বিতিরের নামাযের পদ্ধতি

প্রশ্ন: 46544

বিতিরের নামায আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি কী?

উত্তরের সার-সংক্ষেপ

বিতিরের সর্বনিম্ন সংখ্যা এক রাকাত। তিন, পাঁচ, সাত, নয় এবং এগারো রাকাতও বিতির পড়া যায়। বিতিরের ক্ষেত্রে পূর্ণতার ন্যূনতম রূপ হচ্ছে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে তারপর এক রাকাত পড়ে সালাম ফেরানো। এক সালামে তিন রাকাত পড়াও জায়েয, তবে সেখানে একবার তাশাহহুদ পড়তে হবে,; দুই বার নয়। তিন রাকাতের মধ্যে প্রথম রাকাতে পুরো সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়বে।

উত্তর

বিতিরের নামাযের ফযীলত:

বিতিরের নামায আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এমনকি কিছু আলেম তথা হানাফী আলেমগণ মনে করে এটা ওয়াজিব। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হচ্ছে এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যে নামায প্রতিটি মুসলিমের নিয়মিত আদায় করা ও পরিহার না করা বাঞ্চনীয়।

ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘যে ব্যক্তি বিতিরের নামায পড়ে না সে মন্দ ব্যক্তি। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়।’

এর থেকে বিতিরের নামাযের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। বিতিরের নামাযের পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নোক্ত পয়েন্টে আমরা সংক্ষেপে কথা বলতে পারি:

বিতিরের নামাযের ওয়াক্ত:

এশার নামায পড়ার পর থেকে বিতিরের নামাযের সময় শুরু হয়। এমনকি কেউ যদি এশার নামাযকে মাগরিবের নামাযের সাথে একত্রে পড়ে তার ক্ষেত্রেও। ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত এর সময় অবশিষ্ট থাকে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ একটি নামায দ্বারা তোমাদের সাহায্য করেছেন। তা হচ্ছে বিতিরের নামায। আল্লাহ তোমাদের জন্য এর সময়কে এশার নামাযের পর থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন।”[হাদীসটি তিরমিযী (৪২৫) বর্ণনা করেন। শাইখ আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে এ হাদিসকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন]

বিতিরের নামায ওয়াক্তের শুরুতে পড়া উত্তম; নাকি বিলম্বে পড়া:

সুন্নাহ প্রমাণ করে যে, কোনো ব্যক্তি যদি শেষ রাতে ঘুম থেকে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী হয় তাহলে তার জন্য শেষ রাত পর্যন্ত বিলম্ব করে বিতিরের নামায পড়া উত্তম। কারণ শেষ রাতের নামায উত্তম। এই নামাযে অনেক (ফেরেশতা) উপস্থিত থাকে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি শেষ রাতে উঠতে না পারার আশঙ্কা করবে সে যেন রাতের শুরুতেই বিতির পড়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি রাতের শেষ ভাগে নামায পড়ার ইচ্ছা রাখে সে যেন রাতের শেষ ভাগেই বিতির পড়ে। কারণ রাতের শেষ ভাগের নামাযে ফেরেশতারা হাজির হন। সেটাই অধিক উত্তম।”[হাদীসটি মুসলিম (৭৫৫) বর্ণনা করেন]

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: এ অভিমতই সঠিক। অন্য সাধারণ হাদীসগুলোকে এই স্পষ্ট সহিহ উত্তমতার অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে। যেমন এক হাদীসে এসেছে: ‘আমার খলিল (প্রিয় ব্যক্তিত্ব) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন আমি যেন বিতিরের নামায না পড়ে না ঘুমাই।’ এই হাদীসটি এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যে ঘুম থেকে উঠতে পারার ব্যাপারে নিশ্চিত নয়।[সমাপ্ত][শরহে মুসলিম (৩/২৭৭)]

বিতিরের নামাযের পদ্ধতি:

বিতিরের নামাযের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে এক রাকাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘বিতির হচ্ছে শেষ রাতের এক রাকাত।’[হাদীসটি মুসলিম (৭৫২) বর্ণনা করেন] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: ‘রাতের নামায দুই রাকাত দুই রাকাত করে। তোমাদের কেউ যদি ভোর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে সে যেন এক রাকাত নামায পড়ে নেয়। এই রাকাত তার পূর্বের আদায়কৃত নামাযকে বেজোড় করে দিবে।’

কেউ যদি এক রাকাতে সীমিত থাকে তাহলে সে সুন্নত আদায় করল। ... তিন, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাত বিতির নামায পড়াও জায়েয।

তিন রাকাত বিতির পড়লে এর দুটি রূপ। উভয়টি শরিয়তসম্মত:

এক: এক তাশাহহুদের মাধ্যমে টানা তিন রাকাত পড়া। কারণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস আছে, তিনি বলেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।’ অন্য বর্ণনায় আছে: ‘তিনি তিন রাকাত বিতির পড়তেন, সর্বশেষ রাকাতে ছাড়া বসতেন না।’[হাদীসটি নাসাঈ (৩/২৩৪) ও বাইহাকী (৩/৩১) বর্ণনা করেন। ইমাম নববী ‘মাজমূ’ (৪/৭) গ্রন্থে বলেন: ইমাম নাসাঈ হাদীসটি হাসান সনদে এবং বাইহাকী সহিহ সনদে বর্ণনা করেন]

দুই: দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেলা। এরপর এক রাকাত পৃথকভাবে পড়া। দলিল হলো ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি জোড় দুই রাকাত ও বেজোড় এক রাকাতের মাঝখানে সালাম ফেরাতেন। তিনি উল্লেখ করেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন।[হাদীসটি ইবনে হিব্বান (২৪৩৫) বর্ণনা করেন। ইবনে হাজার (২/৪৮২) ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন: হাদীসটির সনদ শক্তিশালী][সমাপ্ত]

আর যদি পাঁচ অথবা সাত রাকাত পড়ে তাহলে নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়বে, কেবল শেষ রাকাতের বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফেরাবে। দলিল হলো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তেরো রাকাত নামায পড়তেন। এর মধ্যে পাঁচ রাকাত বিতির পড়তেন, যার শেষ রাকাত ছাড়া কোনো রাকাতে তিনি বসতেন না।’[হাদীসটি মুসলিম (৭৩৭) বর্ণনা করেন]

উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ এবং সাত রাকাত বিতির পড়তেন। এর মাঝে সালাম বা কথার মাধ্যমে কোনো বিরতি দিতেন না।’[হাদীসটি আহমদ (৬/২৯০) ও নাসাঈ (১৭১৪) বর্ণনা করেন। ইমাম নববী বলেন: হাদীসটির সনদ উত্তম। আল-ফাতহুর রাব্বানী (২/২৯৭)। শাইখ আলবানী সহীহুন নাসাঈতে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

আর যদি নয় রাকাত বিতির পড়ে তাহলে নিরবচ্ছিন্ন পড়বে, যার মধ্যে কেবল অষ্টম রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসবে। তারপর সালাম না ফিরিয়ে উঠে যাবে এবং নবম রাকাতে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে। এর সপক্ষে দলীল হচ্ছে সহিহ মুসলিমে (৭৪৬) বর্ণিত হাদীস, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় রাকাত নামায পড়তেন। অষ্টম রাকাত ছাড়া কোনো রাকাতে তিনি (তাশাহহুদের জন্য) বসতেন না। বসে আল্লাহর যিকির করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন, তাঁর নিকট দোয়া করতেন (অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতেন)। তারপর সালাম না ফিরিয়ে নবম রাকাতের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতেন। নবম রাকাত শেষ করে তাশাহহুদ পাঠ করার জন্য বসতেন। বসে আল্লাহর যিকির করতেন, তার প্রশংসা করতেন ও তাঁর নিকট দোয়া করতেন (অর্থাৎ তাশাহহুদ পড়তেন)। এরপর আমাদেরকে শুনিয়ে সশব্দে সালাম ফিরাতেন।’

আর যদি এগারো রাকাত বিতির পড়ে, তাহলে প্রত্যেক দুই রাকাত পড়ার পরে সালাম ফেরাবে এবং এক রাকাত বিতির পড়বে।

বিতিরের নামাযের পূর্ণতার ন্যূনতম রূপ:

বিতিরের নামাযে পূর্ণতার ন্যূনতম পদ্ধতি হচ্ছে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবে। তারপর আরও এক রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবে। এক সালামে তিন রাকাত পড়া জায়েয। তবে সেক্ষেত্রে একবার তাশাহহুদ পড়তে হবে, দুইবার নয়; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিতিরের নামাযে কী পড়বেন?

তিন রাকাতের মধ্যে প্রথম রাকাতে গোটা সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়বে।

নাসাঈ (১৭২৯) বর্ণনা করেন: উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের নামাযে سَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى  (সূরা আ’লা),قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ   (সূরা কাফিরুন) এবং قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ  (সূরা ইখলাস) পড়তেন।[শাইখ আলবানী সহীহুন নাসাঈতে এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

বিতিরের নামাযের এই রূপগুলোর বিবরণ সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে। সর্বোত্তম হচ্ছে একজন মুসলিম সবসময় একই পদ্ধতিতে বিতির পড়বে না। বরং কখনো এই পদ্ধতি, আবার কখনো ঐ পদ্ধতিতে বিতির পড়বে; যাতে করে সে সকল সুন্নত আদায় করতে সক্ষম হয়।

আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজলেটার

ওয়েবসাইটের ইমেইল ভিত্তিক নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত পৌঁছতে ও ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করতে

download iosdownload android