সহিহ সুন্নাহ-তে রিযিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কোনো নামাযের অস্তিত্ব নেই। প্রশ্নে দোয়াসহ যে নামাযের বিবরণ দেওয়া হয়েছে সেটি বিদআতী নামায। এটি আল্লাহর দ্বীনে এমন কিছু প্রবর্তন করা যার অনুমতি তিনি প্রদান করেননি। এটি নব উদ্ভাবিত নিষিদ্ধ বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। রিযিক বৃদ্ধির বেশ কিছু শরয়ি উপায় রয়েছে আমরা এখানে সেগুলোর ইঙ্গিত ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করাটা শ্রেয় মনে করছি। যেমন: ইস্তিগফার করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, তাকওয়া অবলম্বন করা, বেশি বেশি দান করা ও বেশি বেশি হজ্জ-উমরাহ করা, উভয়টি একের পর এক করতে থাকা।
রিযিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কোনো নামায আছে কি?
প্রশ্ন: 190097
আপনি দুই রাকাত নামায পড়বেন যার প্রতি রাকাতে একবার সূরা ফাতিহা, একবার সূরা ইখলাস পড়বেন, রুকু-সিজদা লম্বা করবেন এবং নামায শেষ হওয়ার পরে বলবেন: ইয়া মাজেদ (হে মহিমান্বিত), ইয়া ওয়াহেদ (হে একক), ইয়া কারীম (হে সম্মানিত)! আমি আপনার নবী এবং রহমতের নবী মুহাম্মাদের মাধ্যমে আপনার অভিমুখী হচ্ছি। হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার মাধ্যমে আল্লাহর অভিমুখী হচ্ছি যিনি আমার রব, আপনার রব এবং সকল কিছুর রব। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনি মুহাম্মাদ ও তার পরিবারবর্গের উপর রহমত অবতীর্ণ করেন। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনার রহমতের ফল্গুধারা, সহজ মুক্তি কামনা ও এমন প্রশস্ত রিযিক; যার মাধ্যমে আমার বিক্ষিপ্ত অবস্থাকে একত্রিত করতে পারব, আমার ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হবো এবং আমার পরিবারের খরচের ক্ষেত্রে এর সহায়তা নিতে পারব।
উত্তরের সার-সংক্ষেপ
উত্তর
বিষয়সূচী
রিযিক বৃদ্ধির বিশেষ কোনো নামায আছে কি?
সহিহ সুন্নাহ-তে রিযিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কোনো নামাযের অস্তিত্ব নেই। প্রশ্নে দোয়াসহ যে নামাযের বিবরণ দেওয়া হয়েছে সেটি বিদআতী নামায। এটি আল্লাহর দ্বীনে এমন কিছু প্রবর্তন করা যার অনুমতি তিনি প্রদান করেননি। এটি নব-উদ্ভাবিত নিষিদ্ধ বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
হাফেয ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘সাহাবীদের থেকে সাব্যস্ত নয় এমন প্রতিটি কথা ও কাজকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামায়াত বিদ’আত হিসেবে গণ্য করেন। কারণ যদি এটি উত্তম কাজ হত তাহলে তারা আমাদের আগেই এটি করতেন। কল্যাণকর এমন কোনো কাজ নেই যেটির ক্ষেত্রে তারা অগ্রগামী হয়নি।’[তাফসীর ইবন কাসীর (৭/২৭৮-২৭৯)]
শাইখ সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বলেন: “বর্তমান যুগে উদ্ভাবিত বিদাতের সংখ্যা অনেক। ইবাদতের ক্ষেত্রে মূল অবস্থা হচ্ছে সেটি তাওক্বীফী তথা (শরীয়ত কর্তৃক) নির্ধারিত। সুতরাং দলীল ছাড়া কোনো ইবাদতের বিধান জারী করা জায়েয নয়। আর যে ব্যাপারে কোনো দলীল নেই সেটি বিদআত। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করে যার ব্যাপারে আমার কোনো নির্দেশনা নেই, সে প্রত্যাখ্যাত।’[হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন] বর্তমানে দলীল-বিহীন প্রচলিত ইবাদতের সংখ্যা অনেক।...”[সমাপ্ত][কিতাবুত তাওহীদ (পৃ. ১৬০)]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার বিধান
বিদআতী এই নামাযের পর দোয়ার মধ্যে এ কথাটি বলা: ‘আমি আপনার নবী এবং রহমতের নবী মুহাম্মাদের মাধ্যমে আপনার অভিমুখী হচ্ছি। হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার মাধ্যমে আল্লাহর অভিমুখী হচ্ছি ...’ এ ধরনের কথা বলা জায়েয নেই। এটি নিষিদ্ধ বিদআতী মাধ্যম গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত।
শরীয়তসম্মত ওসীলা ও বিদআতী ওসীলা সম্পর্কে জানার জন্য "শরীয়তসম্মত ওসীলা ও বিদআতী ওসীলা" শীর্ষক (3297) নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে তার কাছে কিংবা অন্য কোনো মৃত ব্যক্তির কাছে ক্ষতি প্রতিহত করা অথবা কল্যাণ লাভের জন্য প্রার্থনা করে সে বড় শির্কে লিপ্ত হয়, যা তাকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। এর জন্য তাকে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে।
রিযিক বৃদ্ধির শরিয়তসম্মত উপায়সমূহ
রিযিক বৃদ্ধির বেশ কিছু বৈধ উপায় রয়েছে, সেগুলোর প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করাটা আমরা শ্রেয় মনে করছি; যাতে করে শরয়ি মাধ্যমসমূহ গ্রহণ করা যায় এবং দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত থেকে সতর্ক থাকা যায়। এ উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ইস্তেগফার করা (ক্ষমা প্রার্থনা):
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا * يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا * وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا
“আমি (তাদেরকে) বলেছি: তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন; ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা ও নদ-নদী বানিয়ে দিবেন।”[সূরা নূহ: ১০-১২]
- আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা:
বুখারী (২০৬৭) ও মুসলিমে (২৫৫৭) বর্ণিত আছে: আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা প্রশস্ত করা হোক অথবা তার মৃত্যুকাল পিছিয়ে দেয়া হোক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে।”
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন: ‘জীবিকা প্রশস্ত হওয়ার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। কেউ কেউ বলেন: তাতে বরকত আসা।’[সমাপ্ত]
- বেশি বেশি দান-সদকা করা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
“বলো: আমার প্রভু তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা করেন জীবিকা বাড়িয়ে দেন ও (যার জন্য ইচ্ছা করেন তা) সীমিত করেন। তোমরা (আল্লাহর রাস্তায়) যা কিছু ব্যয় করো তিনি এর প্রতিস্থাপন করেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।”[সূরা সাবা: ৩৯]
মুসলিম (২৫৮৮) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘দান-সদকা কোনো সম্পদ হ্রাস করে না।”
নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘তারা এর দুটি অর্থ উল্লেখ করেন: প্রথমটি হলো এর অর্থ দান করার ফলে সম্পদে বরকত হয়। অনিষ্ট প্রতিহত করা হয়। অপ্রকাশ্য বরকতের মাধ্যমে দৃশ্যমান ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। এটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এবং অভিজ্ঞতালব্ধ ব্যাপার। দ্বিতীয়টি হলো: যদিও বাহ্যিক আকৃতির দিক থেকে এটি হ্রাস পায় তবু এর থেকে ফলে প্রাপ্ত নেকী তার ঘাটতি পূরণ করে দেয়। বহুগুণে তা বৃদ্ধি করে দেয়।’[সমাপ্ত]
- মহান আল্লাহকে ভয় করা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا * وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“আর যে আল্লাহকে ভয় করা তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ করে দিবেন। আর তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা সে ধারণাও করে না।”[সূরা তালাক: ২-৩]
- বেশি বেশি হজ্জ ও উমরা করা এবং সেগুলো পরপর করা:
তিরমিযী (৮১০) বর্ণনা করেন: ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা হজ্জ ও উমরা পরপর করে যাবে। কেননা এ দুটি সেভাবে দারিদ্র্য ও পাপকে দূর করে দেয় যেভাবে কামারের হাপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়।”[হাদীসটি শাইখ আলবানী সহিহ বলে গণ্য করেন]
- দোয়া করা:
ইবনে মাজাহ (৯২৫) বর্ণনা করেন: উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায পড়ে সালাম ফেরানোর পরে বলতেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।”[হাদীসটি শাইখ আলবানী সহিহু ইবনে মাজাহ গ্রন্থে বিশুদ্ধ বলে গণ্য করেছেন]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব