যে ব্যক্তি সত্য কিংবা মিথ্যা শপথে অভ্যস্ত ছিল, সে কীভাবে ঐ শপথগুলোর কাফ্‌ফারা দিবে?

প্রশ্ন: 36734

দুঃখজনকভাবে ছোটবেলা থেকে আমি সত্য কি মিথ্যা শপথে অভ্যস্ত ছিলাম। আমি নিজেকে এই বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করে আসছি। এখন মনে হয় আমি সঠিক পথে চলছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে: আমার পূর্বের শপথগুলোর কী হবে? আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন সে জন্য আমি কী করব? আমি কি প্রত্যেকটা শপথের কাফ্‌ফারা দিব? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি কী পরিমাণ শপথ করেছিলাম তার সংখ্যাই জানতে পারছি না।

উত্তরের সার-সংক্ষেপ

ভবিষ্যতে কোন কিছু করবেন অথবা করবেন না এ মর্মে যে সমস্ত শপথ করেছিলেন সেগুলোর ক্ষেত্রে আপনার উপর কাফ্‌ফারা প্রদান করা আবশ্যক। আর অতীতে আপনি করেছেন অথবা করেননি এ মর্মে যে মিথ্যা শপথ করেছিলেন সেগুলোর জন্য কোনো কাফ্‌ফারা নেই। বরং আপনি এর জন্য আল্লাহর কাছে তাওবাহ করবেন। যে ব্যক্তি তাওবাহ করে, আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করেন। আল্লাহ আপনাকে তৌফিক দান করুন এবং আপনার গুনাহ ক্ষমা করুন।

উত্তর

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের প্রতি। পর সমাচার:

আলহামদু লিল্লাহ। দুরূদ ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপর, অতঃপর:

শপথ তিন প্রকার:

এক: উদ্দিষ্ট শপথ (يمين منعقدة): এটি এমন শপথ যা শপথকারী নিজ ইচ্ছায় করে থাকে এবং যে শপথের ব্যাপারে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে। এমন শপথ ভবিষ্যতে কোনো কিছু করা অথবা না করার ব্যাপারে হয়ে থাকে। এর বিধান হচ্ছে: এমন শপথ ভঙ্গ করলে এর জন্য কাফ্‌ফারা প্রদান করা ওয়াজিব। ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘কেউ কোনো কিছু করার শপথ করে পরে সেটি না করলে অথবা কোনো কিছু না-করার শপথ করে পরে সেটি করলে তাকে কাফ্‌ফারা দিতে হবে।’ এ ব্যাপারে বিভিন্ন অঞ্চলের ফকীহদের মাঝে কোনো মতপার্থক্য নেই। ইবনে আব্দুল বার বলেন: যে শপথের কাফ্‌ফারার ব্যাপারে সমস্ত মুসলিমের ইজমা সংঘটিত হয়েছে সেটা হলো ভবিষ্যতের কর্মের ব্যাপারে কৃত শপথ।’[আল-মুগনী (৯/৩৯০)]

দুই: অনর্থক শপথ (اليمين االلغو): সেটি হলো অনিচ্ছায় কৃত শপথ। এই শপথের কোনো কাফ্‌ফারা নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:

لا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ

“অনর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও কররবেন না; বরং তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন তোমাদের অন্তরের কৃত অর্জনের জন্য। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, ধৈর্যশীল।” আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয় কোনো ব্যক্তির ‘না, আল্লাহর কসম! হ্যাঁ, আল্লাহর কসম!’ এ ধরনের বলা বাক্যের ক্ষেত্রে।”[হাদীসটি বুখারী (৪৬১৩) বর্ণনা করেন]

কেউ যদি কোনো বিষয়ে এই ধারণা থেকে শপথ করে যে বিষয়টি সে যেমনটি শপথ করে বলেছে তেমনই, কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি এর বিপরীত বলে প্রতীয়মান হয়; তাহলে অধিকাংশ আলেমের মতে তাকে কোনো কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। কেননা এটি اليمين االلغو বা অনর্থক শপথ।

ইবনে কুদামা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে শপথ করে এই ধারণা থেকে যে বিষয়টি তার ধারণার অনুরূপ, কিন্তু বিষয়টি এমন না হয় তাহলে তার কোনো কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। কারণ এটি অনর্থক শপথের অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ আলেম মনে করেন যে এই ধরনের শপথে কোনো কাফ্‌ফারা নেই। ইবনুল মুনযিরের এমনটি বলেছেন। এই অভিমতটি ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা, আবু মালেক, যুরারা ইবনে আওফা, হাসান, নাখায়ী, মালেক, আবু হানীফা এবং সাওরীর থেকেও বর্ণিত।

আরও যারা এটাকে অনর্থক শপথ হিসেবে যারা গণ্য করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: মুজাহিদ, সুলাইমান ইবনে ইয়াসার, আওযা’ঈ, সাওরী, আবু হানীফা ও তার অনুসারীগণ।

অধিকাংশ আলেমের মতে অনর্থক শপথে কোনো কাফ্‌ফারা নেই। ইবনে আব্দুল বার বলেন: মুসলিমরা এ ব্যাপারে ইজমা (ঐক্যমত্য) করেছেন। কারণ আল্লাহ বলেছেন: “অনর্থক শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।” এটি অনর্থক শপথের অন্তর্ভুক্ত। আর যেহেতু এটি ভঙ্গ করাটা উদ্দিষ্ট নয়, তাই এটি ভুলক্রমে শপথ ভঙ্গ করার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।[সমাপ্ত][আল-মুগনী (৯/৩৯৩)]

তিন:

অতীতের কোনো বিষয়ে মিথ্যা শপথ করা। এটি কবীরাহ গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ আলেমের মতে এর কোনো কাফ্‌ফারা নেই। কেননা এটি এত ভয়াবহ যে কাফ্‌ফারা করা যায় না।

উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, আপনি যে সমস্ত উদ্দিষ্ট শপথ করে পরবর্তীতে সে শপথ ভঙ্গ করেছেন সেগুলোর জন্য আপনাকে কাফ্‌ফারা দিতে হবে।

যদি শপথগুলোর সংখ্যা ভুলে যান, তাহলে প্রচেষ্টা চালিয়ে আপনার প্রবল ধারণা অনুসারে সে পরিমাণ কাফ্‌ফারা প্রদান করুন যা দিলে আপনি দায়মুক্ত হয়েছেন বলে ধারণা হবে।

আর এই শপথগুলোর মধ্যে যেগুলো কোনো একটি কাজ করা কিংবা কোনো একটি কাজ ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে হয়ে থাকে, সে শপথগুলোর জন্য একটিমাত্র কাফ্‌ফারা দিতে হবে। যেমন: আপনি যদি শপথ করেন যে অমুকের সাথে কথা বলবেন না, তারপর শপথ ভঙ্গ করেন এবং কাফ্‌ফারা প্রদান না করেন, তারপর আবার শপথ করেন যে তার সাথে কথা বলবেন না, এরপরে শপথ ভঙ্গ করেন, তাহলে আপনার উপর কেবল একটি কাফ্‌ফারা আবশ্যক হবে। বিপরীতে আপনি যদি শপথ করেন যে তার সাথে কথা বলবেন না, তারপর শপথ করেন যে তার খাবার খাবেন না, তাহলে আপনার উপর দুটি কাফ্‌ফারা আবশ্যক হবে। (34730) নং প্রশ্নের উত্তরে এর বিবরণ প্রদান করা হয়েছে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজলেটার

ওয়েবসাইটের ইমেইল ভিত্তিক নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত পৌঁছতে ও ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করতে

download iosdownload android