শুক্রবার 10 শাওয়াল 1445 - 19 এপ্রিল 2024
বাংলা

পবিত্রতা ও অন্যান্য বিষয়ে বাধ্যগত শুচিবায়ু থেকে মুক্তির সফল উপায়

প্রশ্ন

বীর্য বের হওয়ার ব্যাপারে আমি সন্দেহে পড়ে গেছি। যখন আমি নিশ্চিত হতে চাইলাম দেখলাম যে, এর রঙ হলুদ ও শুকনো; মজির বিপরীত। মজি তো পিচ্ছিল। কিন্তু বীর্যের বৈশিষ্ট হলো বের হওয়ার সময় অনুভব হওয়া এবং বের হওয়ার পর নিস্তেজতা অনুভব করা। আমি এর কিছুই অনুভব করিনি। আমি জানি বীর্যের গন্ধ খেজুর গাছের মঞ্জরীর গন্ধের মত। কিন্তু খেজুর গাছের মঞ্জরীর গন্ধ কেমন আমি সেটা জানি না। আমি জানি যে, শুকিয়ে গেলে এর গন্ধ ডিমের গন্ধের মত হয়। আমি যখন নিশ্চিত হতে গেলাম তখন এর গন্ধ পেলাম; কিন্তু সেটা ডিমের গন্ধের মত নয়। তাছাড়া আমি যখন ঘুম থেকে জাগি তখন কিছুটা ভেজা পাই; অথচ আমার স্বপ্নদোষ হয়নি। এমতাবস্থায় বীর্য থেকে; আমি বুঝাতে চাচ্ছি সন্দেহের অবস্থা থেকে গোসল করা কি জায়েয হবে? আমি সতর্কতামূলক গোসল করতে চাই; সেটা কি জায়েয? বীর্য থেকে গোসল, হায়েয থেকে গোসল ও ইসলামে প্রবেশ করার গোসল একত্রে করা কি সঠিক হবে? আমি জানি যে, হায়েযের পূর্বেই বীর্য থেকে গোসল করা আমার উপর ওয়াজিব। কিন্তু যখনই আমি ইসলামে প্রবেশের গোসল করতে যাই তখনই আমি গোসলের শুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহে পড়ে যাই। তাই আমি বীর্য থেকে গোসল করিনি।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, আপনার প্রশ্ন থেকে স্পষ্ট যে, আপনি পবিত্রতা সংক্রান্ত শুচিবায়ুতে আক্রান্ত। কেননা আপনি ইসলামে প্রবেশের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছেন; অথচ আলহামদু লিল্লাহ্‌ আপনি মুসলিমা। শুচিবায়ু একটি কঠিন ব্যাধি। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে সুস্থ করে দেন।

ইবনে হাজার হাইতামীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “শুচিবায়ুর কি কোন চিকিৎসা আছে? তিনি এই বলে জবাব দেন: এর কার্যকরী ঔষধ একটাই সেটা হচ্ছে–শুচিবায়ুকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও। কেননা কেউ যদি সেটাকে ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে সেটা স্থির হবে না। কিছু সময় পর চলে যাবে; যেমনটি তাওফিকপ্রাপ্ত লোকেরা যাচাই করে পেয়েছেন। আর যে ব্যক্তি শুচিবায়ুকে পাত্তা দিবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে সে ব্যক্তির শুচিবায়ু বাড়তেই থাকবে; এক পর্যায়ে তাকে পাগলের কাতারে নিয়ে পৌঁছাবে কিংবা পাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাবে। যেমনটি আমরা অনেক মানুষের মাঝে দেখেছি, যারা শুচিবায়ুতে আক্রান্ত হয়ে এতে কান দিয়েছেন এবং এর শয়তানের কথা শুনেছেন। যে শয়তানের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাবধান করে বলেছেন: “তোমরা পানি ব্যবহারে কুমন্ত্রণাদাতা (শয়তান) থেকে বেঁচে থাক, যাকে ‘ওয়ালাহান’ ডাকা হয়”। অর্থাৎ অহেতুক কাজ করানো ও বাড়াবাড়ির কুমন্ত্রণা দেয়ার কারণে তাকে এই নামে ডাকা হয়। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আমি যে পরামর্শ দিয়েছি এর সমর্থনমূলক বর্ণনা এসেছে যে, যে ব্যক্তি শুচিবায়ুতে আক্রান্ত হয়েছে সে যেন ‘আউযুবিল্লাহ্‌’ পড়ে এবং (দুঃশ্চিন্তাকে বাড়তে না দিয়ে) থেমে যায়। আপনি এ উপকারী ঔষধটি একটু ভেবে দেখুন; যে ঔষধটি তার উম্মতকে শিখিয়েছেন এমন ব্যক্তি যিনি মনগড়া কোন কথা বলেন না। জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি এই ঔষধ অবলম্বন করা থেকে বঞ্চিত হলো সে প্রভুত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। কেননা, সর্বসম্মতিক্রমে শুচিবায়ু শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর এই লানতপ্রাপ্ত শয়তানের সর্বাত্মক উদ্দেশ্য হচ্ছে­ – মুমিনকে বিভ্রান্তির ডোবাতে ফেলে দেয়া, পেরেশান করে রাখা, জীবনকে ভারাক্রান্ত করে তোলা, অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিষাদময় করে ফেলা; যাতে এক পর্যায়ে তাকে ইসলাম থেকে এমনভাবে বের করে ফেলতে পারে যে সে টেরও পাবে না। (নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।”[সূরা ফাতির, আয়াত: ৬][আল-ফাতাওয়াল ফিকহিয়্যাল কুবরা (১/১৪৯)]

ওহে আল্লাহ্‌র বান্দী! জেনে নিন বাধ্যগত শুচিবায়ু অন্য সব রোগের মত একটি রোগ। পরিচিত ঔষধের মাধ্যমে এর নিরাময় রয়েছে। এর আচরণ চিকিৎসাও রয়েছে। আমরা মনে করি একত্রে উভয় চিকিৎসা করা রোগীর জন্য কার্যকরী এবং তার আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক। তাই আপনি যদি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিজেকে পেশ করেন ইনশাআল্লাহ্‌ সেটি আপনার জন্য ভাল।

ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, শুচিবায়ু আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা ও ব্যক্তি এটাকে পাত্তা না দেয়ার মাধ্যমে দূর হয়। তা জানতে 20159 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

পক্ষান্তরে, জাগ্রত অবস্থায় আপনি বীর্য বের হওয়ার সন্দেহ করলে এতে গোসল ফরজ হওয়া আরোপিত হয় না। কেননা সন্দেহের ভিত্তিতে কোন কিছু আরোপিত হয় না।

আর যে ব্যক্তি ঘুম থেকে জেগে তার কাপড়ে ভেজা পায় তার তিনটি অবস্থার কোন একটি অবস্থা হতে পারে; যা ইতিপূর্বে 22705 নং প্রশ্নোত্তরে আলোচিত হয়েছে।

এ অবস্থায় আমরা আপনার জন্য সতর্কতামূলক গোসল করাকে সঠিক মনে করি না। কেননা সতর্কতা গ্রহণ করা তার জন্য ঠিক যে শুচিবায়ুগ্রস্ত নয়। শুচিবায়ুগ্রস্ত ব্যক্তি যদি সতর্কতার উপর আমল করে তাহলে এতে করে তার শুচিবায়ু আরও বেড়ে যাবে এবং শুচিবায়ুর উপর আমল করা হবে। এভাবে সে মহা সংকটে পড়ে যাবে। বরং এর ফলে তার গোটা দ্বীনদারি নষ্ট হয়ে যেতে পারে; যা অনেক শুচিবায়ুগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই ঘটেছে; যা প্রত্যক্ষকৃত ও সবার জানা।

জানাবাত (অপবিত্রতা)-এর গোসল ও হায়েযের গোসলকে একত্রিত করা জায়েয। ইবনে কুদামা ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে (১/১৬২) বলেন: “যদি গোসল ফরয হওয়ার দুটো কারণ একত্রিত হয়; যেমন- হায়েয ও জানাবত কিংবা সহবাস ও বীর্যপাত এবং ব্যক্তি যদি পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে উভয়টির নিয়ত করে তাহলে সেটা জায়েয হবে। এটি অধিকাংশ আহলে ইলমের অভিমত। তাদের মধ্যে রয়েছেন- আতা, আবুয যিনাদ, রাবীআ’, মালিক, শাফেয়ি, ইসহাক ও কিয়াসবাদীরা।”[সমাপ্ত]

আর ইসলামে প্রবেশের নামায এটি মূলতঃই আপনার জন্য শরিয়তসিদ্ধ নয়। যেহেতু আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে আপনি মুসলিমা। আপনি ইসলাম ত্যাগ করেননি। কিন্তু শয়তান আপনাকে কুমন্ত্রণা দিচ্ছে যাতে করে কষ্ট দিতে পারে এবং ধর্মকে আপনার কাছে অপছন্দনীয় করে তুলতে পারে। তাই আপনি এসব শুচিবায়ু থেকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন; যার পরিণাম ভয়াবহ।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব