এক:
কুরআন নিরাময়ক; যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
“আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য নিরাময়ক ও অনুগ্রহ। আর তা যালেমদের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।”[সূরা ইসরা: ৮২]
এই বক্তব্য দৈহিক ও আত্মিক সব রোগকে অন্তর্ভুক্ত করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে নিজের উপর ও নিজ পরিবারের অসুস্থ ব্যক্তিদের উপর ‘মু’আওয়িযাত’ (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়তেন। যদি এটি উপকারী না হত তাহলে তিনি তা করতেন না।
মুসলিম (২১৯২) বর্ণনা করেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ হতেন তখন তিনি ‘মু‘আওয়িযাত’ পড়ে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন তাঁর রোগ তীব্র আকার ধারণ করল তখন আমি (সূরা) পড়তাম এবং তাঁর বদলে আমি বরকতের জন্য তাঁর হাত দিয়ে তাঁকে মুছতাম।
মুসলিম (২১৯২) বর্ণনা করেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু’আওয়িযাত’ সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরবর্তীতে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন তখন আমি তাকে ফুঁক দিতাম এবং তাঁর হাত দিয়ে তাঁর দেহে মুছতাম। কেননা আমার হাতের তুলনায় তাঁর হাত অধিক বরকতপূর্ণ।’
ইবনে হিব্বান (৬০৯৮) বর্ণনা করেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন: একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে প্রবেশ করলেন। ঐ সময় একজন নারী তার (আয়েশার) চিকিৎসা করছিল কিংবা তাকে ঝাড়ফুঁক করছিল। তিনি ঐ নারীকে বললেন: “তুমি আল্লাহর কিতাব দিয়ে তার চিকিৎসা করো।”
ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আল্লাহ তা’আলা বলেন: “আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য নিরাময়ক ও অনুগ্রহ।”[সূরা ইসরা: ৮২] সঠিক মতানুসারে আয়াতের مِنْ শব্দটি "জাত" বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে; "অংশ বিশেষ" বুঝাতে ব্যবহৃত হয়নি। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ
“হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে উপদেশবাণী এবং অন্তরের ব্যাধির নিরাময়ক এসেছে।”
সুতরাং কুরআন সকল প্রকার আন্তরিক ও দৈহিক এবং ইহলৌকিক ও পারলৌকিক রোগের চিকিৎসা।
তবে সবাই কুরআন দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের উপযুক্ত হয়ে ওঠে না এবং সবার সেই তাওফিক হয় না।
অসুস্থ ব্যক্তি যদি যথাযথভাবে এর মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে এবং আন্তরিকতা, ঈমান, পূর্ণভাবে গ্রহণ, দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এবং অন্য শর্তগুলো পূরণ করে নিজের রোগের নিরাময়ক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে তাহলে কোন রোগ কখনো কুরআনের সাথে পেরে উঠবে না।
রোগ কী করে আসমান-যমীনের রবের বাণীর সাথে লড়াই করবে!! যে বাণী পাহাড়ের উপর নাযিল হলে পাহাড়কে বিদীর্ণ করে ফেলত কিংবা যমীনের উপর নাযিল করা হলে জমিনকে খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলত!
অন্তর ও দেহের যে কোনো রোগের ঔষধের, রোগের কারণের এবং রোগ থেকে সুরক্ষার নির্দেশনা রয়েছে কুরআনে; তবে যাকে আল্লাহ কুরআন বুঝার তাওফিক দিয়েছেন তার জন্য।”[যাদুল মা’আদ (৪/৩২২) থেকে সমাপ্ত]
ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ যাদুল মা’আদ (৪/২২) গ্রন্থে বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনভাবে রোগের চিকিৎসা করতেন:
এক: প্রাকৃতিক ঔষধের মাধ্যমে।
দুই: ঐশী ঔষধের মাধ্যমে।
তিন: উভয়টির সমন্বয়ে।”[সমাপ্ত]
এরপর তিনি বলেন (৪/১৬২): ‘সর্পের দংশনে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে রুকইয়া করানোর ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ সংক্রান্ত অধ্যায়।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একদল সাহাবী কোন এক সফরে বেরিয়েছিলেন। তারা এক বেদুঈন পল্লীতে তাদের মেহমান হতে চাইলেন। কিন্তু বেদুঈনরা তাদের মেহমানদারি করতে অস্বীকার করল। ঐ পল্লীর সরদারকে কোনো কিছু কামড় দেয়। পল্লীর লোকেরা তার (আরোগ্যের) জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই কোন উপকার হয় না! তখন তাদের কেউ একজন বলল: ‘যে কাফেলা এখানে তাঁবু গেড়েছে তোমরা তাদের কাছে গেলে হয়ত তাদের কারো কাছে কিছু জানা থাকতে পারে।’ তখন তারা কাফেলার কাছে গিয়ে বলল: ‘হে যাত্রীদল! আমাদের সরদারকে কোনকিছু দংশন করেছে, আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না, তোমাদের কারো কাছে কিছু জানা আছে কী?’ তাদের (সাহাবীদের) একজন বললেন: হ্যাঁ, আল্লাহর কসম আমি রুকইয়া (ঝাড়-ফুঁক) করতে পারি। আমরা তোমাদের কাছে মেহমানদারি কামনা করেছিলাম; কিন্তু তোমরা আমাদের জন্য মেহমানদারি করোনি। কাজেই আমি রুকইয়া করব না যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ কর। তখন তারা একপাল বকরী দেয়ার শর্তে রুকইয়া করতে চুক্তিবদ্ধ হল। তারপর তিনি গিয়ে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” (সূরা ফাতিহা) পড়ে তার উপর ফুঁক দিতে লাগলেন। ফলে সে (এমনভাবে নিরাময় হল) যেন বন্ধন হতে মুক্ত হল এবং সে এমনভাবে চলতে লাগল যেন তার কোন কষ্টই ছিল না। (বর্ণনাকারী বলেন:) তারপর তারা তাদের চুক্তিকৃত পারিশ্রমিক পুরোপুরি দিয়ে দিল। তখন কাফেলার কেউ কেউ বললেন: বকরীগুলো বণ্টন করে দাও। কিন্তু যিনি রুকইয়া করেছিলেন তিনি বললেন: এখন বণ্টন করবে না। আগে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে তাঁকে এই ঘটনা জানাই এবং দেখি যে, তিনি আমাদের কী নির্দেশ দেন। তারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, “তুমি কিভাবে জানলে যে, সূরা ফাতিহা একটি রুকিয়ার দু‘আ?” তারপর বললেন: তোমরা ঠিকই করেছ। তোমরা বকরীগুলো বণ্টন করো এবং তোমাদের সাথে আমাকেও একটা ভাগ দিও।”
ইবনে মাজাহ ‘সুনান’ গ্রন্থে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সর্বোত্তম ঔষধ হচ্ছে কুরআন।”
এটি জ্ঞাত বিষয় যে কিছু কথার বিশেষত্ব ও পরীক্ষিত উপকার রয়েছে, তাহলে জগতসমূহের প্রভুর কথার ক্ষেত্রে কী ধারণা হওয়া উচিত?! সৃষ্টির উপর যেমন আল্লাহর মর্যাদা তেমনি সকল কথার উপর তাঁর কথার মর্যাদা। যে বাণী হচ্ছে পরিপূর্ণ নিরাময়ক, উপকারী সুরক্ষা, দিক-নির্দেশক আলো ও ব্যাপক অনুগ্রহ, যে বাণী কোনো পাহাড়ের উপর নাযিল হলে সে বাণীর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে পাহাড় খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেত।
আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ “আমি এমন কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য নিরাময়ক ও অনুগ্রহ।”[সূরা ইসরা: ৮২] এ আয়াতে مِنْ শব্দটি "জাত" বোঝানোর জন্য; "কিছু" বোঝানোর জন্য নয়। এটি দুটো অভিমতের মাঝে বিশুদ্ধতম মত। যার উদাহরণ পাই আমরা (সাহাবীদের প্রসঙ্গে) আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণীতে: وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا “(তাদের মধ্যে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও এক মহান পুরস্কারের (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”[সূরা ফাতহ: ২৯] এখানে من (তাদের মধ্যে) দ্বারা "কিছু" সাহাবী বোঝানো উদ্দেশ্য নয়; কারণ সাহাবীরা তো সবাই ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।
সুতরাং সূরা ফাতিহার ব্যাপারে কী ধারণা হতে পারে!! যার অনুরূপ কোনো কিছু না কুরআনে, না তাওরাতে, না ইঞ্জিলে আর না যাবূরে আল্লাহ নাযিল করেছেন। যে ফাতিহা আল্লাহর কিতাবের সব মর্মকে ধারণ করে আছে। যাতে রয়েছে আল্লাহ তাআলার মৌলিক ও সামগ্রিক অর্থবোধক নামসমূহ। সেই নামগুলো হচ্ছে: الله (আল্লাহ), الرب (রব্ব), الرحمن (আর-রহমান)। যাতে রয়েছে পরকালকে সাব্যস্তকরণ, দুই প্রকার তাওহীদ তথা তাওহীদে রুবুবিয়াহ (প্রভুত্বে এককত্ব) ও তাওহীদে উলূহিয়্যাহ (উপাসনায় এককত্ব)। যাতে রয়েছে সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ, হেদায়াত প্রার্থনা করা এবং এক আল্লাহকে এর জন্য নির্দিষ্ট করা।”
এক পর্যায়ে তিনি বলেন: “মক্কায় থাকাকালীন আমি একবার অসুস্থ হয়েছিলাম। কোনো চিকিৎসক ও ঔষধ পাচ্ছিলাম না। তখন আমি এই সূরা দিয়ে নিজের চিকিৎসা করছিলাম। একটুখানি যমযম পানি নিয়ে তাতে বেশ কয়েক বার সূরা ফাতিহা পড়ে পান করতাম। এর মাধ্যমে আমি পূর্ণ আরোগ্য লাভ করি। পরবর্তীতে অনেক ব্যথা-বেদনার ক্ষেত্রে আমি এর উপর নির্ভর করতে লাগলাম এবং এর দ্বারা ব্যাপক উপকৃত হলাম।”[সমাপ্ত]
শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আল্লাহ তা’আলা এমন কোনো রোগ নাযিল করেননি যার কোনো ঔষধ তিনি নাযিল করেননি। কেউ সে ঔষধ জানে, আর কেউ সে ঔষধ জানে না। মহান আল্লাহ তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যে কুরআন-সুন্নাহ অবতীর্ণ করেছেন তাতে মানুষের যত সব রোগের অভিযোগ করে সকল দৈহিক ও আত্মিক রোগের চিকিৎসা রেখেছেন। আল্লাহ এর মাধ্যমে তার বান্দাদের উপকার করেছেন। এর মাধ্যমে এমন কল্যাণ সাধিত হয়েছে যার পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।”[সমাপ্ত][ফাতাওয়া ইবনে বায (৩/৪৫৩)]
দুই:
কুরআনের মাধ্যমে শারীরিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরীক্ষিত একটি নমুনা হচ্ছে: কুরআনের কিছু আয়াত একটি কাগজে লিখে সেটিকে পানিতে রেখে তারপর সেই পানির মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা।
ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘সালাফদের একদল কুরআনের কিছু অংশ লিখে তা পান করার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন। তারা মনে করেন যে, এটি কুরআনে আল্লাহ প্রদত্ত নিরাময়ের অন্তর্ভুক্ত।
সন্তান প্রসবে কাঠিন্যের চিকিৎসার জন্য একটি পরিষ্কার পাত্রে লিখবে:
إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ * وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ * وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ * وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ * وَأَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ
“যখন আসমান বিদীর্ণ হবে ও তার প্রভুর আদেশ পালন করবে এবং তাকে এটা করতেই হবে। আর যখন যমীনকে প্রসারিত করা হবে এবং সে তার ভেতরের সবকিছু বের করে দিয়ে শূন্য হয়ে যাবে ও তার প্রভুর আদেশ পালন করবে এবং এটা তাকে করতেই হবে।”[সূরা ইনশিক্বাক, আয়াত: ১-৫] তারপর প্রসূতি নারী তা পান করবে এবং তার শরীরের উপর ছিটিয়ে দেওয়া হবে।
নাকের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য লিখন:
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ তার কপালে লিখে দিতেন:
وَقِيلَ يَاأَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَاسَمَاءُ أَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ
“এরপর বলা হলো: হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ! (বর্ষণ) বন্ধ করো। অতঃপর পানি শুকিয়ে গেল, (নূহের সম্প্রদায়ের কাফেরদের ডুবিয়ে মারার) কাজ সম্পন্ন হলো এবং জাহাজ জূদী পাহাড়ে গিয়ে ঠেকল।” [সূরা হুদ, আয়াত: ৪৪] আমি তাকে বলতে শুনেছি: আমি একাধিক ব্যক্তিকে এটি লিখে দেওয়ার পরে তারা সুস্থ হয়েছে। তারপর তিনি বলেন: তবে নাকের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত দিয়ে এটি লেখা যাবে না; যেমনটি অজ্ঞরা এটি করে থাকে। কারণ রক্ত নাপাক। নাপাক দিয়ে আল্লাহর বাণী লেখা জায়েয নেই।
দাঁত ব্যথার জন্য লিখন: যে গালের পাশে ব্যথা সেখানে লিখবে: بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম):
قُلْ هُوَ الَّذِي أَنْشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ
“বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে কান, চোখ ও অন্তর দিয়েছেন। তোমরা কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” [সূরা মুমিনূন, আয়াত: ৭৮]
অথবা চাইলে লিখবে:
وَلَهُ مَا سَكَنَ فِي اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
“রাতে ও দিনে যা কিছু থাকে তা তাঁরই। তিনিই সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৩]
গজিয়ে ওঠা ফোঁড়ার জন্য লিখন: ফোঁড়ার উপর লেখা হবে:
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا * فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا * لَا تَرَى فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا
“তারা তোমার কাছে পাহাড়-পর্বত সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। তুমি বলো: আমার রব সেগুলোকে বিস্ফোরিত করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিবেন। তারপর সেগুলোকে তৃণবিহীন সমতলভূমি করে রাখবেন। তাতে তুমি কোনো বক্রতা বা অসমতা দেখবে না।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১০৫-১০৭] [যাদুল মা’আদ (৪/৩২৭-৩২৯) থেকে সমাপ্ত]
তিন:
আমরা কুরআনে টাক মাথার কোনো চিকিৎসা পাইনি। কিন্তু ইতঃপূর্বে যেমনটি উল্লেখ হয়েছে যে কুরআনই নিরাময়ক, যদি দৃঢ়বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর কাছে নিষ্ঠাভরে কেউ আশ্রয় চায়। তারপর সুস্থতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছা এবং নির্ধারণ অনুসারে হবে; যেমনটি মানুষের ব্যবহার্য অন্য সকল বস্তুগত ঔষধের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। মানুষ অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কত কত বস্তুগত ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়, তারপরেও সে সুস্থ হয় না। তাই বলে কি এই ঔষধ চিকিৎসার মাধ্যম হতে কোনো বাধা আছে? কিংবা এ কারণে কি ডাক্তারের জ্ঞানের ব্যাপারে আপত্তি করার কোন সুযোগ আছে?!
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।