মঙ্গলবার 14 শাওয়াল 1445 - 23 এপ্রিল 2024
বাংলা

ঋণগ্রস্ত বন্দিদেরকে যাকাত দেয়ার হুকুম

প্রশ্ন

সম্প্রতি একটি সিস্টেম চালু করা হয়েছে যার অধীনে দেউলিয়া হয়ে পড়া বন্দীদেরকে সম্পদ সঞ্চয় করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।  এ সিস্টেমের অধীনে যাকাতের সম্পদ দান করা কি জায়েয হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

দেউলিয়া ঋণগ্রস্ত মানুষকে যাকাত দেওয়া জায়েয; তারা বন্দী হোক কিংবা বন্দী না হোক। যেহেতু আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তারা, দাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে যারা আছে ও মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০]

আয়াতে: الغارم অর্থ: المدين (ঋণগ্রস্ত) যদি ঋণের কারণে দেউলিয়া হয়ে পড়ে। অর্থাৎ এমন কিছু না পায় যা দিয়ে সে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। এমন ব্যক্তিকে এই পরিমাণ যাকাতের মাল দেওয়া যাবে যা দিয়ে সে তার ঋণ পরিশোধ করতে পারে। এমনকি সে যদি হারাম কাজের জন্য ঋণ নেয় তবুও দেওয়া যাবে; যদি সে তওবা করে।

'মুনতাহাল ইরাদাত' গ্রন্থে (১/৪৫৭) বলেন: "(কিংবা) ঋণ নিবে (নিজের জন্য) কোন (বৈধ) কাজে (কিংবা) নিজের জন্য ঋণ নিবে (হারাম) কাজে; তবে সে এর থেকে (তাওবা) করেছে এমন ব্যক্তি যদি ঋণের কারণে (দেউলিয়া হয়ে যায়)। যেহেতু আল্লাহ্‌বলেছেন: ঋণগ্রস্ত, [সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০][সমাপ্ত]

ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা গ্রন্থে (৯/৪৪৫) এসেছে: "যাকাতের কিছু অংশ চ্যারিটি সংস্থাগুলোকে দেওয়া কি জায়েয হবে? যেমন জামইয়াতুল বির্‌র (কল্যাণ সংস্থা) ও ইতলাকু সারাহিস সুজানা লিল হাক্কিল খাস (প্রাইভেট রাইটসের কারণে আটক বন্দীমুক্তি সংস্থা)কে? জবাব: কল্যাণ ফান্ডের ব্যাপারে কথা হল যদি জানা যায় যে, এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তগণ তাদের কাছে যে সম্পদ আসে সেগুলো শরিয়ত সমর্থিত যাকাতের খাতগুলোতে ব্যয় করেন কিংবা যাকাতের কিছু খাতে ব্যয় করেন; যেমন ফকীর ও মিসকীনদের খাতে এবং আরও জানা যায় যে, তাদের আমানতদারিতা, বিশ্বস্ততা, দ্বীনদারিতা ও ভাল হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় এবং তাদের বণ্টনের ব্যাপারে আস্থা রাখা যায়— তাহলে তাদেরকে যাকাতের সম্পদ দিতে কোন অসুবিধা নাই। যাতে করে তারা তাদের জানামত শরিয়ত সমর্থিত খাতে সেগুলো বণ্টন করতে পারে।

আর প্রাইভেট রাইটসের বন্দীদের ব্যাপারে কথা হল আল্লাহ্‌তাআলা নিজেই যাকাত বণ্টনের খাতগুলো বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন: “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তারা, দাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে যারা আছে ও মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০]

তিনি যাকাত বণ্টনের খাতগুলোর মধ্যে ঋণগ্রস্তদেরকেও উল্লেখ করেছেন। ঋণগ্রস্ত লোকেরা দুই শ্রেণীর হতে পারে। প্রথম শ্রেণী: যে ব্যক্তি পরস্পরের মাঝে সমঝোতা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়েছে। যে সমঝোতার মাধ্যমে একদল মানুষের মাঝে সংঘটিত ফিতনার আগুনকে নিভাতে পেরেছে। এ সমঝোতা করতে গিয়ে তিনি কিছু আর্থিক দায়বদ্ধতায় পড়ে গেছেন। তিনি এই দায় এই ভেবে গ্রহণ করেছেন যে, মুসলমানদের যাকাত থেকে সেটা পরিশোধ করবেন। এ শ্রেণীর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গকে তিনি যা ঋণ করেছেন সেটা যাকাত থেকে দেওয়া যাবে; এমনকি তিনি যদি ধনী হন তবুও।

দ্বিতীয় শ্রেণী: যে ব্যক্তি নিজের হালাল কাজের স্বার্থে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। যেমন যে ব্যক্তি নিজের ভরণপোষণের খরচ ও অধীনস্থদের ভরণপোষণের খরচ চালানোর জন্য ঋণ করেছেন কিংবা তার উপর কিছু আর্থিক দায় আবশ্যক হয়েছে; কোন জুলুম ও সীমালঙ্ঘন এ দায়বদ্ধতার কারণ নয়— তাহলে এমন ব্যক্তিকে তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য যাকাতের মাল দেওয়া যাবে।

আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের প্রতি আল্লাহ্‌র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।

আল-লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুছিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা।

সদস্য: আব্দুল্লাহ্‌বিন মানী'

সদস্য: আব্দুল্লাহ্‌বিন গুদইয়ান

কমিটির সহ-সভাপতি: আব্দুর রাজ্জাক আফিফি

সভাপতি: ইব্রাহিম বিন মুহাম্মদ আলে শাইখ

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব