আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের জন্য কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”[হাদীসটি আবু দাউদ (৪০৩১) বর্ণনা করেন। শাইখ আলবানী সহিহ আবু দাউদে হাদীসটিকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন]
কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম এমন সকল বিষয়ে যেগুলো তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং যেগুলো মুসলিমরা ধারণ করে না।
এই বিশেষত্বের অর্থ স্পষ্ট হয় এভাবে যে: কোনো ব্যক্তিকে উক্ত কাজ করতে দেখলে বলা হয়, সে ঐ সম্প্রদায়ভুক্ত যাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। আর এটি নিশ্চয় এমন কাজের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে যে কাজটি কেবল ঐ সম্প্রদায়ই করে। অন্যদিকে যে কাজ মুসলিমরা ও তারা উভয়ে করে, সেটার ব্যাপারে এমনটি বলা সম্ভবপর নয় যে: এটি নিষিদ্ধ সাদৃশ্য গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত। কারণ কাজটি তাদের সাথে নির্দিষ্ট নয়।
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়: যে কাজগুলো কেবল এ কারণেই নিষেধ করা হয় যে সেগুলো মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ, সেগুলোর হুকুম স্থান-কালভেদে এবং রীতি-সংস্কৃতির বৈচিত্র্য অনুসারে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
যদি এ ধরনের পোশাক কোনো দেশে কেবল কাফেররাই পরিধান করে থাকে, তাহলে সে দেশের মুসলিমের জন্য ঐ পোশাক পরা হারাম। কিন্তু যদি অন্য কোনো দেশে মুসলিম-কাফের উভয়ে এটি পরে থাকে, তাহলে ঐ দেশে ঐ পোশাক পরিধান করা জায়েয।
বর্তমান সময়ে স্যুট-প্যান্ট পরা কাফেরদের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং সকল দেশে মুসলিমরা এই পোশাক পরে। তারা এই পোশাকে কাফেরদের অনুসরণ হয়েছে বলে মনে করে না। কারণ এটি তাদের বিশেষত্ব নয়। সুতরাং এই পোশাক পরা বৈধ। এটি পরতে কোনো আপত্তি নেই।
আমরা ইতঃপূর্বে (105412) ও (105413) নং প্রশ্নে স্যুট-প্যান্ট পরার বৈধতার বিষয়ে ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া উল্লেখ করেছি।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ‘কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণের বিষয়ে মূলনীতি কী?’
তিনি উত্তর দেন: ‘কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণের বিষয়টি বেশভূষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে হতে পারে। কারণ সাদৃশ্য গ্রহণ শব্দটি ব্যাপক। এর অর্থ হলো ব্যক্তি এমন কিছু করবে যা কাফেরদের জন্য বিশিষ্ট। যার ফলে কেউ তাকে দেখলে কাফেরদের দলভুক্ত মনে করবে। এটি হচ্ছে মূলনীতি। কিন্তু যদি কোনো জিনিস কাফের ও মুসলিম সবার মাঝে প্রচলিত থাকে তাহলে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয হবে; যদিও মূলত সেটি কাফেরদের থেকে গৃহীত হোক; যদি না সেটি সত্তাগতভাবে হারাম হয়। যেমন: রেশমের পোশাক পরা।’[সমাপ্ত][মাজমূ দুরূস ওয়া-ফাতাওয়াল হারাম আল-মাক্কী (৩/৩৬৭)]
তাকে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: ‘কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণের মাপকাঠি কী?’
তিনি উত্তর দেন: ‘সাদৃশ্য গ্রহণের মাপকাঠি হচ্ছে সাদৃশ্য গ্রহণকারী এমন কিছু করবে যা যার সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করছে ঐ ব্যক্তির সাথে খাস। কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তির এমন কিছু করা যা কাফেরদের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যে আচরণটি মুসলিমদের মাঝেও প্রচলন লাভ করেছে এবং সেটা আর কাফেরদের সবিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে অবশিষ্ট নেই, সেটা গ্রহণ করা কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ বলে গণ্য হবে না। সুতরাং সাদৃশ্য গ্রহণ হিসেবে সেটি হারাম হবে না। যদি অন্য কোনো দিক থেকে সেটি হারাম হয় সেটা হতে পারে। আমরা যা বললাম এটিই মূলতঃ শব্দটির প্রকৃত অর্থের দাবি। ফাতহুল বারীর প্রণেতা ইবনে হাজার অনুরূপ বিষয় (১০/২৭২) স্পষ্ট করে বলেন: ‘সালাফদের কেউ কেউ বুরনুস (লম্বা টুপি) পরা অপছন্দ করতেন। কারণ এটি ছিল খ্রিষ্টান পাদ্রীদের পোশাক। মালেককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: এতে কোনো সমস্যা নেই। তাকে বলা হলো: এটা খ্রিষ্টানদের পোশাক। তখন তিনি বললেন: এই এলাকাতেও এটি পরা হত।’[সমাপ্ত]
আমি (ইবনে উছাইমীন) বলি: ইমাম মালেক যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী দিয়ে দলীল পেশ করতেন তাহলে সেটি উত্তম হত। যে হাদিসে তিনি বলেছেন: “ইহরামকারী জামা, পাগড়ী, পায়জামা ও বুরনুস (টুপি) পরিধান করবে না। ... পূর্ণাঙ্গ হাদীস।”
ফাতহুল বারী (১/৩০৭) গ্রন্থে আরো রয়েছে: ‘যদি আমরা বলি যে এটি (ঘোড়ার বেগুনি রঙের জিন) ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে অনারবদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে, তাহলে এটি দ্বীনী কল্যাণের বিবেচনায়। কিন্তু এ ধরণের জিন সে সময়ে তাদের আলামত ছিল; যখন তারা কাফের ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু এটি আর তাদের আলামত নয় তাই সেই কারণটি এখন দূর হয়ে গেছে। তাই মাকরূহ বা অপছন্দনীয়তা বাতিল হয়ে গেল। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।’[সমাপ্ত][ফাতাওয়াল আকীদাহ (পৃ. ২৪৫)]
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।