শুক্রবার 10 শাওয়াল 1445 - 19 এপ্রিল 2024
বাংলা

আমরা কিভাবে আমাদের অন্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা বাড়াতে পারি?

প্রশ্ন

কিভাবে একজন মুসলিম তার অন্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা দুনিয়ার অন্য সবকিছু থেকে বেশি বাড়াতে পারে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার তীব্রতা ব্যক্তির ঈমানের ওপর নির্ভর করে। ব্যক্তির ঈমান বৃদ্ধি পেলে তাঁর প্রতি ভালোবাসাও বেড়ে যায়। কারণ তাঁর প্রতি ভালোবাসা হচ্ছে- নেককাজ ও আল্লাহ্‌র নৈকট্য। ইসলামী শরিয়তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ফরয।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।”[সহিহ বুখারী (১৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৪)]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে:

এক: তিনি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে প্রেরিত। সমস্ত মানুষের কাছে আল্লাহ্‌র দ্বীন বা ধর্ম পৌঁছে দেয়ার জন্য বিশ্ববাসীর মধ্য থেকে আল্লাহ্‌ তাঁকে মনোনীত করেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁকে ভালোবাসেন বিধায় ও তাঁর প্রতি রাজি থাকায় তাঁকে নির্বাচিত করেছেন। যদি আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট না হতেন তাহলে তাঁকে মনোনীত করতেন না। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ্‌ যাকে ভালোবাসেন তাঁকে ভালোবাসা এবং আল্লাহ্‌ যার প্রতি সন্তুষ্ট তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া এবং জানা উচিত, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ্‌ তাআলার ‘খলিল’। কেউ ভালোবাসার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছলে বলা হয় খলিল।

জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা যাওয়ার পাঁচদিন পূর্বে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমার কোন খলিল থাকা থেকে আমি আল্লাহ্‌র কাছে নিজের অবমুক্ততা ঘোষণা করছি। কারণ আল্লাহ্‌ তাআলাই আমাকে খলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যদি আমি আমার উম্মতের মধ্যে কাউকে খলিল হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবু বকরকে গ্রহণ করতাম।”[সহিহ মুসলিম (৫৩২)]

দুই: আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁকে যে মর্যাদায় ভূষিত করেছেন আমাদেরকে তাঁর সে মর্যাদা জানা এবং আরও জানা যে, তিনি হচ্ছেন— শ্রেষ্ঠ মানুষ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন আমি হব বনী আদমের নেতা। আমার কবর প্রথম উন্মুক্ত করা হবে, আমিই হব প্রথম সুপারিশকারী ব্যক্তি এবং প্রথম যার সুপারিশ গৃহীত হবে”[সহিহ মুসলিম (২২৭৮)]

তিন: আমাদেরকে আরও জানতে হবে যে, আমাদের কাছে দ্বীন পৌঁছানোর জন্য তিনি নানা কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করেছেন। যার ফলে দ্বীন আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। আমাদের আরও জানা কর্তব্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁকে পেটানো হয়েছে, গালমন্দ করা হয়েছে, গালি দেয়া হয়েছে, কাছের লোকজনও তাঁর থেকে দূরে সরে গেছেন, তাঁকে পাগল, মিথ্যাবাদী, যাদুকর ইত্যাদি অভিধা দেয়া হয়েছে। তিনি কাফেরদের সাথে লড়াই করেছেন; যাতে করে দ্বীন রক্ষা পায় এবং আমাদের কাছে দ্বীন পৌঁছে। কাফেরেরা তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং তাঁকে নিজ পরিবার, সম্পদ ও দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক জোট তৈরী করা হয়েছে।

চার: তাঁকে তীব্র ভালোবাসার ক্ষেত্রে তাঁর সাহাবায়ে কেরামের অনুকরণ করা। সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে নিজ সম্পদ ও সন্তানের চেয়ে; বরং নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। আসুন এ রকম কিছু নমুনা জানি:

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “একবার আমি দেখেছি নাপিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চুল ফেলছে; আর সাহাবীরা তাঁর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে; যেন একটা চুল পড়লেও সেটা কারো একজনের হাতে পড়ে।”[সহিহ মুসলিম (২৩২৫)]

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “ওহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তখন আবু তালহা (রাঃ) ঢাল হাতে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্মুখে প্রাচীরের ন্যায় অটল হয়ে দাঁড়ালেন। আবু তালহা (রাঃ) সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। অনবরত তীর ছুড়তে থাকায় তাঁর হাতে দুই বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে যায়। সে সময় তীর ভর্তি শরাধার নিয়ে যে কেউ তাঁর নিকট দিয়ে যেতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেই বলতেন, তোমার তীরগুলো বের করে আবু তালহাকে দাও। এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঁচু করে শত্রুদের অবস্থা অবলোকন করতে চাইলে আবু তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আপনি মাথা উঁচু করবেন না। মাথা উঁচু করলে শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে। আমার বক্ষ যেন (ঢাল স্বরূপ) আপনার বক্ষের সামনে থাকে।...”[সহিহ বুখারী (৩৬০০) ও সহিহ মুসলিম (১৮১১)]

পাঁচ: তাঁর সুন্নতের অনুসরণ করা; সেটা তাঁর কথা হোক কিংবা কাজ। রাসূলের সুন্নত যেন হয় আপনার জীবনাদর্শ। সারা জীবন তাঁর সুন্নত অনুসারে চলবেন। তাঁর কথাকে সকল কথার উপর প্রাধান্য দিবেন, তাঁর নির্দেশকে সকল নির্দেশের উপর প্রাধান্য দিবেন। এছাড়া আপনি তাঁর সাহাবায়ে কেরাম যে আকিদা পোষণ করত সে আকিদা পোষণ করবেন, এরপর তাবেয়িগণ যে আকিদা পোষণ করত সে আকিদা পোষণ করবেন, তাঁদের পর আজ অবধি যারা তাঁদেরকে যথাযথভাবে অনুসরণ করেছেন তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত; তাদের আকিদা পোষণ করবেন। বিদআতের অনুসরণ করবেন না; বিশেষত রাফেযিদের অনুসরণ করবেন না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে রাফেযিরা কঠোর হৃদয়ের অধিকারী। রাফেযিরা তাদের ইমামগণকে তাঁর উপরে প্রাধান্য দেয় এবং ইমামদেরকে তাঁর চেয়ে বেশি ভালোবাসে।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর রাসূলের ভালোবাসা দান করেন, আমাদের কাছে তাঁকে সন্তানসন্ততি, পিতামাতা, পরিবার-পরিজন ও নিজেদের জানের চেয়ে বেশি প্রিয় করে দেন।

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব