এক:
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আপনাদের পরিস্থিতিগুলো সহজ করে দেন, আপনার বাবাকে সাহায্য করেন এবং আপনাদেরকে হালাল ও বরকতময় রিযিক প্রদান করেন। সহিহ সুন্নাহতে দুশ্চিন্তা দূর করা, বিপদ কেটে যাওয়া, ঋণ পরিশোধ করা এবং স্বচ্ছলতা অর্জনের জন্য বেশ কিছু দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এমন দোয়ার মধ্যে রয়েছে:
১- আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কোনো বান্দা দুঃখ-দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হলে যদি বলে:
اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي وَنُورَ صَدْرِي وَجِلَاءَ حُزْنِي وَذَهَابَ هَمِّي
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনার এক বান্দা ও এক বাঁদীর পুত্র। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে; আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকরী; আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায়পূর্ণ। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনার প্রতিটি নামের উসীলায়; যে নাম আপনি নিজের জন্য রেখেছেন অথবা আপনার সৃষ্টজীবের কাউকে শিখিয়েছেন অথবা আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা গায়েবী জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন— আপনি কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার দুঃখের অপসারণকারী ও দুশ্চিন্তা দূরকারী।’ তাহলে আল্লাহ তার দুঃখ-দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন এবং তদস্থলে তাকে মুক্তি প্রদান করবেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি এ দোয়াটি শিখব না? তিনি বললেন: অবশ্যই। যে ব্যক্তি এ দোয়াটি শুনবে তার করণীয় হলো এটি শিখে নেওয়া।”[মুসনাদে আহমদ (৩৭১২)। শাইখ আলবানী সহিহুত তারগীব ওয়াত-তারহীব গ্রন্থে হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন]
২- আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন যেন বিছানায় গেলে বলি:
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَرَبَّ الْأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا اللَّهُمَّ أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنَا مِنْ الْفَقْرِ
“হে আল্লাহ! হে আসমানের রব, যমিনের রব, মহান আরশের রব, আমাদের রব এবং সকল বস্তুর রব! হে শস্য-বীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী! হে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন নাযিলকারী! আমি প্রত্যেক এমন বস্তুর অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, যার মাথার অগ্রভাগের চুলগুচ্ছ আপনার হাতে (অর্থাৎ তার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে)। হে আল্লাহ! আপনিই প্রথম; আপনার পূর্বে কিছু নাই। আপনিই অন্ত; আপনার পরে কিছু নাই। আপনিই বিজয়ী; আপনার উপরে কিছু নাই। আপনিই গোপন; আপনার চেয়ে গোপন কিছু নাই। অতএব, আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আমাকে দারিদ্র থেকে স্বচ্ছল করে দিন।”[সহিহ মুসলিম (২৭১৩)]
৩- আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার এক মুকাতাব দাস (কিস্তিতে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের বিনিময়ে মুক্তি পেতে চুক্তিবদ্ধ দাস) তার কাছে এসে বলল: আমি আমার নির্ধারিত অর্থের পরিমাণ অর্জনে অক্ষম হয়ে গেছি, আমাকে সাহায্য করুন। তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দিবো না যেগুলো আমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন? সেই বাক্য পড়লে তোমার উপর যদি সীর পাহাড়ের মতো ঋণ থাকে, তাহলেও আল্লাহ সেটি তোমার পক্ষ থেকে আদায় করে দিবেন? তুমি বলবে:
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
হে আল্লাহ! আপনি হারামের বদলে হালালকে আমার জন্য যথেষ্ট করে দিন এবং আপনার অনুগ্রহ দিয়ে অন্য কারো মুখাপেক্ষিতা থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন।[হাদীসটি তিরমিযী (৩৫৬৩) বর্ণনা করেন। শাইখ আলবানী সহিহুত তিরমিযীতে এটিকে হাসান বলে গণ্য করেছেন]
মুকাতাবা অর্থ হচ্ছে: কোন দাস তার মনিবকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের অঙ্গীকার করা যাতে করে মনিব তাকে মুক্ত করে দেয়। আর সীর একটি পাহাড়ের নাম।
৪- ত্বাবারানী তার ‘মুজামুস সগীর’ গ্রন্থে আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন: আমি কি তোমাকে এমন দোয়া শিখিয়ে দিব না যেটি পড়লে তোমার উপর উহুদ পাহাড়ের সমান ঋণ থাকলেও আল্লাহ সেটি তোমার পক্ষ থেকে আদায় করে দিবেন? হে মুয়ায! তুমি বলবে:
اللّهُمَّ مالِكَ المُلْكَ تُؤتِي المُلْكَ مَنْ تَشاءُ وَتَنْزعُ المُلْكَ مِمَّنْ تَشاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إنَّكَ على كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ رَحْمنَ الدُّنْيا وَالآخِرَةِ وَرَحِيْمَهُما تُعْطِيْهِما مَنْ تَشاءُ وَتَمْنَعُ مِنْهُما مَنْ تَشاءُ اِرْحَمْني رَحْمَةً تُغْنِيني بها عَنْ رَحْمةِ مَنْ سِواكَ
‘হে আল্লাহ! হে রাজত্বের মালিক! আপনি যাকে চান রাজত্ব প্রদান করেন, আর যার কাছ থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন, আর যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন। আপনার হাতেই রয়েছে কল্যাণ। আপনি সবকিছু করতে সক্ষম। আপনি দুনিয়া ও আখিরাতের দয়াময় ও করুণাময়। আপনি যাকে ইচ্ছা এই দুটি থেকে তাকে প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা আপনি এই দুটি থেকে তাকে বঞ্চিত করেন। আমার প্রতি এমন অনুগ্রহ করুন যা আমাকে আপনি ছাড়া অন্য কারো অনুগ্রহ থেকে অমুখাপেক্ষী করে রাখবে।’[শাইখ আলবানী সহিহুত তারগীব ওয়াত-তারহীবে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]
৫- রিযিক অর্জনের অন্যতম উপকারী মাধ্যম হচ্ছে বেশি বেশি (ইস্তেগফার) ক্ষমাপ্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَاراً وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَاراً
“আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন; ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা ও নদ-নদী বানিয়ে দিবেন।”[সূরা নূহ: ১০-১২]
দুই:
এই দোয়াগুলোর কোনো দোয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করা বিদাত ও নব উদ্ভাবিত বিষয়। ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বক্তব্যে এসেছে:
‘ইবাদত ও যিকিরের ক্ষেত্রে মূল হুকুম হলো: তাওক্বীফী (কুরআন ও সুন্নাহর গণ্ডিতে থেমে যাওয়া) এবং আল্লাহর দেয়া বিধান (শরিয়ত) মোতাবেক ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে তাঁর ইবাদত না করা। অনুরূপভাবে এগুলোকে সাধারণ রাখা বা সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা, এর পদ্ধতি বর্ণনা করা ও এর সংখ্যা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও। আল্লাহ যে সব দোয়া, যিকির ও ইবাদতের বিধান দিয়েছেন, তবে সেগুলোকে বিশেষ কোন সময় বা সংখ্যা বা স্থান বা পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করেননি সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ পদ্ধতি বা সময় বা সংখ্যা মেনে চলা জায়েয নেই। বরং কুরআন-হাদিসে যেভাবে উদ্ধৃত হয়েছে আমরা ঠিক সেভাবে সাধারণভাবে সে ইবাদতগুলো পালন করব। আর বাচনিক দলিল বা কর্মগত দলিলের মাধ্যমে যেটির কোনো সময় বা সংখ্যা বা স্থান বা পদ্ধতি সাব্যস্ত হয়েছে আমরা ঐ ইবাদতকে তদনুযায়ী পালন করব।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায, শাইখ আব্দুর রায্যাক আফীফী, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন ক্বুউদ।’[মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ (২১/৫৩) এবং ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (৪/১৭৮)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।