এক:
কোনো মানুষ যদি বিয়ের ই্চ্ছা পোষণ করে এবং কোনো নির্দিষ্ট মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা করে, তাহলে সে একাকী কিংবা তার কোনো আত্মীয় যেমন: বাবা অথবা ভাইকে সাথে নিয়ে মেয়ের অভিভাবকের কাছে যাবে। অথবা সে অন্য কাউকে প্রস্তাবের দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবে। এক্ষেত্রে প্রশস্ততা রয়েছে। সমাজের প্রচলিত রীতি অনুসরণ করা উচিত। কোনো কোনো দেশে প্রস্তাবদাতা একাকী যাওয়াকে দোষ হিসেবে গণ্য করা হয়। সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
বিয়ের প্রস্তাবদাতার জন্য প্রস্তাবিত নারীকে দেখা শরিয়তসম্মত। কারণ তিরমিযী (১০৮৭), নাসাঈ (৩২২৫) এবং ইবনে মাজাহ (১৮৬৫) বর্ণনা করেছেন: মুগীরাহ ইবনে শু’বা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে: তখন তিনি একজন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রেরণ করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন: ‘তুমি তাকে দেখে নিবে। কেননা এটি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা স্থায়ী করবে।’[শাইখ আলবানী সহিহুত তিরমিযীতে হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে গণ্য করেছেন]
দুই:
মেয়ে ও তার পরিবার একমত হলে তখন মোহরানা, বিয়ের খরচ, সময় এবং অনুরূপ বিষয়ের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এটি প্রথা-প্রচলন অনুসারে বিভিন্ন রকম হয়। পাশাপাশি বিবাহ পূর্ণ করার জন্য স্বামীর প্রস্তুতিও এক্ষেত্রে প্রভাবক। কিছু মানুষ এক মজলিসেই বিয়ের প্রস্তাব ও বিয়ে সম্পন্ন করে ফেলে। কেউ কেউ বিয়ের প্রস্তাবের তুলনায় বিয়ের আকদকে বিলম্ব করে অথবা বাসরকে বিয়ের তুলনায় দেরীতে করে। এগুলো সবই জায়েয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে যখন বিয়ে করেন তখন আয়েশার বয়স ছিল ছয়। তাকে নিয়ে তিনি বাসর করেন যখন আয়েশার বয়স নয়।[হাদীসটি বুখারী (৫১৫৮) বর্ণনা করেন]
তিন:
বিয়ের বাগদানে কিংবা বিয়ের আকদে সূরা ফাতিহা পড়া সুন্নত নয়। বরং সুন্নত হলো খুতবাতুল হাজত তথা প্রয়োজনের খুতবা পড়া। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিয়ে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে খুতবাতুল হাজত পড়া শিখিয়েছেন। খুতবাটি হলো:
إِنَّ الحَمدَ لِلَّهِ، نَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغفِرُهُ، وَنَعُوذُ بِهِ مِن شُرُورِ أَنفُسِنَا، مَن يَهدِهِ اللَّهُ فَلا مُضِلَّ لَهُ، وَمَن يُضلِل فَلا هَادِيَ لَه، وَأَشهَدُ أَن لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَشهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبدُهُ وَرَسُولُه.
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيباً
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيماً .
অর্থ: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাই। আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বান্দা ও রসূল।
“হে ঈমানদারগণ। আল্লাহকে যেরূপ ভয় করা উচিত তোমরা তাকে তদ্রুপ ভয় করো এবং মুসলমান থাকাবস্থায় ছাড়া মৃত্যুবরণ করো না।”[সূরা আল ইমরান: ১০২]
“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিণীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে অসংখ্য পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা করে থাকো এবং জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।”[সূরা নিসা: ১]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তিনি তোমাদের কার্যাবলি সংশোধন করে দিবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।”[হাদীসটি আবু দাউদ (২১১৮) বর্ণনা করেন এবং শাইখ আলবানী সহিহ আবু দাউদে হাদীসটিকে সহিহ বলে গণ্য করেন]
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ‘কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সময় সূরা ফাতিহা পড়া কি বিদআত?’ তাদের উত্তর ছিল: ‘কোনো পুরুষের জন্য নারীকে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান করতে গিয়ে অথবা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সময় সূরা ফাতিহা পড়া বিদআত।”[সমাপ্ত]
চার:
বিয়ের বাগদান (প্রস্তাব-দান), বিয়ের আকদ বা বাসরের জন্য কনের কিংবা বরের কোনো বিশেষ পোশাক নেই। এক্ষেত্রে মানুষদের প্রচলিন রীতি মেনে চলা উচিত যতক্ষণ না সেটা শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। সুতরাং বরের জন্য স্যুট বা অনুরূপ কিছু পরতে কোনো অসুবিধা নেই।
যদি কনেকে পুরুষেরা দেখতে পায় তাহলে কনে এমন পোশাক পরবে যা তাকে ঢেকে রাখে, যেমনটি বিয়ের আগে বা পরে তার পরনে থাকে। আর যদি কনে শুধু নারীদের ভেতরে থাকে তাহলে সে সাজগোছ করবে এবং নিজের পছন্দমত পোশাক পরিধান করবে। তবে অপচয়-বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে এবং ফিতনা হয় এমন কিছু পরিহার করবে।
আর বিয়ের আংটি পরা বর-কনে কারো জন্যই বৈধ নয়। কারণ এতে কাফেরের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা হয়।
আল্লাহ আমাদেরকে এবং আপনাকে এমন কাজ করার তৌফিক দান করুন যা তিনি পছন্দ করেন এবং যাতে তিনি সন্তুষ্ট থাকেন।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।