সংরক্ষণ করুন
  • New List
আরও
    সংরক্ষণ করুন
    • New List
6001/মুহাররম/1447 , 26/জুন/2025

পাপকাজে নিষিদ্ধ সহযোগিতা চেনার মানদণ্ড

প্রশ্ন: 247586

একজন সামাজিক কর্মী চিকিৎসা ও নানান প্রয়োজনে আমার পরিবারকে সাহায্য করে। কখনো কখনো সে আমাদের বাড়ির সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের লটে গাড়ি রাখতে চায়, যাতে সে আমাদের বাড়ির কাছেই অস্ট্রেলিয়ান রাগবি ম্যাচ দেখতে পারে। কারণ সে সময়টাতে স্টেডিয়াম এলাকায় খুবই ভীড় থাকে এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থাকে না। এই ম্যাচগুলোর খেলোয়াড়দের উরু উন্মুক্ত থাকে। এছাড়া এখানে নারী সমর্থক দল, মিউজিক, মদ, ফ্রি-মিক্সিং বিদ্যমান। আমার মনে হয় তাকে পার্কিং করতে দিয়ে আমি যেন তাকে পাপ কাজে সাহায্য করছি। আমি তার আবদার প্রত্যাখ্যান করতে সংকোচ করি। কারণ সে ইতঃপূর্বে আমাদেরকে সাহায্য করেছে এবং তার সাথে আমার পেশাগত সম্পর্কও আছে। তবে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, তার এ আবদার প্রত্যাখ্যান করব। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার উপযুক্ত পদ্ধতি কী?

আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন:

এটা আমার এক নিকটাত্মীয় যুবকের সাথে সম্পৃক্ত। সে পড়ালেখার জন্য সুদে ঋণ নিতে চায়। এক বছরের মধ্যে পরিশোধ না করলে তাকে সুদ দিতে হবে। আমি জানি না সে কি যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারবে। কিন্তু প্রবল ধারণা হচ্ছে যে, সে পেরে উঠবে না। সে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমার ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ব্যবহার করেছে, এতে কি আমার গুনাহ হবে?

আর যদি সে সুদী ঋণে পড়ালেখা করে, তাহলে কি তার পড়ালেখায় আমি আমার ল্যাপটপ ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিব? এই অবস্থাগুলোতে কি আমাকে ‘যা সন্দেহজনক তা পরিত্যাগ করো এবং যাতে সন্দেহ নেই তা করো’ শীর্ষক শরয়ি মূলনীতি মানতে হবে? যদিও এ কারণে মানুষের সাথে আমার সংঘাত লেগে যায়?

উত্তর

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর

এক:

পাপ কাজে সাহায্য করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

“তোমরা সৎকাজ ও দ্বীনদারিতায় পরস্পরকে সাহায্য করো, পাপ ও বাড়াবাড়িতে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”[সূরা মায়েদা: ২]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি হেদায়াতের পথে আহ্বান করবে সে তার অনুসরণকারীর সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে, অথচ তাদের (অনুসরণকারীদের) সওয়াব থেকে কোন কিছু কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি বিভ্রান্তির দিকে আহ্বান করবে সে তার অনুসরণকারীদের সমপরিমাণ পাপের অধিকারী হবে, অথচ তাদের (অনুসরণকারীদের) পাপের অংশ থেকে কোন কিছু কম করা হবে না।”[হাদীসটি মুসলিম (৪৮৩১) বর্ণনা করেন]

এছাড়া আরো বহু দলীল আছে যেগুলো প্রমাণ করে যে পাপী ব্যক্তিকে পাপে সাহায্য করা পাপ। যেমন: সুদের লেখক ও সুদের পক্ষে সাক্ষ্যদাতার প্রতি অভিশাপ, মদ বহনকারী ও মদ প্রস্তুতকারীর প্রতি অভিশাপ ইত্যাদি।

কিন্তু সকল সাহায্যই হারাম নয়। বরং হারাম হলো উদ্দেশ্যপূর্ণ সাহায্য। যে সাহায্যের দ্বারা ব্যক্তি পাপে সাহায্য করাকে উদ্দেশ্য করে অথবা সরাসরি নিকটবর্তী সাহায্য করাকে উদ্দেশ্য করে। যেমন: মদ বহন করা, সুদ লেখা।

অন্যদিকে দূরবর্তী সাহায্যে যদি পাপে সাহায্য করার ইচ্ছা না থাকে, তাহলে সেটি হারাম হবে না। যদি হারাম হয়ে যেত তাহলে মানুষের জন্য সব কিছু অনেক কঠিন হয়ে যেত।

এর উদাহরণ হলো: কাফেরদের সাথে ক্রয়-বিক্রয়, ঋণ-বন্ধকের বৈধতা; যেমনটি সহিহ সুন্নাহতে প্রমাণিত, যদিও এই কাজের মাধ্যমে দূরবর্তী সাহায্য করা হয়। কেননা কাফের এই সম্পদ থেকে উপকৃত হয় এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সে এগুলো সুদসহ নানান কাজে ব্যয় করে। তবু শরীয়ত এমন সহায়তার দিকে দৃষ্টিপাত করেনি।

আমেরিকান ফিকহ একাডেমির সদস্য ড. ওয়ালীদ আল-মানীসী বলেন: "পাপ ও বাড়াবাড়িতে সাহায্য নীতি" বিষয়ে ১৪২৮ হিজরী সনে আমেরিকান ফিকহ একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত বাহরাইনে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে একাডেমির আলেমদের মাঝে দীর্ঘ গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। তারা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তার সারকথা হলো, পাপ ও সীমালঙ্ঘনে সহায়তা চার প্রকার:

১. সরাসরি উদ্দিষ্ট সাহায্য। যেমন: কেউ যদি অন্যকে পান করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে মদ প্রদান করে।

২. সরাসরি, তবে উদ্দিষ্ট নয় এমন সাহায্য। যেমন: এমন হারাম বস্তু বিক্রি করা যেগুলোর কোনো হালাল ব্যবহার নেই, যদি এ বিক্রিতে তাদেরকে হারাম ব্যবহারে সাহায্যের উদ্দেশ্য না থাকে।

৩. উদ্দিষ্ট, তবে সরাসরি নয় এমন সাহায্য। যেমন: যে ব্যক্তি অন্যকে দিরহাম প্রদান করে মদ কেনার জন্য। যেমন: হত্যার কারণ হওয়া।

৪. সরাসরি নয় এবং উদ্দিষ্ট নয় এমন সাহায্য। যেমন: কেউ যদি এমন বস্তু বিক্রি করে যা হালাল ও হারাম উভয় কাজেই ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে হারামে ব্যবহারকারীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্য যদি সে না করে। অনুরূপভাবে কেউ যদি অন্য কাউকে দিরহাম দেয়, তবে মদ কেনার জন্য নয়। এরপর সে যদি মদ কিনে পান করে এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি দিরহাম দিল তার পাপ হবে না; যদি সে হারামে সাহায্য করার নিয়ত না করে থাকে।

মুশরিক এবং পাপী মুসলিমদের সাথে ক্রয়-বিক্রয়, ভাড়া এবং তাদেরকে অর্থ দান করা এই চতুর্থ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।

ফিকহ একাডেমির সিদ্ধান্ত ছিল প্রথম তিন প্রকার নিষিদ্ধ এবং শেষ প্রকার বৈধ বলে গণ্য করা, আর সেটি হলো এমন সহায়তা যা সরাসরি নয় এবং উদ্দিষ্ট নয়।’[সমাপ্ত]

এই চতুর্থ প্রকার থেকে বাদ যাবে এমন কিছু যা দিয়ে সহায়তা করা হলে সাহায্যকৃত ব্যক্তি সেটি পাপকাজে ব্যবহার করবে বলে প্রবল ধারণা হয়। তাই বহু ফকীহ এমন ব্যক্তির কাছে আঙুর বিক্রি করাকে হারাম বলেছেন যিনি সেটি দিয়ে মদ তৈরি করেন। অনুরূপভাবে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে অস্ত্র বিক্রি করাও হারাম বলেছেন। অথচ আঙুর ও অস্ত্র উভয়টি হালাল ও হারাম উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

এ কারণে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “প্রত্যেক যে পোশাক পরার মাধ্যমে পাপ কাজে সাহায্য করা হবে মর্মে প্রবল ধারণা হয় সেটি সেলাই করে এমন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা যাবে না যে ব্যক্তি এর দ্বারা পাপ ও অন্যায়ে অংশ নিবে। ... অনুরূপভাবে কোন জিনিস মৌলিকভাবে বৈধ হলেও এর সাহায্যে পাপ করা হবে এমন ধারণা হলে (সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য)।”[সমাপ্ত][শারহুল উমদা (৪/৩৮৬)]

আপনার প্রশ্নে ফিরে গিয়ে বলব: সরাসরি বা নিকটবর্তী সাহায্য হবে যদি কেউ তাকে গাড়িতে করে পৌঁছে দেয় অথবা তার জন্য ম্যাচে ঢোকার টিকিট কিনে দেয় বা অনুরূপ কিছু করে।

কিন্তু তাকে গাড়ি পার্ক করতে দেওয়া দূরবর্তী সাহায্য। এর সাথে পাপের অনিবার্যতা নেই। সে হয়তো ম্যাচ দেখতে না যেতেও পারে। আর গেলেও সে সতর দেখা বা ফ্রি-মিক্সিং এর মত হারাম কিছুতে লিপ্ত নাও হতে পারে।

পাপের উদ্দেশে গমন করা আর বৈধ কিছুর উদ্দেশ্যে গমন করা যেখানে পাপ ঘটতে পারে এ দুটোর মাঝে মৌলিকভাবে পার্থক্য করতে হবে। ফকীহরাও অনুরূপ পার্থক্য করেছেন। যেমন তারা পার্থক্য করেছেন এমন দুই ব্যক্তির হুকুমের ব্যাপারে; একজন বাড়ি ভাড়া নিয়েছে পানশালা তৈরি করার মত পাপকাজ করার জন্য, আর অন্যজন বৈধ বসবাসের জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে মদ পান করেছে। এক্ষেত্রে প্রথম জনকে ভাড়া দেওয়া হারাম; কিন্তু দ্বিতীয় জনকে ভাড়া দেওয়া হারাম নয়।

কোনটি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, আর কোনটি পরোক্ষ সহযোগিতা, কোনটি নিকটবর্তী সহযোগিতা, আর কোনটি দূরবর্তী সহযোগিতা বিশেষ কোন মাসয়ালায় এ বিষয়গুলো নির্ধারণে এক আলেম থেকে অন্য আলেমের মতভেদ হতে পারে। এক্ষেত্রে একজন ফকীহ ইজতিহাদ করবেন এবং পূর্ববর্তী ফকীহরা অনুরূপ ঘটনায় যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছেন সেগুলো থেকে সহায়তা নিবেন।

এখানে মোদ্দাকথা হলো:

উক্ত কর্মকর্তাকে আপনাদের ব্যক্তিগত পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করার অনুমতি প্রদানে কোনো সমস্যা নেই। এটি তাকে পাপ কাজে সরাসরি কিংবা নিকটবর্তী সহযোগিতা করা হয়েছে বলে গণ্য হবে না। যেমন: হারামের দিকে দৃষ্টিপাত অথবা মিউজিক শোনা অথবা অন্যান্য যে সমস্ত মন্দ বিষয় খেলার মাঠে ঘটে। বরং এই সাহায্য হবে তার কাছে খাবার, পানীয় ও কাপড় বিক্রি করার সাহায্যের মতোই। এগুলোর ফলে সে শক্তিশালী হয়ে উঠছে কিংবা এগুলোর মাধ্যমে তাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করা হচ্ছে, ফলে সে হারামে লিপ্ত হচ্ছে এই যুক্তিগুলো দিয়ে এই বিষয়গুলো হারাম করা যাবে না। কারণ এগুলো উদ্দিষ্ট নয় এমন দূরবর্তী সাহায্য। তাই শরীয়ত এটির দিকে দৃষ্টিপাত না করে কাফেরের সাথে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসায়িক লেনদেন বৈধ করেছে যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে।

দুই:

আপনার নিকটাত্মীয়কে আপনার ল্যাপটপের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে কোনো সমস্যা নেই, যদিও সে সুদী ঋণে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। কারণ এই পড়ালেখা বৈধ। আপনি তাকে পড়ালেখায় সাহায্য করছেন; ঋণে নয়। বরং এই হারাম ঋণ পেতে গিয়ে আপনার ল্যাপটপের সাহায্য নিলে তখন হারাম হবে; কারণ সেটি হবে পাপ কাজে সাহায্য।

এ বিষয়টি জানা জরুরী যে, কেউ যদি সুদী ঋণ নেয়, তাহলে তার পাপ হলেও সে যে অর্থ ঋণ নিয়েছে সে সেটির মালিক। তার জন্য পানাহার, বসবাস, পড়ালেখা প্রভৃতি কাজে এর থেকে উপকৃত হওয়া বৈধ। সুতরাং এগুলোর কোনটিকে এর থেকে মুক্ত রাখা তার উপর আবশ্যকীয় নয়। আপনার এই আত্মীয় বা অন্য কাউকে তার বৈধ পড়ালেখায় সাহায্য করতে আপনার কোনো সমস্যা নেই।

তিন:

কর্জে হাসানাহ তথা উত্তম ঋণ প্রদান করা হারাম হবে যদি সেটি পরিশোধে বিলম্ব হলে জরিমানার শর্তারোপ করা হয়। কারণ এতে সুদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং কার্যতঃ তাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।

মক্কাস্থ রাবেত্বাতুল আলাম আল-ইসলামীর অধিভুক্ত 'ইসলামী ফিকহ একাডেমি'-র একাদশ অধিবেশনের অষ্টম সিদ্ধান্তে এসেছে: “ঋণদাতা যদি ঋণী ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধে বিলম্ব হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক জরিমানা কিংবা নির্দিষ্ট হারে অর্থ প্রদান করার শর্তারোপ করে কিংবা আবশ্যক করে' তাহলে সেটি বাতিল শর্ত। এমন শর্ত পূরণ করা আবশ্যক নয়। বরং এই শর্ত হালালই নয়। সেই শর্তকারী ব্যাংক হোক কিংবা অন্য কেউ হোক। কারণ এটি জাহেলী যুগের সুদ, যা কুরআন হারাম বলে গণ্য করেছে।”[সমাপ্ত]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

টেক্সট ফরম্যাটিং অপশন

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android