শনিবার 13 সফর 1446 - 17 আগস্ট 2024
বাংলা

যে নারী তার দায়িত্বে থাকা ওয়াক্‌ফের বাক্সটি হারিয়ে ফেলেছে; সে কি বাক্সটির ক্ষতিপূরণ বহন করবে?

প্রশ্ন

ওয়াক্‌ফকৃত জিনিসে হস্তক্ষেপ করার হুকুম কী; যার ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে সে জিনিসটি হারিয়ে গেছে? ইউনিভার্সিটির মসজিদে দান সংগ্রহ করার জন্য একটি বাক্স রাখা হয়েছিল। যারা গরীবদের জন্য দান সংগ্রহ করার জন্য এটি ব্যবহার করতে চায় তাদের জন্য এটি ওয়াক্‌ফকৃত। ব্যবহারের পর বাক্সটি পুনরায় মসজিদে ফেরত দিতে হয়। আমি এ বাক্সটি যে উদ্দেশ্যে ওয়াক্‌ফ করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছি। এরপর বাক্সটি আমার থেকে হারিয়ে গেছে, সেটি আমি পাচ্ছি না। এখন আমার করণীয় কী? এ বাক্সটির ক্ষতিপূরণ দেওয়া কি আমার উপর আবশ্যক?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

যদি এ বাক্সটি সংরক্ষণে আপনার কোন অবহেলা বা কসুর না ঘটার পরেও সেটি হারিয়ে যায় তাহলে এর ক্ষতিপূরণ দেওয়া আপনার উপর আবশ্যক হবে না। আর যদি এর সংরক্ষণে আপনার কসুর ঘটে তাহলে এ বাক্সটির ক্ষতিপূরণ এবং বাক্সে যদি অর্থ থেকে থাকে সে অর্থের ক্ষতিপূরণ দেওয়া আপনার উপর আবশ্যক। যেহেতু আপনি এ বাক্সটির আমানতদার ছিলেন। কোন আমানতদার যদি সীমালঙ্ঘন না করে বা কসুর না করে তাহলে সে ক্ষতিপূরণ বহন করবে না।

আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (২৮/২৫৮, ২৫৯) এসেছে:

প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী (সম্পদের সাথে সংশ্লিষ্ট) হাত দুই প্রকার। আমানতের হাত ও দায়বহনের হাত।

আমানতের হাত: মালিক হিসেবে নয়; কারো প্রতিনিধি হিসেবে কোন জিনিস বা সম্পদ কারো হাতে থাকা। এর উদাহরণ হচ্ছে- গচ্ছিত সম্পদ সংরক্ষণকারী, ধারগ্রহণকারী, ভাড়াটিয়া, ব্যবসার পার্টনার, মুদারাবার পার্টনার, ওয়াকফ ও ওসিয়তের মুতাওয়াল্লি প্রমুখের হাত।

দায়বহনের হাত: মালিকানাসূত্রে বা সুবিধাভোগের সূত্রে যে সম্পদ কারো হাতে থাকে। এর উদাহরণ হচ্ছে- ক্রেতার হাত, দরাদরি করার জন্য গ্রহণকারীর হাত, বন্ধকগ্রহণকারীর হাত, আত্মসাৎকারীর হাত, মালিকের হাত এবং ঋণগ্রহণকারীর হাত।

আমানতের হাতের হুকুম: আমানত হিসেবে যে জিনিস কারো হাতে রয়েছে সে ব্যক্তির পক্ষ থেকে যদি সীমালঙ্ঘন বা কসুর না ঘটে তাহলে সে ক্ষতিপূরণের দায় বহন করবে না। যেমন: গচ্ছিত সম্পদ সংরক্ষণকারী।

দায়বহনের হাতের হুকুম: মালিকানাসূত্রে বা নিজে সুবিধাভোগের সূত্রে যে জিনিস কারো হাতে থাকবে সর্বাবস্থায় সে এর ক্ষতিপূরণ বহন করবে। এমনকি যদি কোন আসমানী মুসিবতের কারণেও সেটি ধ্বংস হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও। কিংবা সে যদি জিনিসটি ফেরত দিতে অপারগ হয় সে ক্ষেত্রেও; যেমনিভাবে নষ্ট হয়ে গেলে বা নষ্ট করে ফেললেও সে এর ক্ষতিপূরণ বহন করবে।

অতএব, যে ব্যক্তি যা কিছুর মালিক সেটা তার হাতে থাকাবস্থায় সে এর ক্ষতিবহনকারী। যদি সেটা বেচাবিক্রির চুক্তির ভিত্তিতে কিংবা অনুমতিক্রমে অন্যের হাতে হস্তান্তরিত হয়; যেমন: ক্রয়ের উদ্দেশ্যে দরাদরিকারীর হাতে, কিংবা অনুমতি ছাড়াই হস্তান্তরিত হয়; যেমন: আত্মসাৎকারীর হাতে— সেক্ষেত্রে সম্পদটি যার হাতে রয়েছে সেই এর ক্ষতিবহনকারী। অতএব, হাতওয়ালা ক্ষতিপূরণ বহন করবে। আর যদি গচ্ছিত রাখা, ধার নেওয়ার চুক্তির ভিত্তিতে হস্তান্তরিত হয় সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের দায় মালিকের উপর।"[সমাপ্ত]

এই আলোচনার আলোকে: আপনি যেহেতু বাক্সটি যে উদ্দেশ্যে ওয়াক্‌ফ করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন এবং আপনার পক্ষ থেকে এর সংরক্ষণ ও যত্ম নেয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমালঙ্ঘন, কসুর কিংবা অবহেলা ঘটেনি তাই আপনার উপর ক্ষতিপূরণ বহন করা আবশ্যক হবে না। যদি আপনি ক্ষতিপূরণ বহন করেন এবং অন্য একটি বাক্স নিয়ে আসেন কিংবা এর চেয়ে ভাল একটি বাক্স নিয়ে আসেন তাহলে সেটা আপনার জন্য ভাল এবং আপনার ব্যাপারে মানুষের সমালোচনা ও সংশয় দূরকারী। যেহেতু সেটি একটি দানবাক্স; এটি কিনতে আপনার খুব বেশি খরচ হবে না এবং এর জন্য আপনি সওয়াব পাবেন। তাই আপনার উপর আবশ্যক না হলেও অন্য একটি বাক্স দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব