সংরক্ষণ করুন
  • New List
আরও
    সংরক্ষণ করুন
    • New List
116/মুহাররম/1447 , 11/জুলাই/2025

নামাযের মধ্যে নড়াচড়া

প্রশ্ন: 12683

কিছু মানুষ নামায পড়া অবস্থায় অযথা জামাকাপড় নাড়ে, নখ পরিষ্কার করে, ঘড়ির দিকে তাকায় কিংবা আরো বিভিন্ন কাজ করে। বিশেষতঃ ইমাম যখন ক্বিরাত পড়েন। এতে করে অনেক সময় পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর মাঝে অস্বস্তি ও অস্থিরতার সঞ্চার হয়। এর হুকুম কী?

উত্তর

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন যে প্রয়োজন ছাড়া নামাযে নড়াচড়া করার মূলবিধান মাকরূহ। তবে এই নড়াচড়া পাঁচ ভাগে বিভক্ত:

প্রথম প্রকার: ওয়াজিব নড়াচড়া

দ্বিতীয় প্রকার: হারাম নড়াচড়া

তৃতীয় প্রকার: মাকরূহ নড়াচড়া

চতুর্থ প্রকার: মুস্তাহাব নড়াচড়া

পঞ্চম প্রকার: জায়েয নড়াচড়া

ওয়াজিব নড়াচড়া:

যে নড়াচড়ার উপর নামাযের বিশুদ্ধতা নির্ভর করে। যেমন: (নামায শুরু করার পর) সে যদি তার মাথার রুমালে নাপাকি দেখতে পায় তাহলে সেটি খুলে ফেলার জন্য নড়াচড়া করা ওয়াজিব। এর দলীল হচ্ছে: একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জুতা পায়ে) নামাযের ইমামতি করছিলেন। এমন সময়ে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে তাঁকে সংবাদ দিলেন, তাঁর জুতায় নাপাকী রয়েছে। তিনি নামায পড়া অবস্থাতেই জুতা খুলে ফেললেন এবং নামায চালিয়ে গেলেন।[হাদীসটি আবু দাউদ (৬৫০) বর্ণনা করেন আর শাইখ আলবানী ইরওয়া গ্রন্থে (২৮৪) এটিকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন]

অনুরূপভাবে কেউ যদি তাকে জানায় যে সে কিবলার দিকে নয়; অন্য দিকে মুখ করে আছে, তাহলে তার জন্য কিবলার দিকে মুখ ফেরানো ওয়াজিব।

হারাম নড়াচড়া:

প্রয়োজন ছাড়া লাগাতার অধিক পরিমাণে নড়াচড়া করা। কারণ এ ধরনের নড়াচড়া নামায বিনষ্ট করে দেয়। আর যা নামায নষ্ট করে দেয় তা করা জায়েয নেই। কারণ এটি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার নামান্তর।

মুস্তাহাব নড়াচড়া:

নামাযে মুস্তাহাব কিছু করার জন্য নড়াচড়া করা। যেমন: কাতার সোজা করার জন্য নড়াচড়া করা। নামাযরত অবস্থায় সামনের কাতারে ফাঁকা স্থান দেখতে পেয়ে সেটি পূর্ণ করার জন্য সামনের কাতারে চলে যাওয়া অথবা কাতারে ফাঁকা স্থান সৃষ্টি হলে সেটি পূরণ করতে নড়াচড়া করা। এ ধরণের অন্য যে কোন নড়াচড়া যার মাধ্যমে নামাযের কোন একটি মুস্তাহাব আমল সম্পাদিত হয়। কারণ এই নড়াচড়া নামাযকে পরিপূর্ণ করার জন্য। তাই ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামায পড়ছিলেন তখন তিনি বামপাশে দাঁড়ালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথা ধরে তাকে পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে ডানপাশে নিয়ে এলেন।[বুখারী ও মুসলিম]

জায়েয নড়াচড়া :

আর এটি হলো প্রয়োজনে সামান্য নড়াচড়া অথবা জরুরী কারণে বেশি নড়াচড়া করা। প্রয়োজনে সামান্য নড়াচড়ার উদাহরণ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমামা বিনতে যাইনাব বিনতে রাসূলুল্লাহকে বহন করে নামায পড়তেন। তিনি উমামার নানা ছিলেন। দাঁড়ানো অবস্থায় তিনি তাকে বহন করতেন। আর সিজদায় গেলে তাকে নামিয়ে রাখতেন।[হাদীসটি বুখারী (৫৯৯৬) ও মুসলিম (৫৪৩) বর্ণনা করেন]

আর জরুরী কারণে বেশি নড়াচড়ার উদাহরণ হলো যুদ্ধরত অবস্থায় নামায পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন:

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ* فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالاً أَوْ رُكْبَاناً فَإِذَا أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ

“তোমরা নামাযের প্রতি যত্নবান হবে; বিশেষতঃ মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। তোমরা যদি ভয় করো তাহলে হেঁটে কিংবা আরোহী অবস্থায় নামায আদায় করবে। যখনই নিরাপদ হবে তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করবে ঠিক যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন, যা তোমরা পূর্বে জানতে না।”[সূরা বাকারা: ২৩৮-২৩৯]

হেঁটে নামায পড়া নিঃসন্দেহে নামাযে বেশি নড়াচড়ার অন্তর্ভুক্ত। তবে সেটি জরুরী প্রয়োজনের কারণে হওয়ায় বৈধ এবং এতে নামায বাতিল হবে না।

মাকরূহ নড়াচড়া

উপর্যুক্ত নড়াচড়া ছাড়া সব ধরনের নড়াচড়া মাকরূহ। নামাযে নড়াচড়ার এটাই মূল বিধান। সুতরাং যারা নামাযে নড়াচড়া করে তাদেরকে আমরা বলব: আপনাদের কাজটি মাকরূহ তথা অপছন্দনীয়। এটি আপনাদের নামাযে ঘাটতি সৃষ্টি করে। এমনটি প্রত্যেকের মাঝে দেখা যায়। দেখবেন কেউ তার ঘড়ি নিয়ে, কলম নিয়ে, মাথার রুমাল নিয়ে, নাক নিয়ে, দাড়ি নিয়ে বা এরূপ অন্য কিছু নিয়ে অযথা খেলতামাশা করছেন। এগুলো সবই অপছন্দনীয় নড়াচড়ার অন্তর্ভুক্ত। তবে যদি লাগাতার ও অতিরিক্ত হয়ে যায় তাহলে সেটি হারাম হবে এবং নামাযকে নষ্ট করে দিবে।

এছাড়া তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে নামাযকে বাতিলকারী নড়াচড়ার কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। বরং সেটা এমন নড়াচড়া যা নামাযের পরিপন্থী। যে নড়াচড়া দেখলে মনে হবে এই ব্যক্তি নামাযে নেই। এ ধরণের নড়াচড়া নামাযকে বাতিল করে দেয়। তাই আলেমরা উরফ তথা প্রথার মাধ্যমে বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন। তারা বলেছেন: ‘নড়াচড়া বেশি পরিমাণে এবং লাগাতার হলে নামায বাতিল হয়ে যায়।’ তারা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেননি। কিছু আলেমগণ যে, এটাকে ‘তিন’ সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করেছেন এর পক্ষে দলীল প্রয়োজন। কারণ যে কেউ কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নির্দিষ্ট ধরন নির্ধারণ করলে এর সপক্ষে দলীল প্রদান করা তার উপর আবশ্যক। নতুবা সে আল্লাহর শরীয়তে স্বেচ্ছাচারিতাকারী বলে গণ্য হবে।[মাজমুউ ফাতাওয়াশ শাইখ (১৩/৩০৯-৩১১)]

শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহুকে নামাযে বেশি বেশি নড়াচড়া করে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তার নামায বাতিল হয়ে যাবে কিনা? এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?

তিনি উত্তর দেন:

‘মুমিনের জন্য সুন্নাহ হলো নামাযে শরীর ও মন নিয়ে প্রবেশ করা; হোক সেটা ফরয নামায কিংবা নফল নামায। কারণ আল্লাহ বলেছেন:

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ * الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاتِهِمْ خَاشِعُون

“অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা তাদের নামাযে বিনয়াবনত।”[সূরা মুমিনূন: ১-২] তার উচিত নামাযে প্রশান্ত ও স্থির হওয়া। কারণ এই স্থিরতা নামাযের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ও ফরয কাজ। যে ব্যক্তি ধীরস্থিরতা ছাড়া নামায পড়েছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন: “তুমি ফিরে গিয়ে নামায পড়ো; কারণ তুমি নামায পড়োনি।” তিনি এই কথা তিন বার বলেছিলেন। লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার শপথ: আমি এর চেয়ে ভালোভাবে নামায পড়তে জানি না। আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন তুমি নামাযে দাঁড়ানোর ইচ্ছা করবে তখন প্রথমে তুমি পূর্ণভাবে অযু করবে। তারপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যতটুকু তেলাওয়াত করা তোমার পক্ষে সহজ হয় তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকূ করবে এবং রুকুতে গিয়ে স্থির হবে। তারপর মাথা উঠাবে এবং ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদাহ করবে এবং সিজদায় গিয়ে স্থির হবে। তারপর আবার মাথা তুলবে এবং স্থিরভাবে বসবে। এরপর আবার সিজদা দিবে এবং সিজদায় গিয়ে স্থির হবে। এরপর উঠে গিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর ঠিক এভাবেই তোমার নামাযের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবে।”[হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন। আবু দাউদের বর্ণনায় আছে: ‘তারপর ফাতিহা এবং আল্লাহ যতটুকু চান ততটুকু তেলাওয়াত করবে’]

এই সহিহ হাদীস প্রমাণ করে যে ধীরস্থিরতা নামাযের স্তম্ভ ও গুরুত্বপূর্ণ ফরয। এটি ছাড়া নামায শুদ্ধ হয় না। যে ব্যক্তি নামাযে ঠোকর দেয় তার নামায হয় না। নামাযে খুশু-খুযু নামাযের সারবস্তু ও প্রাণ। সুতরাং মুমিনের উচিত এটাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং এ ব্যাপারে সচেতন থাকা।

তবে ধীরস্থিরতা ও মনোযোগ নষ্টকারী নড়াচড়াকে তিন সংখ্যাতে সীমাবদ্ধ করা এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীস নেই। এটি কিছু আলেমের বক্তব্য। এর পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল নেই।

তবে নামাযে অনর্থক কাজ করা মাকরূহ। যেমন: নাক, দাড়ি, কাপড়-চোপড় নাড়াচাড়া করা এবং তা নিয়ে ব্যস্ত থাকা। অনর্থক কাজ বেশি হলে নামায বাতিল হয়ে যায়। আর যদি কম পরিমাণে হয় অথবা বেশি হলেও লাগাতার না হয় তাহলে নামায বাতিল হয় না। তবে মুমিনের উচিত খুশু-খুযু রক্ষা করা এবং কম হোক বা বেশি হোক অনর্থক কাজ ছেড়ে দেওয়া; নামায পরিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে।

অল্প কাজে, সামান্য নড়াচড়ায় বা বিচ্ছিন্ন নড়াচড়ায় যে নামায বাতিল হয় না এর দলীল হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস: তিনি একদিন নামাযরত অবস্থায় আয়েশার জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলেন।[আবু দাউদ (৯২২), নাসাঈ (৩/১১), তিরমিযী (৬০১)। শাইখ আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে (৬০১) হাদীসটি হাসান বলেছেন]

আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, একদিন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষদের নিয়ে নামায পড়ার সময়ে তার মেয়ের মেয়ে (নাতনি) উমামা বিনতে যাইনাবকে বহন করেছিলেন। সিজদায় গেলে নামিয়ে রাখতেন, আর উঠে দাঁড়ালে বহন করতেন।[ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম ১৬২-১৬৪]

সূত্র

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

টেক্সট ফরম্যাটিং অপশন

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android