ওলী কারা? তাদের স্তরগুলো কী কী?

প্রশ্ন: 107283

অনুগ্রহ করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করবেন: ১) ওলী কারা? ২) ওলীদের স্তরগুলো কী কী? ৩) ওলীদেরকে ‘আল্লাহর সাথী’ নাম দেওয়া কি জায়েয?

উত্তরের সার-সংক্ষেপ

আল্লাহর ওলী হলেন ঈমানদার ও তাকওয়াবান ব্যক্তিবর্গ, যারা তাদের সকল বিষয়ে আল্লাহর নজরদারির বিষয়টি চিন্তা করে তার আদেশ মেনে চলে ও নিষেধ পরিহার করে। বান্দার ঈমান ও তাকওয়ার তারতম্য অনুসারে বেলায়াতের (ওলীত্বের) তারতম্য ঘটে। প্রত্যেক মুমিনের মাঝেই আল্লাহর বেলায়াত, ভালোবাসা ও নৈকট্যের অংশ রয়েছে। এই বেলায়াত কারো একচেটিয়া অধিকার নয়। এটি সমাজের কোনো স্তরের মানুষের জন্য নির্ধারিত কোনো আলামত নয়। উত্তরাধিকারসূত্রে কিংবা সম্মানসূচক পদকের মাধ্যমে এটি অর্জন করা যায় না। আর আল্লাহর ওলীদেরকে ‘আল্লাহর সাথী’ বলে আখ্যায়িত করা সঠিক হওয়ার পক্ষে কোনো দলিল আমাদের জানা নেই।

উত্তর

আল্লাহর ওলী কারা?

সংক্ষেপে ও স্পষ্টভাবে বললে আল্লাহর ওলী হলেন ঈমানদার ও তাকওয়াবান ব্যক্তিবর্গ, যারা তাদের সকল বিষয়ে আল্লাহর নজরদারিকে অনুভব করে তার আদেশ মেনে চলেন এবং নিষিদ্ধ বিষয়াবলি পরিহার করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

أَلا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ. الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ. لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

“জেনে রেখো, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। যারা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে এবং (তাঁকে) ভয় করে। তাদের জন্য পৃথিবীর জীবনে ও পরকালে (সাফল্যের) সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহর কথার কোনো নড়চড় হয় না। এটাই বড় সাফল্য।”[সূরা ইউনুস: ৬২-৬৪]

হাফেয ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ ‘তাফসীরুল কুরআনিল আযীম’ (৪/২৭৮) গ্রন্থে বলেন:

“আল্লাহ তাআলা জানাচ্ছেন যে, তার প্রিয় বান্দা হলেন ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা ঈমান আনে ও আল্লাহকে ভয় করে, যেমনটি তাদের রব তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে সে আল্লাহর ওলী। কিয়ামতের যে সমস্ত বিপদাপদের সম্মুখীন তারা হবে সেগুলোতে তাদের কোনো ভয় নেই। দুনিয়াতে তারা যা রেখে গিয়েছে তার জন্য তারা দুঃখিতও হবে না।”

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাসসহ সালাফের কেউ কেউ বলেন: আল্লাহর ওলী হলেন তারা যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।

মারফূ’ হাদীসে বর্ণিত আছে: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর কিছু বান্দা আছে যাদেরকে নবী ও শহীদরাও ঈর্ষা করে।” জিজ্ঞাসা করা হলো: হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? হয়তো আমরা তাদেরকে ভালোবাসতে পারি। তিনি বললেন: ‘তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে; কোনো অর্থ-সম্পদ বা বংশের কারণে নয়। তাদের চেহারা আলোকিত। তারা আলোর মিম্বরে থাকবে। মানুষজন ভয় পেলেও তারা ভয় পাবে না। মানুষজন দুঃখিত হলেও তারা দুঃখিত হবে না।’ তারপর তিনি তেলাওয়াত করলেন: “আল্লাহর ওলীদের কোনো ভয় নেই। আর তারা দুঃখিতও হবে না।”[হাদীসটি আবু দাউদ ভালো সনদে বর্ণনা করেন। শাইখ আলবানী আস-সিলসিলাতুস সহিহা গ্রন্থে (৭/১৩৬৯) এটিকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন][সমাপ্ত][সংক্ষেপিত ও ঈষৎ পরিবর্তিত]

আল্লাহর ওলীদের স্তরসমূহ

বান্দার ঈমান ও তাকওয়ার তারতম্য অনুসারে বেলায়াতের তারতম্য হয়। আল্লাহর বেলায়াত, ভালোবাসা ও নৈকট্যে প্রত্যেক মুমিনের ভাগ রয়েছে। কিন্তু বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে যে সমস্ত শারীরিক ও আত্মিক আমল করে সেগুলোর অনুপাতে এই ভাগের তারতম্য ঘটে। তাই বেলায়াতের স্তরকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়:

১. নিজের প্রতি যুলুমকারী: ইনি হলেন পাপী ঈমানদার। এই ব্যক্তির ঈমান ও নেককাজের মাত্রা অনুসারে তার বেলায়াত হাছিল হয়।

২. পরিমিত আমলকারী: এ ব্যক্তি হলেন এমন ঈমানদার, যে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে ও আল্লাহর অবাধ্যতা পরিহার করে। কিন্তু নফল আদায়ে পরিশ্রম করে না। এটি পূর্বের স্তরের তুলনায় বেলায়াতের উঁচু স্তর।

৩. নেক আমলে অগ্রগামী: এ ব্যক্তি ফরযের সাথে নফলও আদায় করে। অন্তরের ইবাদতের ক্ষেত্রে উচ্চ স্তরে উপনীত হয়। এই ব্যক্তি বেলায়াতের উচ্চ স্তরে রয়েছে।

নিঃসন্দেহে নবুয়ত হচ্ছে মহান আল্লাহর বেলায়াতের সর্বোচ্চ স্তর। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ (৬/১০) গ্রন্থে বলেন:

‘মানুষদের স্তর তিনটি: নিজের প্রতি যুলুমকারী, পরিমিত আমলকারী এবং নেক আমলে অগ্রগামী।

  • নিজের প্রতি যুলুমকারী হলো ঐ ব্যক্তি যে আদিষ্ট বিষয় পরিহার করা ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর অবাধ্যতা করে।
  • পরিমিত আমলকারী হলো ঐ ব্যক্তি যে ওয়াজিব আদায় করে ও হারাম পরিহার করে।
  • আর নেকীর কাজে অগ্রগামী ব্যক্তি হলো ঐ ব্যক্তি যে তার সাধ্যাধীন সকল ওয়াজিব ও মুস্তাহাব আমল করা ও হারাম ও মাকরূহ কাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে।

যদিও পরিমিত আমলকারী ও অগ্রগামী ব্যক্তির এমন কিছু পাপ থাকে যা মুছে ফেলা হয়। সেটি তাওবার মাধ্যমে হতে পারে (আর আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন) কিংবা গুনাহ মোচনকারী নেক আমলগুলোর মাধ্যমে কিংবা গুনাহ মোচনকারী বিপদাপদের মাধ্যমে কিংবা ভিন্ন কিছুর মাধ্যমে। পরিমিত আমলকারী ও অগ্রগামী এই উভয় দলের ব্যক্তিবর্গই আল্লাহর ওলীদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের কথা আল্লাহ তার কিতাবে বলেছেন: “জেনে রেখো, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। যারা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে এবং (তাঁকে) ভয় করে।” সুতরাং আল্লাহর ওলীরা হলেন ঈমানদার মুত্তাকীরা। তবে ওলীরা দুই ভাগে বিভক্ত: ‘সাধারণ’ তথা পরিমিত আমলকারীগণ। আর ‘বিশেষ’ তথা অগ্রগামীগণ। যদিও অগ্রগামীগণ সর্বোচ্চ স্তরধারী; যেমন নবীগণ ও সিদ্দীকগণ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই উভয় দলের কথা উল্লেখ করেছেন একটি হাদীসে, যেটি বুখারী বর্ণনা করেছেন আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে। তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি করবে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব। বান্দা যা কিছু দিয়ে আমার নৈকট্য লাভ করে থাকে তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম হল সেই ইবাদত, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। আমার বান্দা সবসময় নফল ইবাদত করার মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, এমনকি অবশেষে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আমি তাকে ভালোবাসলে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে যতটা দ্বিধা করি অন্য কোন কাজে তেমন দ্বিধা করি না। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি তার খারাপ লাগাকে অপছন্দ করি। কিন্তু মৃত্যু তার জন্য অবধারিত।”

আর নিজের প্রতি যুলুমকারী ব্যক্তি ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত। তার মাঝে থাকা ঈমান ও তাকওয়া অনুসারে তার জন্য আল্লাহর বেলায়াত অর্জিত হয়, যেমনিভাবে তার মাঝে থাকা পাপ অনুসারে এর বিপরীতটা অর্জিত হয়। কারণ একই ব্যক্তির মাঝে সওয়াবকে অনিবার্যকারী পুণ্য ও শাস্তিকে অনিবার্যকারী পাপের সমাবেশ ঘটতে পারে; যার ফলে তাকে পুরস্কৃত করা হয় ও শাস্তি দেওয়া হয়। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল সাহাবী, ইসলামের ইমামগণ এবং আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াতের অভিমত। তারা বলেন: যে ব্যক্তির হৃদয়ে শস্যের দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’[সমাপ্ত]

শাইখ ইবনে উছাইমীন [যেমনটি ‘ফাতাওয়া মুহিম্মাহ’ (পৃ. ৮৩) গ্রন্থে রয়েছে] বলেন: ‘যে ব্যক্তি ঈমানদার ও তাকওয়াবান সেই আল্লাহর ওলী। আর যে এমনটি নয় সে আল্লাহর ওলী নয়। আর যার মাঝে ঈমান ও তাকওয়ার কিছু অংশ রয়েছে তার মাঝে বেলায়াতের কিছু অংশ রয়েছে।’[সমাপ্ত]

বেলায়াত কি কারো একচেটিয়া অধিকার?

বেলায়াত কারো একচেটিয়া অধিকার নয়। এটি সমাজের একটি নির্দিষ্ট স্তরের মানুষের বিশেষ কোনো আলামত নয়। বংশানুক্রমে কিংবা সম্মানসূচক পদকের মাধ্যমে এটি অর্জন করা যায় না। বরং এটি আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদা, যার শুরু হয় অন্তরে আল্লাহকে ভালোবাসা ও সম্মান দেওয়ার মাধ্যমে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাস্তব কর্মে। এভাবে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর ভালোবাসা ও বেলায়াত অর্জন করে।

বেলায়াত কি ব্যক্তিকে হারাম কাজ করা ও ওয়াজিব ত্যাগ করার বৈধতা দেয়?

বেলায়াত ব্যক্তিকে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া ও ওয়াজিব ত্যাগ করার বৈধতা দেয় না। বরং কারো থেকে এমন কিছু প্রকাশ পেলে সেটি প্রমাণ করে যে তার ক্ষেত্রে আল্লাহর বেলায়াত হ্রাস পেয়েছে। অনুরূপভাবে যাদেরকে ‘ওলী’ হিসেবে অভিহিত করা হয় (হয়তো তারা এর উপযুক্ত না) কারো জন্য তাদের অভিমুখী হওয়ার বৈধতাও দেয় না। এমনটি করা হলে বস্তুতঃ তাদেরকে নবুয়তের স্তরে উন্নীত করা হয়। তথা তাদের কোনো আদেশকে প্রত্যাখ্যান না করা, তাদের কোনো চিন্তা ও মতকে পর্যালোচনা না করা। এ সবই সীমালঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত, যা থেকে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন এবং এগুলো মানুষ শির্কে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম বড় কারণ।

কিছু মানুষ বেলায়াত ও ওলীদের স্তর সম্পর্কে ভুল ধারণা রাখার কারণে এই সীমা ছাড়িয়ে বড় শির্কে জড়িয়ে পড়ে। আপনি দেখতে পাবেন যে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এই সমস্ত ওলীদেরকে ডাকছে, তাদের জন্য জবাই করছে, তাদের জন্য পশু উৎসর্গ করছে এবং তাদের কবরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করছে।

আল্লাহর ওলীদেরকে কি ‘আসহাবুল্লাহ’ তথা আল্লাহর সাথী বলা জায়েয?

আল্লাহর ওলীদেরকে ‘আল্লাহর সাথী’ উপাধি প্রদান করা সঠিক হওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছু আমাদের জানা নেই। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ওলী হলেন রাসূলগণ এবং নবীরা। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা। তারপর তাদের পরবর্তী স্তর। এরপর তাদের পরের স্তর। তাদের কাউকে ‘আল্লাহর সাথীবর্গ’ হিসেবে কেউ আখ্যায়িত করেছে বলে আমাদের জানা নেই।

বরং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ধারকবাহকদেরকে 'আল্লাহর পরিজন' বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম আহমদ (১১৮৭০) ও ইবনে মাজাহ (২১৫) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মানুষদের মাঝে আল্লাহর কিছু পরিজন রয়েছে।“ সাহাবীরা বলল: আল্লাহর রাসূল, তারা কারা? তিনি বললেন: “তারা হলো কুরআনের ধারকবাহক (কুরআন মুখস্থকারী, পাঠক এবং তদানুযায়ী আমলকারী)। তারাই আল্লাহর পরিজন ও বিশেষ বান্দা (আল্লাহর বিশেষ ওলী)।”[শাইখ আলবানী সহীহু ইবনে মাজাহ গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজলেটার

ওয়েবসাইটের ইমেইল ভিত্তিক নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত পৌঁছতে ও ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করতে

download iosdownload android