বৃহস্পতিবার 16 শাওয়াল 1445 - 25 এপ্রিল 2024
বাংলা

যে নারী তার স্বামীর সাথে চুপ করে থাকার সমস্যায় ভুগছেন এবং তার সাথে অব্যাহতভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন না— এর সমাধান চাচ্ছেন

প্রশ্ন

আমার সমস্যা হলো আমি মানুষের সাথে কম কথা বলি। বিশেষতঃ আমার স্বামীর সাথে। আমাদের বাসায় ব্যাপকভাবে নিরবতা বিরাজ করে। আমি দেখি আমার স্বামী মোবাইল হাতে ধরে উচ্চস্বরে হাসছে। যখন আমার সাথে বসে সে চায় আমি তার সাথে কথা বলি। আমি কিছু বিষয়ে তার সাথে কথা বলা শুরু করি। তবে সে সময় আমি অনুভব করি যে, আমার মাথা খালি। সে রসিকতা অনেক পছন্দ করে; যার অধিকাংশই মিথ্যা। কিন্তু আমি এটা পছন্দ করি না। আমি মাঝেমধ্যে তাকে বলি কারো ব্যাপারে কথা বলো না; এতে সে আমার উপর বিরক্ত হয়। সে বলে: তুমি শুধু চুপ করে থাক। এমনকি সফরকালেও আমরা ক্যাসেট চালিয়ে রাখি। যদি তার কোন বন্ধু ফোন করে সে হয়তো তিন ঘণ্টা তার সাথে কথা বলে। কথার অধিকাংশ হচ্ছে হাসি ও মন্তব্য। এ সময় আমি তার পাশেই থাকি। আমি চাই আমার জীবন পরিবর্তন হোক। উল্লেখ্য, আমার কিঞ্চিত ফোবিয়া আছে। আমাদের বিয়ের বয়স তিন বছর। আমার একটি সন্তান আছে। আমার স্বামীর শখ হচ্ছে বই পড়া, সে ফুটবল ও কবিতা ভালোবাসে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সম্মানিত বোন, আপনি সর্বশেষ যা উল্লেখ করেছেন যে, আপনার স্বামীর শখ হচ্ছে বই পড়া, কবিতা ও ফুটবল আমরা সেটা দিয়ে শুরু করছি।

কেননা দাম্পত্য জীবনে নিরবতা কাটানোর সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে শখ ও গুরুত্বের বিষয়ে পারস্পারিক আলাপচারিতা। বই পড়া ও কবিতা একটি বিস্তৃত অঙ্গন যা নিয়ে উপভোগ্য ও উপকারী আলোচনা করার অনেক দিক রয়েছে। আপনার স্বামীর পছন্দের বই ও কবিতা কোনগুলো আপনি সেগুলো জেনে নিন এবং পর্যায়ক্রমে সেসব বিষয়ে আলোচনা করুন।

আপনি আপনার স্বামীকে বলতে পারেন আপনার পড়ার জন্য একটি বই নির্বাচন করতে। এরপর এই বই নিয়ে আপনাদের মাঝে আলোচনা পর্যালোচনা হতে পারে। কিংবা আপনি আপনার স্বামীকে জিজ্ঞেস করুন আজকে সে কী পড়েছে, গতকাল কী পড়েছে? বইটির লেখক কে? বইটিতে কি কি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে? তাতে কি কি চিন্তাধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে? ইত্যাদি।

এই আলাপচারিতায় রসিকতা কিংবা মজার বিষয় থাকবেই; যা আলোচনাকে প্রাণচাঞ্চল্য ও আগ্রহী করে তুলবে এবং অলসতা ও বিরক্তি দূর করবে। এভাবে আপনি নিরবতার প্রতিবন্ধকতাটি কাটাতে পারবেন এবং আপনার স্বামী ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন এবং আপনাদের মাঝে বুঝাপড়া ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাবে।

কৌতুকমূলক সাহিত্যের বই পড়তে কোন আপত্তি নেই; যেমন জাহেযের লিখিত ‘আল-বুখালা’ (কৃপণেরা), আখবারুল হামক্বা ওয়াত তুফাইলিয়্যিন (নির্বোধ ও পরান্নজীবীদের খবরাখবর) ইত্যাদি। কিংবা সমকালীন রম্য সাহিত্যিকদের বই পড়তে পারেন। এটাকে আলোচনার বিষয় বানাতে পারেন কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি আদানপ্রদানের উপলক্ষ বানাতে পারেন।

সাধারণভাবে তার কৌতুক ও কথায় যথাযথ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার জন্য মনোযোগ দিয়ে শুনা (effective listening) বাঞ্চনীয়। যেহেতু এ ধরণের শুনায় ইতিবাচক ও কথা বলার প্রতি উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়া থাকে। সাধারণত এ ধরণের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক মন্তব্য করা ও শুনার আগ্রহ ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ (দৃষ্টি, চোখের ইশারা)-এর মাধ্যমে কথাকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ করা হয়; যদিও সে কথা আপনার কাছে গুরুত্বহীন হোক না কেন।

আর সফর ও পারিবারিক আসরে যা করা ভাল সেটা হলো সে গুরুত্ব দিয়ে কোন ক্যাসেট শুনা কিংবা কোন বন্ধু কথা বলায় প্রতিবন্ধকতা তৈরী করার কাছে আপনি হার মানবেন না। বরং এ প্রসঙ্গগুলোকে আপনি আপনাদের উভয়ের মাঝে নিরবতা ভাঙ্গার ক্ষেত্রে কাজে লাগান এবং এটাকে আপনাদের আলাপচারিতার ইস্যু বানান। সেটা এভাবে আপনি যা শুনছেন সেটার ব্যাপারে মন্তব্য করা ও তার দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে।

আর যে ফোবিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন সেটার ব্যাপারে কথা হলো যদি সেটা অপরিচিত মানুষের সামনে কথা বলা বা তাদের উপস্থিতিতে কোন কাজ করার সময় ভয় কিংবা উদ্বিগ্নতা আকারে হয় তাহলে এটা একটি পরিচিত চিকিৎসাযোগ্য উপসর্গ; যেটাকে সামাজিক ভীতি (Social Phobia) কিংবা সামাজিক উদ্বেগ ব্যাধি (Social Anxiety Disorder) বলা হয়। আপনার জন্য আমাদের উপদেশ হলো এই ফোবিয়ার সরাসরি ও কার্যকরী চিকিৎসার জন্য আপনি একজন মহিলা মনোরোগ ডাক্তার বা কনসালটেন্টের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করুন; যিনি কিছু বৈঠকের মাধ্যমে এবং প্রয়োজন হলে কিছু ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা দিবেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব