সংরক্ষণ করুন
  • New List
আরও
    সংরক্ষণ করুন
    • New List
1,44014/জুমাদাস সানি/1446 , 15/ডিসেম্বর/2024

যে ব্যক্তি ভুলভাবে কুরআন পড়ে, তার পেছনে কি নামায হবে?

প্রশ্ন: 70270

আমি যে মসজিদে নামায পড়ি, সে মসজিদের ইমাম সূরা ফাতিহা পড়তে গিয়ে ভুল করেন। তিনি পেশের স্থলে যবর এবং পেশের স্থলে যের পড়ে ফেলেন। এতে করে আয়াতের অর্থ পাল্টে যায়। তার পেছনে কি নামায হবে?

আমাদের মসজিদে কিছু নিকৃষ্ট বিদাত আছে, তন্মধ্যে একটির উদাহরণ হলো: সম্মিলিতভাবে ১০০ বার ‘ইয়া লাত্বীফু’ যিকির করা।

উত্তর

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর

যে ইমাম অথবা মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পড়তে গিয়ে এমন ভুল করে যা অর্থ বদলে দেয়, তার নামায বাতিল। কারণ ফাতিহা নামাযের অন্যতম রুকন (স্তম্ভ)। তাকে অবশ্যই পড়া বিশুদ্ধ করতে হবে এবং সঠিকভাবে ফাতিহা পড়া শিখতে হবে। যদি সে চেষ্টা করার পরও তা শিখতে না পারে তাহলে আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দেন না। কিন্তু সে যদি ইমাম হয় তাহলে তার পেছনে কেবল ঐ ব্যক্তিই নামায পড়বে যে ফাতিহা পড়ার ক্ষেত্রে তার মতো বা তার চেয়ে নিচের স্তরের।

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘যে ব্যক্তি ভুলভাবে তেলাওয়াত করে তার ইমামতি করা মাকরূহ। তারপর দেখতে হবে, যদি তার ভুলের কারণে অর্থ বদলে না যায়, যেমন: আলহামদুলিল্লাহি পড়ার সময় হা বর্ণে পেশ দিয়ে আলহামদুলিল্লাহু পড়া, তাহলে তার নামায ঠিক হবে এবং তার পেছনে থাকা মুসল্লীদের নামাযও হয়ে যাবে। আর যদি অর্থ বদলে যায়, যেমন: আন’আমতা পড়ার সময় তা বর্ণে পেশ দিয়ে আন‌’আমতু অথবা যের দিয়ে আন‌’আমতি পড়ে, তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। একই বিধান যদি ‘সীরাতাল মুস্তাকীন’ পড়ে। যদি তার জিহ্বা সঠিকটা শিখতে সক্ষম হয় তাহলে তার জন্য শেখা আবশ্যক। আর যদি ওয়াক্ত সংকুচিত হয়ে আসে তাহলে সে নামায পড়ে নিবে এবং পরে কাযা করবে। এমন ব্যক্তির পেছনে নামায হবে না।

আর যদি তার জিহ্বা সঠিকটা বলতে না পারে কিংবা শেখার মত সময় অতিবাহিত না হয়, তাহলে ভুলটা সূরা ফাতিহায় হলে তার স্তরের ব্যক্তির নামায তার পেছনে সঠিক হবে। পক্ষান্তরে সঠিক উচ্চারণকারীর নামায তার পিছনে, ক্বারীর নামায তার পিছনে (সহিহ হবে না)। আর যদি ভুল পড়া ফাতিহা ছাড়া অন্য স্থানে হয়, তাহলে তার নামায এবং তার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের নামায সঠিক হবে।’[সমাপ্ত][রাওদ্বাতুত তালিবীন: (১/৩৫০)]

ইবনু কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘যদি কোন উম্মী ব্যক্তি অন্য উম্মী ব্যক্তি ও ক্বারীর ইমামতি করে তাহলে যিনি ক্বারী তিনি তার নামায পুনরায় পড়বেন। উম্মী হলেন এমন ব্যক্তি যিনি সমগ্র ফাতিহা বা এর কিছু অংশ ঠিকভাবে পড়তে পারেন না অথবা কোনো হরফ বাদ দিয়ে পড়েন, যদিও অন্য সূরা ঠিকভাবে পড়তে পারেন। সুতরাং যিনি সূরা ফাতিহা সঠিকভাবে পড়তে পারেন তার জন্য এই ব্যক্তির পেছনে নামায পড়া জায়েয নেই। তবে যিনি তার মতই ভুল পড়েন, তিনি তার পেছনে নামায পড়লে নামায হবে।...’

তারপর তিনি বলেন: ‘কেউ যদি পড়তে অক্ষম হওয়ার কারণে সূরা ফাতিহার কোনো হরফ ছেড়ে দেয় অথবা একটি হরফের বদলে অন্য হরফ পড়ে, যেমন: যে ব্যক্তি ‘রা’ হরফকে ‘গাইন’ হরফ হিসেবে পড়ে, কিংবা যে ব্যক্তি এক হরফকে অন্য হরফে ইদগাম করে ফেলে কিংবা এমন ভুল করে যা অর্থ বদলে দেয়, যেমন: যে ব্যক্তি ইয়্যাকা পড়ার বদলে ইয়্যাকি পড়ে অথবা আনআমতা পড়ার পরিবর্তে আন’আমতু পড়ে এবং এই ভুল শুধরাতে না পারে, সে নিরক্ষর ব্যক্তির মতই। পড়তে সক্ষম কোনো ব্যক্তির জন্য তার ইক্তিদা করা সঠিক নয়। তবে এই ধরনের ভুল যারা করেন তাদের একজনের জন্য অন্যের পেছনে নামায পড়া জায়েয। কারণ তারা দুজনই উম্মী। তাই তাদের একজনের জন্য অন্যের পেছনে নামায পড়া জায়েয। তাদের উদাহরণ ঐ দুই ব্যক্তির মত যারা কিছুই পারে না। আর যদি কিছুটা সংশোধন করার সক্ষমতা থাকে; কিন্তু না করে, তাহলে তার নামায সঠিক হবে না এবং তার পেছনে যে নামায পড়ে তার নামাযও সঠিক হবে না।’

তিনি আরো বলেন: “যে ইমাম এমন ভুল করে যে ভুলে অর্থ বদলে যায় না, তার ইমামতি করা মাকরূহ। ইমাম আহমদ এ ব্যাপারে স্পষ্ট বলেছেন। তবে যে ব্যক্তি ভুল করে না, তার পেছনে তার নামায আদায় সঠিক। কারণ সে পড়ার ফরযটুকু আদায় করেছে। যদি সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে এমন ভুল করে যা অর্থ বদলে ফেলে, তবুও এটি তার নামাযের বিশুদ্ধতা বাতিল করবে না এবং তার পেছনে নামায পড়াও বাতিল হবে না। কিন্তু যদি সে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করে, তাহলে উভয়ের নামাযই বাতিল হবে।...

আর যদি তার ভুলের কারণে সে আয়াতগুলোর অর্থ বদলে না যায় তাহলে তার পেছনে নামায আদায় করা সহিহ। তবে পড়া শেখা তার ওপর ওয়াজিব। আর যদি তার ভুল ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছুতে হয়, তাহলে সেটি তার নামাযে ঘাটতি সৃষ্টি করবে, তবে নামায বাতিল করে দিবে না। নিঃসন্দেহে তার চেয়ে দক্ষ ক্বারীর পেছনে নামায পড়া অগ্রাধিকার পাবে। এই সমস্ত অজ্ঞদেরকে জনগণের ইমামতির দায়িত্বে নিযুক্ত করা শাসকদের জন্য জায়েয নেই। নতুবা তারাও এই সমস্ত ইমামের সাথে পাপের ভাগীদার হবে।”[দেখুন: আল-মুগনী (৩/২৯-৩২), হাজর ছাপা]

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেন:

“... যদি সে ভুল করে এবং তার ভুল এমন হয় যে অর্থ বদলে দেয় না, তাহলে সম্ভব হলে যে ব্যক্তি ভুল করে না, তার পেছনে নামায পড়া অগ্রাধিকার পাবে। আর যদি সূরা ফাতিহায় সে এমন ভুল করে যা অর্থ বদলে দেয়, তাহলে তার পেছনে নামায পড়া বাতিল। এর কারণ তার ভুল; তার অন্ধত্ব নয়। যেমন: ইয়্যাকা না’বুদু পড়ার বদলে কা হরফে যের দিয়ে ইয়্যাকি না’বুদু পড়া অথবা আন’আমতা আলাইহিম পড়ার বদলে তা হরফে পেশ অথবা যের দিয়ে আন’আমতু অথবা আন’আমতি পড়া। আর যদি সে মুখস্থের দুর্বলতার কারণে ভুল করে, তাহলে তার তুলনায় মুখস্থে যে শক্তিশালী সে ইমামতির অধিক উপযুক্ত।”[ফাতাওয়াল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ লিল-বুহূসিল ইলমিয়্যা ওয়াল-ইফতা (২/৫২৭)]

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

একজন ইমাম কুরআন পড়তে গিয়ে ভুল করেন। কুরআনের আয়াতের হরফগুলো কখনো তিনি বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে পড়েন। তার পেছনে নামাযের হুকুম কী?

তিনি উত্তর দেন:

“যদি তার ভুল পড়ায় অর্থ বদলে না যায়, তাহলে তার পেছনে নামায পড়তে সমস্যা নেই। যেমন: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন [সূরা ফাতিহা: ২] পড়ার বদলে রাব্বাল অথবা রাব্বুল পড়া। অনুরূপভাবে আর-রাহমানির পড়ার বদলে আর-রহমানুর কিংবা অনুরূপ ভুল করা। আর যদি অর্থ পাল্টে দেয়, তাহলে তার পেছনে নামায পড়া যাবে না, যদি তার ভুল শুধরে দেওয়া হলে সে উপকৃত হয়ে শুধরে না নেয়। যেমন: যদি সে ইয়্যাকা পড়ার বদলে কাফ হরফে যের দিয়ে ইয়্যাকি না’বুদু পড়ে। অনুরূপভাবে সে যদি আন’আমতা পড়ার বদলে তা হরফে যের অথবা পেশ দিয়ে আন’আমতি অথবা আন’আমতু পড়ে। যদি তাকে ঠিক করে দেওয়া হলে সে নিজেকে শুধরে নেয় তাহলে তার নামায ও কিরাত বিশুদ্ধ হবে। একজন মুসলিমের জন্য সর্বাবস্থায় তার ভাইকে শিখিয়ে দেওয়া উচিত, সেটি নামাযের ভেতরে এবং বাইরে। কারণ এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে ভুল করলে তাকে শুধরে দিবে, সে না জানলে তাকে জানিয়ে দিবে এবং কুরআন পড়তে গিয়ে সে আটকে গেলে তাকে ঠিক করে দিবে।”[মাজমূ ফাতাওয়া ইবন বায: ১২/৯৮, ৯৯]

দুই:

আর একশ বার ‘ইয়া লাতীফু’ পড়া নিঃসন্দেহে বিদাত হবে, যদি কোনো মুসলিম শুধু এইটুকু আওড়াতে থাকে। কারণ এটি কোন অর্থবোধক বাক্য নয়। এখানে আল্লাহকে ডাকা হলো, কিন্তু তারপরে কী? সে কি আল্লাহর কাছ থেকে কিছু চাইছে? সে কি এরপরে আল্লাহর প্রশংসা করছে? এর কিছুই করছে না। আর যদি সম্মিলিতভাবে এভাবে যিকির করে, তাহলে তো আরো একটি বিদাত যুক্ত হলো।

এ সংক্রান্ত আলেমদের বক্তব্য (22457) ও (26867) নং প্রশ্নোত্তরে দেখুন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

টেক্সট ফরম্যাটিং অপশন

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android