যদি কোনো প্রাণী পোষা শুরু করে তাহলে তার করণীয় হলো ঐ প্রাণীকে খাদ্য-পানীয় দিয়ে তার প্রতি অনুগ্রহ করা। তাকে অনর্থক ফেলে রেখে কিংবা তাকে কোনো লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে নিক্ষেপের কাজে ব্যবহার করে কিংবা তাকে দিয়ে মারামারি করিয়ে কিংবা তাকে গরম অথবা ঠাণ্ডার সম্মুখীন করে তার কষ্ট ও ক্ষতির কারণ হবে না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এক বার এক ব্যক্তি পথ চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগলো। সে একটি কূপ দেখতে পেয়ে তাতে নামলো এবং পানি পান করে উঠে আসলো। তখন সে দেখলো যে, একটি কুকুর পিপাসার্ত হয়ে হাপাচ্ছে এবং ভিজা মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বললো: আমি যেমন পিপাসার্ত হয়েছিলাম, কুকুরটিরও তদ্রুপ পিপাসা লেগেছে। সে পুনরায় কূপে নামলো এবং তার মোজা ভর্তি করে পানি নিয়ে উপরে উঠে আসলো এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তার এই কাজটি কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবীরা বলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল! পশুর জন্যও কি আমাদেরকে সওয়াব দেওয়া হবে?’ তিনি বলেন: “প্রতিটি প্রাণধারী সৃষ্টির উপকারের মাঝেই সওয়াব রয়েছে।”[হাদীসটি বুখারী (২৪৬৬) ও মুসলিম (২২৪৪) বর্ণনা করেন]
দেখুন একটি প্রাণীর সেবা করার কারণে একজন মুমিন নেকী লাভ করছে। বরং একটি প্রাণীর প্রতি অনুগ্রহ করার কারণে সে হয়তো জান্নাতেও প্রবেশ করছে। যেমনটি হাদীসে উল্লিখিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটেছে। মহান আল্লাহ ইহসানকারী ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসেন।
পক্ষান্তরে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন এমন এক নারীর ঘটনা যে নারী একটা বিড়ালকে আটকে রেখে কষ্ট দেওয়ার কারণে জাহান্নামী হয়েছে। সে ঐ বিড়ালকে না দিয়েছে কোনো খাবার, না তাকে ছেড়ে দিয়ে যমীনের পোকা-মাকড় খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।