বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

কাযা (ভাগ্য) ও তাকদীর (নিয়তি) এর প্রতি ঈমান

প্রশ্ন

ইসলামে ধৈর্যের মর্যাদা। কোন কোন ক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

কাযা (ভাগ্য) ও তাকদীর (নিয়তি)- এর প্রতি ঈমান ঈমানের অন্যতম একটি রোকন (মূলস্তম্ভ)। কোন মুসলিমের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে বিশ্বাস করে যে, যা ঘটেছে সেটা ঘটতই ঘটত। আর যা ঘটেনি সেটা কিছুতেই ঘটত না। এই বিশ্বাস করে যে, সবকিছু আল্লাহ্‌র কাযা ও তাকদীর অনুযায়ী ঘটে থাকে। যেমনটি আল্লাহ্‌ বলেছেন: “আমি প্রত্যেক বস্তুকে তাকদীর অনুযায়ী সৃষ্টি করেছি।”[সূরা ক্বামার, আয়াত: ৪৯]

আর ঈমানের সাথে ধৈর্যের সম্পর্ক মাথার সাথে যেমন দেহের সম্পর্ক। ধৈর্য একটি মহৎ গুণ। যার প্রতিফল প্রশংসিত। ধৈর্যধারণকারীগণ বিনা হিসাবে তাদের প্রতিফল গ্রহণ করবেন। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “ধৈর্যশীলদেরকেই তো তাদের পুরস্কার পূর্ণরূপে দেয়া হবে বিনা হিসাবে।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৯]

এই জমিনে, কিংবা নিজের জানের উপর, কিংবা সম্পদের উপর, কিংবা পরিবার-পরিজনের উপর কিংবা অন্য যা কিছুর উপর যত ধরণের বিপদ-আপদ ঘটে, ফিতনা-ফাসাদ আপতিত হয় আল্লাহ্‌ তাআলা সেসব ঘটার আগেই সে সম্পর্কে জানেন এবং সেটা তিনি লওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন। যেমনটি তিনি বলেছেন: “পৃথিবীতে ও তোমাদের জানের উপর যে বিপদই আসুক না কেন আমরা তা সৃষ্টি করার আগেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।”[সূরা হাদীদ, আয়াত: ২২] 

মানুষ যেসব মুসিবতের শিকার হয় সেটা তার জন্য মঙ্গলজনক সে তা জানতে পারুক বা না পারুক। কেননা আল্লাহ্‌ যা তাকদীর বা নির্ধারণ করেছেন সেটা মঙ্গল ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ্‌ বলেন: “আপনি বলুন, আমাদেরকে কোন কিছুই আক্রান্ত করবে না, কিন্তু আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন সেটা ছাড়া; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। অতএব, মুমিনদের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।”।[সূরা তওবা, আয়াত: ৫১]

যে মুসিবত ঘটে সেটা আল্লাহ্‌র অনুমতি সাপেক্ষেই ঘটে। আল্লাহ্‌ না চাইলে সেটা ঘটত না। কিন্তু, আল্লাহ্‌ অনুমতি দিয়েছেন, নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই সেটা ঘটেছে। আল্লাহ্‌ বলেন:  “আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ্‌ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।”[সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১১]

অতএব, বান্দা যখন জানল যে, সকল মুসিবত আল্লাহ্‌র নির্ধারণ অনুযায়ী ঘটে সুতরাং বান্দার আবশ্যকীয় কর্তব্য সেই ঈমান রাখা, মেনে নেওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা। যেহেতু ধৈর্যের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “আর তারা যে ধৈর্যধারণ করেছিল তার পরিণামে তিনি তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী বস্ত্রের পুরস্কার প্রদান করবেন।”[সূরা ইনসান, আয়াত: ১২]

আল্লাহ্‌র পথে দাওয়াত দান এক মহান মিশন। যে ব্যক্তি দাওয়াতী কাজে তৎপর থাকে তাকে নানারকম কষ্ট ও বিপদ-মুসিবতের শিকার হতে হয়। এ কারণে আল্লাহ্‌ অন্য নবীদের মত তাঁর রাসূলকেও ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: “যেভাবে উলুল-আযম রাসূলগণ ধৈর্য ধারণ করেছেন আপনিও সেভাবে ধৈর্যধারণ করুন”[সূরা আহক্বাফ, আয়াত: ৩৫]

আল্লাহ্‌ তাআলা ঈমানদারদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যদি কোন বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয় কিংবা তাদের কোন মুসিবত ঘটে যায় তাহলে তারা যেন ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করে; যাতে করে আল্লাহ্‌ তাদের দুশ্চিন্তা দূর করে দেন এবং দ্রুত তাদেরকে মুক্ত করে দেন। “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩]

আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন দুর্ঘটনা, আল্লাহ্‌র ইবাদত ও আল্লাহ্‌র অবাধ্য না হওয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের উপর ফরয। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তাকে বিনা হিসাবে পুরস্কার দিবেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “ধৈর্যশীলদেরকেই তো তাদের পুরস্কার পূর্ণরূপে দেয়া হবে বিনা হিসাবে।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৯]

মুমিন তার খুশি ও দুঃখ উভয় অবস্থাতেই পুরস্কার পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মুমিনের বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর। তার সর্ব বিষয়ই কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। যদি খুশির কিছু ঘটে তখন সে শুকরিয়া আদায় করে। আর যদি দুঃখের কিছু ঘটে তখন সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে যেটাই ঘটুক সেটা তার জন্য কল্যাণকর।”[সহিহ মুসলিম (২৯৯৯)]

বিপদকালে আমাদেরকে কী বলতে হবে সে বিষয়েও আল্লাহ্‌ আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এবং জানিয়েছেন যে, ধৈর্যধারণকারীদের জন্য তাদের রবের কাছে উন্নত মর্যাদা রয়েছে। তিনি বলেন: “আর আপনি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দিন; যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্‌র জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী)। তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭]

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল-তুওয়াইজিরি প্রণীত “উসুলুদ দ্বীনিল ইসলামী” থেকে সংকলিত