আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আপনার ঈমান বৃদ্ধি করে দেন এবং আপনার অন্তরকে প্রশস্ত করে দেন।
আপনার প্রশ্নে দুটি জিজ্ঞাসা রয়েছে:
এক: মাথার চুল ছোট করার বিধান:
শাইখ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহু বলেন: ‘নারীর চুল ছোট করার ব্যাপারে কোনো আপত্তি রয়েছে বলে জানি না। তবে মাথা মুণ্ডন করা নিষিদ্ধ। আপনি আপনার মাথা মুণ্ডন করতে পারবেন না। তবে চুলের দৈর্ঘ্য ও আধিক্য থেকে কিছুটা কমিয়ে ফেলতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সেটা হতে হবে এমন উত্তম পন্থায় যাতে আপনি এবং আপনার স্বামী তুষ্ট থাকেন। আপনি তার সাথে চুল ছোট করার ব্যাপারে একমত হবেন। আর এক্ষেত্রে কোনো কাফের নারীর সাদৃশ্য গ্রহণ করা যাবে না। কেননা চুল লম্বা হলে ধোয়া ও আঁচড়ানোর মত কষ্টের কাজ করতে হয়। যদি চুলের পরিমাণ বেশি হয় এবং নারী চুলের কিয়দংশ দৈর্ঘ্য অথবা আধিক্যের কারণে ছোট করে তাহলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। অথবা যদি চুল ছোট করলে সুন্দর হয় যেটা তিনি এবং তার স্বামী পছন্দ করেন, তাহলে তাতে কোনো নিষেধ আছে বলে আমাদের জানা নেই। কিন্তু অসুস্থতা ছাড়া পুরোপুরি মাথা মুণ্ডন করা জায়েয নেই। আর আল্লাহই তৌফিকদাতা।’[সমাপ্ত][দেখুন: ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ (২/৫১৫)]
সহিহ মুসলিমে আবু সালামাহ ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত ... তিনি বলেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীরা তাদের চুল কাটতেন, এমনকি তা ‘ওয়াফরা’-র মত হয়ে যেত।’[হায়েয/৩২০] ওয়াফরা হচ্ছে চুলের এমন পরিমাণ যা কান অতিক্রম করে।
ইমাম নববী বলেন: ‘উক্ত হাদীসে নারীদের চুল ছোট করার বৈধতার প্রমাণ রয়েছে।’[সমাপ্ত]
কিন্তু চুল ছোট করার ক্ষেত্রে নারীরা যেন কাফের অথবা ফাসেক নারীদের অনুসরণ এড়িয়ে চলে।
শাইখ সালিহ আল-ফাওযান বলেন: ‘নারীর জন্য পেছনের চুল ছোট করে পাশের চুল লম্বা রেখে দেওয়া জায়েয নেই। কারণ এটি তার চুলের বিকৃতি ও অযথা কাজ; অথচ চুল তার সৌন্দর্যের অংশ। এতে করে কাফেরদের সাদৃশ্যও গ্রহণ করা হয়। এছাড়া নানান আকৃতিতে চুল ছোট করা এবং কাফের নারী অথবা প্রাণীর নামের কাটিং দেওয়া হারাম। যেমন: ‘ডায়ানা’ নামের এক কাফের নারীর নামের কাটিং দেওয়া। অথবা ‘সিংহ’ বা ‘ইঁদুর’ কাটিং দেওয়া। কারণ কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ এবং প্রাণীর সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম। তাছাড়া এটি চুলের অযথা বিকৃতি; অথচ চুল নারীর সৌন্দর্যের অংশ।’[ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমা (২/৫১৬-৫১৭)]
দুই: চেহারার চুল অপসারণ।
শাইখ মুহাম্মাদ আস-সালিহ ইবনে উছাইমীন বলেন:
‘যে চুল অস্বাভাবিক অর্থাৎ এমন স্থানে গজায় যেখানে সাধারণত গজায় না, যেমন নারীর গোঁফ ওঠা কিংবা গালে চুল গজানো; সেই চুল অপসারণ করতে কোনো আপত্তি নেই। কারণ এটি অস্বাভাবিক। এটি নারীর চেহারাকে বিকৃত করে।’[ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ (২/৫৩৬, ৫৩৭)]
নারীর জন্য চেহারার চুল অপসারণ করার বিধান সম্পর্কে ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তারা উত্তর দেন:
‘নারীর জন্য গোঁফ, উরুর চুল, দুই পায়ের নলা এবং দুই হাতের চুল দূর করতে কোনো আপত্তি নেই। এটি নিষিদ্ধ تنمص তথা ভ্রু-এর চুল অপসারণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে না।
আব্দুল আযীয ইবনে বায, আব্দুর রায্যাক আফীফী, আব্দুল্লাহ ইবনে গুদাইয়্যান, আব্দুল্লাহ ইবনে ক্বুউদ।’[ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দাইমাহ (৫/১৯৪, ১৯৫)]
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
নারীর জন্য নিজের শরীরের চুল অপসারণ করার বিধান কী? যদি জায়েয হয়ে থাকে তাহলে কার জন্য অপসারণের কাজটি করার অনুমতি আছে?
তাদের উত্তর দেন:
‘চোখের ভ্রু ও মাথার চুল ছাড়া অন্যান্য চুল অপসারণ করা জায়েয হবে। এই দুটি অপসারণ করা জায়েয নেই। দুই ভ্রুয়ের কোনো কিছু কামিয়ে ফেলা বা অন্য কিছু করা বৈধ নয়। কোন নারী নিজেই সেটা করতে পারবেন কিংবা তার স্বামী। কিংবা তার মাহরাম কেউ করতে পারবেন; তবে ঐ মাহরামের জন্য তার শরীরের যে অংশটুকু দেখা বৈধ সেই অংশের। কিংবা অন্য কোনো নারীও কাজটি করতে পারেন, তবে সেই নারীর জন্য শরীরের যে অংশটুকু দেখার বৈধতা আছে সেই অংশের কাজটি করবেন।
আব্দুল আযীয ইবনে বায, আব্দুর রায্যাক আফীফী, আব্দুল্লাহ ইবনে গুদাইয়্যান, আব্দুল্লাহ ইবনে ক্বুউদ।’[ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দাইমাহ (৫/১৯৪)]
লজ্জাস্থানের চুল ও উরুর চুল অন্য কোনো নারী বা মাহরাম কারো জন্য দেখা জায়েয নেই।
নারীর জন্য দুই ভ্রুয়ের চুল কিংবা এর কিয়দংশ অপসারণ করা হারাম; সেটি কামিয়ে ফেলা কিংবা ছোট করা কিংবা পুরোপুরি বা আংশিক দূর করে এমন কোনো পদার্থ ব্যবহার করা; যেভাবেই হোক না কেন। কারণ এটাই হলো النمص (নামছ); যাতে লিপ্ত নারীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন...। نامصة (নামিছা) বলা হয় এমন নারীকে যে তার ধারণায় সৌন্দর্যচর্চা হিসেবে ভ্রুয়ের চুল পুরোপুরি বা আংশিক অপসারণ করে ফেলেন। আর متنمصة (মুতানাম্মিসাহ) হলেন ঐ নারী যার ভ্রুর চুল অপসারণ করা হয়। এটি আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার অন্তর্ভুক্ত; আদম সন্তানকে দিয়ে যা করানোর ব্যাপারে শয়তান অঙ্গিকার করেছে...।’
দেখুন: আল-ফাতাওয়া আল-জামি’আহ লিল-মারআতিল মুসলিমাহ (৩/৮৭৭-৮৭৯)।