শুক্রবার 19 রমজান 1445 - 29 মার্চ 2024
বাংলা

মাস্কের কারণে থুথু ঠোঁট পর্যন্ত বের হয়ে আসার পর গিলে ফেলার হুকুম কি?

প্রশ্ন

যেহেতু আমরা এখন করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরি। কখনও কখনও যখন আমি মাস্কের নীচ থেকে কথা বলি তখন কিছু লালা মাস্ক পর্যন্ত বেরিয়ে আসে, কিন্তু খুবই সামান্য। যেহেতু মাস্কটি ঠোঁটের সাথে লেগে থাকে; আমি সেটাকে আলাদা করতে পারি না। আমি জানি না যে, এটি কি দ্বিতীয়বার মুখে চলে গেল; নাকি যায়নি? এতে করে কি রোযা ভঙ্গ হবে? আর যদি ঠোঁটের মধ্যেই এটি শুকিয়ে যাওয়ার পর আমি ঠোঁটদ্বয় একটির সাথে অপরটিকে মিলাই; এরপরেও কি এর প্রভাব অবশিষ্ট থাকবে? নাকি শুকিয়ে গেলে কোন অসুবিধা নাই?

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

যদি লালা বা থুথু ঠোঁট পর্যন্ত চলে আসে, এরপর কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে সেটিকে গিলে ফেলে; যেমন জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো কিংবা অনুরূপ কিছুর মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে— তাহলে তার ওপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। অনুরূপভাবে শুকিয়ে গেলে এরপর ঠোঁটদ্বয় মিলিয়ে ফেললে। কারণ শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এর প্রভাব দূর হয়ে যায়। রোযা ভাঙ্গার মূলতঃই কোন কারণ বলবৎ থাকে না; না ইচ্ছাকৃত, আর না ভুলক্রমে। পক্ষান্তরে, যদি ঠোঁট পর্যন্ত থুথু চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে সেটাকে গিলে ফেলে; তাহলে রোযা ভাঙ্গার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। বিস্তারিত জবাবে সেই মতভেদ দেখুন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

যদি লালা বা থুথু ঠোঁট পর্যন্ত চলে আসে, এরপর কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে সেটিকে গিলে ফেলে; যেমন জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো কিংবা অনুরূপ কিছুর মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে; তাহলে তার ওপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। অনুরূপভাবে শুকিয়ে গেলে এরপর ঠোঁটদ্বয় মিলিয়ে ফেললে। কারণ শুকিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এর প্রভাব দূর হয়ে যায়। রোযা ভাঙ্গার মূলতঃই কোন কারণ বলবৎ থাকে না; না ইচ্ছাকৃত, আর না ভুলক্রমে। পক্ষান্তরে, যদি ঠোঁট পর্যন্ত থুথু চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে সেটাকে গিলে ফেলে; তাহলে রোযা ভাঙ্গার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে:

শাফেয়ি ও হাম্বলি মাযহাব মতে, এর মাধ্যমে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কেননা থুথু এর স্বস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। থুথুর স্থান হচ্ছে মুখের অভ্যন্তর। তাই বেরিয়ে পড়া থুথুকে গিলে ফেলা অন্য যে কোন বিচ্ছিন্ন জিনিসকে গিলে ফেলার মত।

যেই থুথু গিলে ফেললে রোযা ভাঙ্গবে না সে প্রসঙ্গে ইমাম নববী বলেন: “এর স্বস্থান থেকে এটাকে গিলে ফেলা। যদি মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, এরপর জিহ্বা দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে মুখে ফিরিয়ে নেয়; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: এমনকি যদি ঠোঁটের পিঠে বেরিয়ে আসে, এরপর মুখে ফিরিয়ে নিয়ে গিলে ফেলে; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কারণ এই ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে সেই ব্যক্তি কসুরকারী এবং যেহেতু থুথু ক্ষমার্হের স্থান থেকে বেরিয়ে গেছে। আল-মুতাওয়াল্লি বলেন: যদি ঠোঁট পর্যন্ত বেরিয়ে যায়, এরপর মুখে ফিরিয়ে নিয়ে গিলে ফেলে; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।”[আল-মাজমু (৬/৩৪২) থেকে সমাপ্ত]

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন: “যদি তার থুথু বেরিয়ে কাপড়ে পড়ে, কিংবা আঙ্গুলের মাঝখানে পড়ে কিংবা ঠোঁটের মাঝখানে বেরিয়ে আসে; এরপর সেটা মুখে ফিরে যায় ও সেটাকে গিলে ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কেননা সেই ব্যক্তি মুখ ব্যতীত অন্য স্থান থেকে সেটাকে গিলে ফেলেছে। তাই এটি অন্য কোন জিনিস গিলে ফেলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।”[আল-মুগনী (৩/১৭) থেকে সমাপ্ত]

হানাফি মাযহাব মতে, যদি থুথু মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এরপর মুখে ফিরিয়ে নেয় তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে; অন্যথায় নয়।

ফাতহুল ক্বাদির গ্রন্থে (২/৩৩২) বলেন: “যদি তার থুথু মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, এরপর মুখে প্রবেশ করায় ও গিলে ফেলে: যদি মুখের সাথে এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়; বরং মুখের ভেতরে যা আছে সেটার সাথে সংযুক্ত থাকে; যেমন- কোন সুতা থুথুকে চুষে নিল; তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না। আর যদি থুথু মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সেটাকে নিয়ে মুখে ফিরিয়ে দেয়া হয়; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে কোন কাফ্‌ফারা আবশ্যক হবে না। যেমনিভাবে কেউ যদি অন্য কারো থুথু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যায়। আর যদি মুখের ভেতরে থুথু জমার পর সেটাকে গিলে ফেলে তাহলে সেটা মাকরুহ। তবে এতে রোযা ভাঙ্গবে না।”[সমাপ্ত]

যে থুথু মাস্কের মধ্যে জমা হয় ও মুখ থেকে বাহিরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; সেটাকে এড়িয়ে চলা বাঞ্চনীয়। সেটাকে ইচ্ছাকৃতভাবে পুনরায় মুখে ফিরিয়ে নেয়া ও গিলে ফেলা যাবে না।

আর যেটাকে এড়িয়ে চলা কঠিন কিংবা যেটা অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখে ঢুকে যায়; সেটা ক্ষমার্হ। কেননা তা যৎসামান্য। যা থেকে বেঁচে চলা কঠিন। শরিয়ত ওযু করার পর মুখের মধ্যে যেটুকু পানির প্রভাব মুখে থেকে যায় সেটাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।

আর যেটার ব্যাপারে নিশ্চিত জানা যায় না; সেটা কি দ্বিতীয়বার মুখে প্রবেশ করেছে; নাকি করেনি: এর প্রভাবকে অকার্যকর করে দেয়া ও বিবেচনায় না-নেয়ায় যুক্তিযুক্ত। কেননা মুল বিধান হলো এটি রোযা ভঙ্গকারী না-হওয়া এবং থুথু মুখে ফিরে না-যাওয়া।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ