বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

রোযার কিছু সুন্নত

প্রশ্ন

প্রশ্ন: রোযার সুন্নতগুলো কি কি?

আলহামদু লিল্লাহ।.

রোযার অনেক সুন্নত রয়েছে, যেমন-

এক:

যদি কেউ রোযাদারকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে ঝগড়া করতে আসে তাহলে রোযাদার তার দুর্ব্যবহারের জবাব ভাল ব্যবহার দিয়ে বলবে: ‘নিশ্চয় আমি রোযাদার’। যেহেতু সহিহ বোখারী ও সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ। অতএব, কেউ যেন মন্দ কথা না বলে, মূর্খ আচরণ না করে। যদি কোন লোক তার সাথে ঝগড়া করে কিংবা তাকে গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে দেয়, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার। ঐ সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে উত্তম। (আল্লাহ্‌ বলেন) আমার কারণে সে পানাহার ও যৌনসুখ বর্জন করেছে। রোযা আমারই জন্য। আমিই রোযার প্রতিদান দিব। এক নেকীর প্রতিদানে দশ নেকী দিব।”[সহিহ বুখারী (১৮৯৪) ও সহিহ মুসলিম (১১৫১)]

দুই:

রোযাদারের জন্য সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সহিহ বোখারী ও সহিহ মুসলিমে আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সেহেরী খাও; কারণ সেহেরীতে বরকত রয়েছে।”[সহিহ বুখারী (১৯২৩) ও সহিহ মুসলিম (১০৯৫)]

তিন:

বিলম্বে সেহেরী খাওয়া সুন্নত। দলিল হচ্ছে, সহিহ বুখারীতে আনাস (রাঃ) যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেহেরী খেলাম। এরপর তিনি নামাযে দাঁড়ালেন। আমি বললাম: আযান ও সেহেরী মাঝে কতটুকু সময় ছিল? তিনি বলেন: পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সমান সময়।”[সহিহ বুখারী (১৯২১)]

চার:

অবিলম্বে ইফতার করা সুন্নত। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণে থাকবে, যতদিন তারা অবিলম্বে ইফতার করে।”[সহিহ বুখারী (১৯৫৭) ও সহিহ মুসলিম (১০৯৮)] 49716 নং প্রশ্নোত্তরটিও পড়ুন।

পাঁচ:

কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। যদি কাঁচা খেজুর না পাওয়া যায় তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকে তাহলে পানি দিয়ে। দলিল হচ্ছে আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।”।[সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৬), সুনানে তিরমিযি (৬৯৬), ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে ৪/৪৫ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে]

ছয়:

হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে সেটা বলে ইফতার করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলে ইফতার করা। সঠিক মতানুযায়ী ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলা ওয়াজিব; যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আরও বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু, ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু। আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।” (অর্থ- হে আল্লাহ্‌, আপনার জন্যই রোযা রেখেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দিয়ে ইফতার করেছি। হে আল্লাহ্‌, আমার পক্ষ থেকে আপনি কবুল করে নিন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।)।[ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে (২/৫১) বলেছেন, হাদিসটি দুর্বল] আরও বর্ণিত হয়েছে, “যাহাবায যামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু, ইনশাআল্লাহ্‌” (অর্থ- তৃষ্ণা দূরীভুত হল, শিরাগুলো সিক্ত হল এবং ইনশাআল্লাহ্‌, সওয়াব সাব্যস্ত হল)।[সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৭), সুনানে বাইহাকী (৪/২৩৯), ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৪/৩৯) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করা হয়েছে]

রোযাদারের দোয়ার ফযিলতের ব্যাপারে আরও কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন:

১। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেন: “তিনজনের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না: পিতার দোয়া, মজলুমের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।” [সুনানে বাইহাকী (৩/৩৪৫), আলবানী তাঁর ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে (১৭৯৭) হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]

২। আবু উমাম (রাঃ) থেকে মারফু হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, “প্রতিদিন ইফতারের সময় আল্লাহ্‌ কিছু মানুষকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে দেন” [মুসানদে আহমাদ (২১৬৯৮), আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]

৩। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে মারফু হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, নিশ্চয় প্রতিটি দিন ও রাতে আল্লাহ্‌ কিছু মানুষকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করেন; অর্থাৎ রমযান মাসে। নিশ্চয় প্রতিটি দিন ও রাতে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি কবুলযোগ্য দোয়া রয়েছে।” [হাদিসটি ‘বায্‌যার’ বর্ণনা করেছেন; আলবানী ‘সহিহুত তারগীব’ গ্রন্থে (১/৪৯১) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

আরও জানতে পড়ুন 37745 নং, 37720 নং, 13999 নং ও 14103 নং প্রশ্নোত্তর।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব