0 / 0

মক্কা ও মদিনার ফযীলত

প্রশ্ন: 235370

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনায় বসবাস করা উত্তম; নাকি মক্কা মুকার্‌রমায় বসবাস করা উত্তম? এই শহর দুটির হারাম অঞ্চলের ভেতরে নামায পড়ার ফযীলত ছাড়া কোন কোন পার্থক্যের কারণে একটির সাথে অন্যটির ফযীলতে তারতম্য ঘটে থাকে?

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

মক্কার ফযীলত:

  • মক্কার মসজিদে হারামে নামায পড়া অন্যান্য সকল মসজিদের এক লক্ষ নামাযের চেয়ে উত্তম। তবে মসজিদে নববী ছাড়া, কেননা সেখানে এক নামায অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাযের সমান।
  • মক্কার বিশেষত্ব হলো: হজ্জ, উমরাহ, কাবাঘর তাওয়াফ, হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা।
  • আল্লাহ মক্কা নগরীর মাধ্যমে কসম করে বলেছেন: لَا أُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ  “আমি এই নগরীর শপথ করছি।”[সূরা বালাদ: ১]
  • আল্লাহ যেদিন আসমান-যমীন সৃষ্টি করেন, সেদিনই মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেন। মদিনার এই মর্যাদা নেই।
  • মদিনার পবিত্রতার চেয়ে মক্কার পবিত্রতা বেশি।

মদিনার ফযীলত:

  • হিজরতের ভূমি, মুহাজির-আনসারদের সম্মিলনস্থল ও জিহাদের ভূমি।
  • এই মদিনাতে অধিকাংশ শরয়ি বিধি-বিধান অবতীর্ণ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয় করেন, তখন তিনি সেখানে অবস্থান না করে মদিনায় তার হিজরতের ভূমিতে ফিরে যান। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে বসবাস করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
  • ইসলামের সূচনালগ্নে ও সমাপ্তিকালে মদিনাই মুসলিমদের সম্মিলনস্থল।
  • মদিনায় রয়েছে মসজিদে নববী এবং রিয়াদুল জান্নাত।
  • মদিনায় আছে আকীক উপত্যকা। যা একটি মুবারকময় উপত্যকা।
  • কোনো ব্যক্তি যদি মদিনার ক্ষতি করতে চায় আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন।
উত্তর

পৃথিবীর সর্বোত্তম ভূমি কোনটি?

এক:

ভূমির বিবেচনায় পৃথিবীর মাঝে সর্বোত্তম ভূমি হলো মক্কা, তারপর মদিনা। আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সেই নগরীতে বসবাস করা উত্তম যেখানে তার ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং যেখানে সে বেশি পরিমাণে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন:

‘প্রত্যেক মানুষের জন্য সর্বোত্তম যমীন হলো সেটা যেখানে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য বেশি করে করতে পারে। এটা অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হবে। মানুষ বসবাস করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ভূমি উত্তম নয়। বরং প্রত্যেক মানুষের জন্য উত্তম হবে তার তাকওয়া, আনুগত্য, খুশু-খুযূ এবং ইবাদতের মনোযোগ অনুসারে। আবুদ-দারদা (রাঃ) সালমানকে (রাঃ) উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখেন: ‘পবিত্র ভূমিতে চলে আস।’ সালমান (রাঃ) তাকে লেখেন: ‘কোনো ভূমি কাউকে পবিত্র করে না। বরং বান্দাকে তার আমল পবিত্র করে তোলে।’[মাজমুউল ফাতাওয়া (১৮/২৮৩) থেকে সমাপ্ত]

মক্কার ফযীলত

মদিনার তুলনায় মক্কা বেশ কিছু ফযীলতের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে, তন্মধ্যে উল্লেখ্য:

  • মক্কার মসজিদে হারামে নামায পড়া অন্যান্য সকল মসজিদের এক লক্ষ নামাযের চেয়ে উত্তম। তবে মসজিদে নববী ছাড়া, কেননা সেখানে এক নামায অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাযের সমান।
  • মক্কার বিশেষত্ব হলো: হজ্জ, উমরাহ, কাবাঘর তাওয়াফ, হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা।
  • আল্লাহ মক্কা নগরীর মাধ্যমে কসম করে বলেছেন: لَا أُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ  “আমি এই নগরীর শপথ করছি।” [সূরা বালাদ: ১] আয়াতে ‘লা’ বৃদ্ধি করা হয়েছে তাগিদ প্রদান করার জন্য।
  • আল্লাহ যেদিন আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিনই মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। মদিনার এই মর্যাদা নেই।
  • মদিনার পবিত্রতার চেয়ে মক্কার পবিত্রতা বেশি। শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘মদিনা পবিত্র। এর পবিত্র একটি এলাকা রয়েছে। কিন্তু এর পবিত্রতা মক্কার পবিত্রতার চেয়ে অনেক কম। মক্কার পবিত্র এলাকায় কোনো মুসলিম আসতে হলে, প্রথম বার কাউকে আসতে হলে অবশ্যই ইহরাম পরে আসতে হবে। কিন্তু মদিনায় এমনটি নয়। মক্কার হারামের ঘাস কাটা, গাছপালা কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু মদিনার হারামে চাষাবাদ ও অনুরূপ কাজের জন্য কিছু গাছে শিথিলতা রয়েছে। মক্কার হারামে শিকার করলে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। মদিনার হারামে শিকারে কোন ক্ষতিপূরণ নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সবচেয়ে নিরাপদ নগরী মক্কা। এমনকি এখানে গাছপালা ও শিকারের পশুও নিরাপদ।’[লিকাউল বাবিল মাফতূহ (২/১০৩) থেকে সমাপ্ত]

মদিনার ফযীলত:

  • হিজরতের ভূমি, মুহাজির-আনসারদের সম্মিলনস্থল ও জিহাদের ভূমি। এখান থেকেই বাহিনীগুলো যাত্রা করে। এই মদিনা থেকে যুদ্ধাভিযান পরিচালিত হয় এবং নানান দেশ বিজিত হয়। ইসলামের প্রসার ঘটে এবং শির্ক ও মুশরিকরা পরাস্ত হয়।
  • এই মদিনাতে অধিকাংশ শরয়ি বিধি-বিধান অবতীর্ণ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয় করেন তখন তিনি সেখানে অবস্থান না করে মদিনায় তার হিজরতের ভূমিতে ফিরে যান। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে বসবাস করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: মক্কা বিজয়ের সময়কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদেরকে গনীমতের সম্পদ দিলে (কিছু সংখ্যক) আনসার বলেছিলেন যে: ‘এ বড় আশ্চর্যের বিষয়। আমাদের তলোয়ার হতে কুরাইশদের রক্ত এখনও ঝরছে অথচ আমাদের গনীমতের সম্পদগুলো তাদেরকে দেয়া হচ্ছে ।’ এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি আনসারদেরকে ডেকে পাঠান। বর্ণনাকারী বলেন: তিনি বললেন: ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে যে কথাটি শুনতে পেলাম, সে কথাটি কী?’ যেহেতু তারা মিথ্যা কথা বলতেন না সেহেতু তাঁরা বলল: ‘আপনার নিকট যা পৌঁছেছে সেটাই।’ তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা গনীমতের মাল নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যাবে, আর তোমরা আল্লাহ্‌র রাসূলকে নিয়ে নিজ ঘরে ফিরবে। আনসারগণ যে উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে আমি সে উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়েই চলব।”[বুখারী (৩৭৭৮) ও মুসলিম (১০৫৯) বর্ণনা করেন]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি এমন এক জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সকল জনপদকে খেয়ে ফেলে। লোকেরা তাকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এটি হল মদিনা। এটি (অবাঞ্ছিত) লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনিভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়।”[বুখারী (১৮৭১) ও মুসলিম (১৩৮২)-তে বর্ণিত আছে:]

ইমাম নববী বলেন: ‘অন্য সকল জনপদকে খেয়ে ফেলে' এর অর্থ আলেমরা দুইভাবে করেছেন। এক: সূচনালগ্নে এটি ইসলামের বাহিনীসমূহের যাত্রার প্রাণকেন্দ্র ছিল। এখান থেকেই নগরীগুলো বিজিত হয়। সেই সমস্ত নগরীর ধন-সম্পদ ও বন্দিরা মদিনায় আসে। দুই: এর খাদ্য ও জীবনোপকরণ বিজিত নগরীসমূহ থেকে আসে। সেই নগরীগুলোর গনীমত এখানে নিয়ে আসা হয়।’[ইমাম নববীর শরহে মুসলিম (৯/১৫৪) থেকে সমাপ্ত]

বুখারী (১৮৭৬) ও মুসলিম (১৪৭) সংকলন করেন: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সাপ যেমনিভাবে তার গর্তে ফিরে আসে ঈমান তেমনিভাবে মদিনায় ফিরে আসে।”

  • সুতরাং ইসলামের সূচনালগ্নে ও সমাপ্তিকালে মদিনাই মুসলিমদের সম্মিলনস্থল।

ইমাম নববী বলেন: ‘মদিনায় ফিরে আসে' এর অর্থ হলো: সূচনায় ও সমাপ্তিতে ঈমান এই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবে। কারণ ইসলামের সূচনালগ্নে যাদের খাঁটি ঈমান ছিল, ইসলাম সঠিক ছিল তারা মদিনায় আসত। হয়তবা মুহাজির হিসেবে বসবাস করার জন্য, নতুবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখা, তার কাছ থেকে শেখা এবং তার সান্নিধ্য লাভ করার জন্য আসত। এরপর থেকে খলীফাদের যুগেও এমন ছিল। তাদের কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গত জীবনযাপন শেখা এবং অধিকাংশ সাহাবীর অনুসরণ করার জন্য মানুষজন আসত। তাদের পরে ছিলেন আলেমরা, যারা নিজ যুগের আলোকবর্তিকা এবং সৎপথের ইমাম। তাদের কাছ থেকে মদিনাতে বিস্তার লাভ করা সুন্নাহ গ্রহণ করা মানুষ তাদের কাছে আসতেন। এভাবে প্রত্যেক দৃঢ় ঈমানদার এবং ঈমানে উজ্জীবিত ব্যক্তি মদিনার উদ্দেশে সফর করতেন।’[ইমাম মুসলিমের শরহে নববী থেকে সমাপ্ত]

  • মদিনায় রয়েছে মসজিদে নববী এবং রিয়াদুল জান্নাত। বুখারী (১১৯৬) ও মুসলিম (১৩৯১) বর্ণনা করেন: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আমার ঘর ও মিম্বরের মাঝে আছে জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্য হতে একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাওযের উপর অবস্থিত।”
  • মদিনায় আছে আকীক উপত্যকা। এটি বরকতময় উপত্যকা। বুখারী (১৫৩৪) সংকলন করেছেন যে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন: তিনি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীক উপত্যকায় বলতে শুনেছি: “আজ রাতে আমার রবের পক্ষ থেকে আমার কাছে একজন আগন্তুক এসে বললেন: আপনি এই বরকতময় উপত্যকায় সালাত আদায় করুন এবং বলুন: (আমার এ ইহ্‌রাম) হজ্জের সাথে ‘উমরাহ’রও।” 
  • কোনো ব্যক্তি যদি মদিনার ক্ষতি করতে চায় আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন। সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: যে কেউ মদিনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র বা প্রতারণা করবে, সে এমনভাবে গলে যাবে, যেমনিভাবে লবণ পানিতে গলে যায়।”[বুখারী (১৮৭৭) -পাঠটি তার- বর্ণনা করেছেন এবং মুসলিম (১৩৬৩) বর্ণনা করেন]

সুতরাং আল্লাহ যাকে মক্কায় বসবাসের নিয়ামত প্রদান করেছেন তাকে অভিনন্দন। আল্লাহ যাকে মদিনায় বসবাসের নিয়ামত প্রদান করেছেন তাকে অভিনন্দন। আল্লাহর যে কোনো যমীনে আল্লাহ যাকে তাকওয়াসহ বসবাস করার নিয়ামত প্রদান করেছেন তাকেও অভিনন্দন।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
মক্কা ও মদিনার ফযীলত - ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব