এক:
ইতোপূর্বে 21958 নং প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে যে, চাকুরির কারণে নির্ধারিত ওয়াক্তের পরে নামায পড়া জায়েয নয়। মহান আল্লাহ বলেন:
رِجَالٌ لا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْماً تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالأَبْصَارُ * لِيَجْزِيَهُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
“এমন লোকেরা যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে ও যাকাত দেওয়া থেকে বিরত রাখে না। তারা সেই দিনটিকে (কেয়ামতের দিনকে) ভয় করে যখন (মানুষের) অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ ওলটপালট (বিপর্যস্ত) হয়ে যাবে।” (তারা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে) যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কাজের সেরা প্রতিদান দেন এবং স্বীয় অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে আরো বেশি দান করেন। আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে জীবিকা দান করেন।”[সূরা নূর: ৩৭-৩৮]
সুতরাং আপনার করণীয় হলো চাকুরির ডিউটি টাইমকে এমনভাবে বিন্যাস করা যাতে করে ওয়াক্তমত নামায আদায়ের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা এবং উপযুক্ত সমাধান বের করা; যদিও এতে করে আপনাকে কিছু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়, যেমন: ডিউটি টাইম বেড়ে যাওয়া। জেনে রাখবেন, যথাসময়ে নামায আদায় করা এবং নামাযের পাবন্দি করার মাধ্যমে আপনার অন্তরে ঈমানের যে বৃদ্ধি ঘটবে তা আপনি যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হবেন সেটার উত্তম বদলা হবে। বরং সেই প্রতিকূলতা স্বাদে রূপ নিবে ইনশাআল্লাহ। কারণ আপনি আল্লাহর রাস্তায় এবং তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এই প্রতিকূলতা সহ্য করছেন।
দুই:
নামায ছুটে গেলে এবং ওয়াক্তের বাইরে নামায পড়লে প্রশ্নকর্তা যে মনে দুঃখ পান, তা প্রশংসনীয় বিষয়। মুমিনের এমনটি হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কোনো নেক আমল ছুটে গেলে সে দুঃখ পাবে। কিন্তু করণীয় হলো এই দুঃখ যেন আপনাকে কর্ম সংশোধন এবং কর্মের ঘাটতি পরিহারের দিকে ধাবিত করে। হৃদয়ে দুঃখ থাকার পরও নামাযে অবহেলা এবং আমলে ত্রুটি থেকে যাওয়া অনুচিত।
তিন:
আপনি বলেছেন যে ‘আপনার ডিউটি শুরু হওয়ার আগে কিংবা পরে আপনি আসর ও মাগরিবের নামায একত্রে পড়েন’।
প্রিয় ভাই! জেনে রাখুন, শরীয়তে যোহরের নামাযের সাথে আসরের নামায এবং মাগরিবের নামাযের সাথে এশার নামায একত্রে পড়ার বিধান উদ্ধৃত হয়েছে। শরীয়তে কেবল এই ধরনের একত্রীকরণ সাব্যস্ত। কিন্তু আসরের সাথে মাগরিবের নামায একত্রে পড়ার বিষয়টি শরীয়তে উদ্ধৃত হয়নি, এভাবে নামায আদায় করা সঠিক নয়। এ কথা কোনো আলেম বলেননি। সুতরাং আপনি সূর্যাস্তের পরে আসরের সাথে মাগরিবের নামায একত্রিত করার মাধ্যমে আসরের নামাযকে ওয়াক্তের পরে আদায় করে যে ভুল করেছেন এর জন্য আপনার উপর ওয়াজিব: তাওবা করা এবং এই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া যে আর কখনো এমনটি করবেন না।
অন্যদিকে মাগরিবের ওয়াক্ত প্রবেশ করার আগে তথা সূর্য ডোবার আগে আসর ও মাগরিবের নামায একত্রে পড়ার যে বিষয়টি আপনার পক্ষ থেকে ঘটেছে সে ব্যাপারেও জেনে রাখুন যে, ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায পড়া সঠিক নয়। তাই আপনার মাগরিবের নামায সঠিক হয়নি। অতএব, আপনার উপর ওয়াজিব হলো: ওয়াক্ত হওয়ার আগে আপনি যে সকল মাগরিবের নামায পড়েছিলেন সেগুলোর সংখ্যা গণনা করা। সংখ্যা নির্ধারণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আপনার নিজের জন্য ও নিজের দ্বীনদারির জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন। সন্দেহ হলে সর্বোচ্চ সংখ্যাটি গ্রহণ করুন। তারপর আপনার সাধ্যমত যত দ্রুত সম্ভব হয় এই নামাযগুলো পুনরায় পড়ুন।
চার:
এই সমস্যা সমাধানে আপনাকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নামায পড়তে দশ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। আপনি কর্তৃপক্ষের সাথে এই ব্যাপারে একমত হতে পারেন যে ডিউটি টাইম শুরুর আগে কিংবা পরে আপনি এই সময়ের পরিবর্তে অতিরিক্ত সময় ক্ষতিপূরণ দিবেন। মাত্র দশ মিনিটের জন্য আপনি অনুমতি চাইতে পারবেন না; এমনটি অকল্পনীয়। আপনি যদি টয়লেটে যেতে চান তাহলে নিশ্চয় তারা আপনাকে নিষেধ করবে না। যদিও টয়লেটে এ রকম সময় বা এর চেয়েও বেশি সময় লাগতে পারে। আপনাদের দেশে এমন আইন-কানুন থাকতে পারে যা সংখ্যালঘুদেরকে তাদের ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের অধিকার দেয় এবং প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরকে তাদের কর্মচারীদের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাধ্য করে। এ ধরনের আইন-কানুন আপনাদের ওখানে থাকতে পারে যার দ্বারা আপনি আপনার অধিকার চাইতে পারেন।
যদি আপনার জন্য সব রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং কর্তৃপক্ষের সাথে এ ব্যাপারে সমাধানে পৌঁছতে না পারেন, তাহলে আপনি অন্য কোনো চাকুরি খুঁজুন যা আপনার নামায পড়ার সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। যদি সেটি না পান এবং এই চাকুরি ছেড়ে দিলে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হন তাহলে আশা করা যায় যে এটি এমন প্রয়োজন যার কারণে একত্রে নামায পড়া আপনার জন্য বৈধ হবে এবং তাতে কোনো সমস্যা হবে না, ইনশাআল্লাহ।
আপনি যোহর ও আসর একত্রে পড়তে পারেন। হয় অগ্রিম একত্রিতকরণ পদ্ধতিতে নতুবা বিলম্বে একত্রিতকরণ পদ্ধতিতে। কিংবা আপনি মাগরিব ও এশার নামায একত্রে পড়তে পারেন। হয় অগ্রিম একত্রিতকরণ পদ্ধতিতে নতুবা বিলম্বে একত্রিতকরণ পদ্ধতিতে। আপনার জন্য যেটি সহজ হয় সেটি করবেন।
অগ্রিম একত্রিতকরণ মানে হলো: দুই নামাযের মধ্যে প্রথমটির ওয়াক্তে উভয়টি পড়া। আর বিলম্বে একত্রিতকরণ মানে হলো: দুই নামাযের মধ্যে দ্বিতীয়টির ওয়াক্তে উভয়টি পড়া।
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদেরকে দ্বীনের বুঝ দান করেন, উত্তম কথা ও উত্তম আমলের তৌফিক দেন এবং আপনার জন্য পরিস্থিতিকে সহজ করে দেন।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।