শুক্রবার 19 রমজান 1445 - 29 মার্চ 2024
বাংলা

তারাবীর নামাযে প্রারম্ভিক দোয়া (সানা) পড়া

প্রশ্ন

আমরা কি তারাবীর নামাযের প্রত্যেক রাকাতদ্বয়ের প্রথম রাকাতে প্রারম্ভিক দোয়া (সানা) পড়ব?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

হ্যাঁ; তারাবী নামায ও অন্যান্য নফল নামাযের প্রত্যেক রাকাতদ্বয়ের প্রথম রাকাতে প্রারম্ভিক দোয়া পড়া শরিয়তের বিধান। যেহেতু এ সংক্রান্ত দলিলগুলোর বিধান সাধারণ:

কিয়ামুল লাইল এর নামাযে প্রারম্ভিক দোয়া হিসেবে পড়ার জন্য যে দোয়াগুলো উদ্ধৃত হয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ:

لا إله إلا الله  (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌) (তিনবার), الله أكبر  (আল্লাহু আকবার) (তিনবার)

 اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرَاً، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثيراً، وَسُبْحَانَ اللَّهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً   

(উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি কাবিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা) (অনুবাদ: আল্লাহ সবচেয়ে বড়, অতীব বড়। আল্লাহর জন্যই অনেক ও অজস্র প্রশংসা। সকালে ও বিকালে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।) এ দোয়া পড়ে জনৈক সাহাবী নামায শুরু করলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: "আমি বিস্ময়াভুত হয়ে গেছি। এ দোয়ার কারণে আসমানের দরজাগুলো খুলে গেছে।"

 الْحَمْدُ لله حَمْداً كَثيراً طَيِّباً مُبارَكاً فِيهِ 

(উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি)

(অনুবাদ: আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা; অঢেল, পবিত্র ও বরকত রয়েছে এমন প্রশংসা।) আরেক ব্যক্তি এ দোয়ার মাধ্যমে নামায শুরু করেল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "আমি দেখেছি যে, বারজন ফেরেশতা এটাকে গ্রহণ করে কে আগে এটাকে উপরে নিয়ে যাবে সে জন্য তাড়াহুড়া করছে।"

 اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ حَقُّ، وَقَوْلُكَ حَقُّ، وَلِقاؤُكَ حَقُّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمحَمَّدٌ  حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حاكَمْتُ، أَنْتَ رَبُّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْر، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ، وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ، وَمَا أَعْلَنْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ، أَنْتَ المُقَدِّمُ، وَأَنْتَ المُؤَخِّرُ، أَنْتَ إِلَهِيْ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ 

(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা নুরুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়া লাকাল হাম্‌দু আনতা ক্বায়্যিমুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আনতা মালিকুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়ামান ফীহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু, আনতাল হাক্কু, ওয়া ওয়া‘দুকা হাক্কুন, ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কুন, ওয়া লিক্বা-উকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান না-রু হাক্কুন, ওয়াস্‌সা‘আতু হাক্কুন, ওয়ান নাবিয়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন। আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়াবিকা আ--মানতু, ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়া বিকা খা-সাম্‌তু, ওয়া ইলাইকা হা-কামতু। আনতা রাব্বুনা, ওয়া ইলাইকাল মাছির। ফাগফির লী মা কাদ্দামতু, ওয়ামা আখখারতু, ওয়ামা আসরারতু, ওয়ামা আ‘লানতু, ওয়ামা আনতা আ'লামু বিহি মিন্নি, আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আন্তাল্ মুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আনতা ইলা-হী, লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা। ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিকা)।

(অনুবাদ: হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার জন্য। আসমানসমূহ, যমীন এবং এ দুটোর মাঝে যা কিছু আছে আপনিই সেগুলোকে আলোকিতকারী। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমানসমূহ, যমীন এবং এ দুটোর মাঝে যা কিছু আছে আপনিই সে সবের পরিচালক। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমানসমূহ, যমীন এবং এ দুটোর মাঝে যা কিছু আছে আপনি সে সবের রাজা। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আপনিই হক্ব। আপনার ওয়াদা সত্য। আপনার বাণী সত্য। আপনার সাক্ষাৎ লাভ সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। কিয়ামত সত্য। নবীগণ সত্য। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করি। আপনার ওপরই ভরসা করি। আপনার প্রতি ঈমান রাখি। আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। আপনার সাহায্যেই বা আপনার জন্যই শত্রুর সাথে বিবাদে লিপ্ত হই। আপনার কাছেই বিচার পেশ করি। আপনি আমাদের রব্ব। আপনার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। অতএব আমার পূর্বাপর গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন। আমি গোপনে বা প্রকাশ্যে যা করেছি ক্ষমা করে দিন এবং সে সব গুনাহও ক্ষমা করে দিন যা সম্পর্কে আমার চেয়ে আপনিই ভাল জানেন। আপনিই অগ্রগামীকারী ও পশ্চাদগামীকারী। আপনিই আমার উপাস্য। আপনি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। আপনার সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।)

 اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ، وَمِيْكَائِيلَ، وَإِسْرَافِيلَ، فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ، اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقيمٍ 

(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রববা জিব্রাঈলা, ওয়া মীকাঈলা, ওয়া ইস্রা-ফীলা, ফা-তিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি, ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশশাহা-দাতি। আনতা তাহকুমু বাইনা ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখতালিফূন। ইহদিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাককি বিইযনিকা ইন্নাকা তাহ্‌দী তাশা-উ ইলা- সিরা-তিম মুস্তাকীম)।

(অনুবাদ: হে আল্লাহ! জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব্ব। আসমান ও যমীনের স্রষ্টা। গায়েব ও প্রকাশ্য সর্ববিষয়ে জ্ঞানবান। আপনার বান্দাগণ যে সব বিষয়ে মতভেদ করত আপনিই তার মীমাংসা করবেন। সত্য কোনটি তা নিয়ে যেসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে সে সব ক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছায় আমাকে সুপথে পরিচালিত করুন। নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশবার তাকবীর দিতেন। দশবার আলহামদু লিল্লাহ্‌ উচ্চারণ করতেন। দশবার সুবহানাল্লাহ্‌ পড়তেন। দশবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ পড়তেন এবং দশবার আসতাগফিরুল্লাহ্‌ পড়তেন।

তিনি দশবার বলতেন:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي، وعافني 

(উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়াহদিনি, ওয়ারযুকনি, ওয়া আফিনি)

(অনুবাদ: হে আল্লাহ্‌! আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে সুপথে পরিচালিত করুন। আমাকে রিযিক দিন। আমাকে নিরাপত্তা দান করুন।)

তিনি আরও বলতেন:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الضِّيقِ يَوْمَ الْحِسَابِ

(উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনায যিক্বী ইয়ামাল হিসাব)

(অনুবাদ: হে আল্লাহ্‌! হিসাবের দিনের সংকট থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই।)

তিনি তিনবার তাকবীর বলে বলতেন:

ذُو الْمَلَكُوتِ وَالْجَبَرُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ 

(উচ্চারণ: যুল মালাকুতি, ওয়াল জাবারুতি, ওয়াল কিবরিয়া, ওয়াল আযামা)

(অর্থ: যিনি মহা প্রতাপ, বিশাল সাম্রাজ্য, মহা গৌরব-গরিমা এবং অতুলনীয় মহত্ত্বের অধিকারী।)

দেখুন: সিফাতু সালাতিন নাবিয়্য (পৃষ্ঠা-৯৪, ৯৫)]

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব