বৃহস্পতিবার 9 শাওয়াল 1445 - 18 এপ্রিল 2024
বাংলা

পাত্রীকে মোহরানা হিসেবে স্বর্ণ কেনার জন্য কিছু অর্থ দিয়েছিল, এরপর বিয়ে ভেঙ্গে যায়

প্রশ্ন

জনৈক পাত্র পাত্রীর পরিবারকে একটা অংকের অর্থ দিয়েছিল বিয়ের প্রস্তাবের সময় সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক কিছু গ্রাম স্বর্ণ কেনার জন্য। বিয়ের আকদ করার দুই বছর আগে এই স্বর্ণ মোহরানা হিসেবে অগ্রিম প্রদান করা হয়; উপহার হিসেবে নয়। কয়েক মাস পরে কিংবা দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিয়ের প্রস্তাবনা বাতিল করা হয়। এখন পাত্র যে অর্থটি প্রদান করেছিল সেটা কি ফেরত নিবে; নাকি স্বর্ণ নিবে? উল্লেখ্য, হতে পারে এর মধ্যে স্বর্ণের দাম বেড়ে গেছে কিংবা কমে গেছে।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই স্বর্ণ অগ্রিম মোহরানা হিসেবে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে; উপহার হিসেবে নয়; সেক্ষেত্রে বিয়ের প্রস্তাবনা বাতিল করা হলে পাত্রের এই অধিকার রয়েছে যে, তিনি সম্পূর্ণ মোহরানা ফিরিয়ে নিবেন। কেননা বিয়ের আকদ সম্পন্ন হওয়া ছাড়া মেয়ে কোন কিছু পাওয়ার হকদার নয়।

দুই:

আপনার প্রশ্ন: সে কি অর্থের পরিমাণ গ্রহণ করবে; নাকি স্বর্ণ?

এর জবাব হলো: প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “চুক্তি মোতাবেক কিছু গ্রাম স্বর্ণ কেনার জন্য।  এই কথা নির্দেশ করে যে, মোহরানা ছিল স্বর্ণ এবং এর পরিমাণের ব্যাপারে উভয়পক্ষ একমত হয়েছিল। পাত্র তাদেরকে তার প্রতিনিধি বানিয়ে অর্থটি দিয়েছিল যাতে করে তারা তাদের পছন্দসই স্বর্ণ কিনতে পারে। প্রশ্নকারীর দেশে এটাই প্রচলিত রীতি। এটা হলো এক্সচেঞ্জ (নগদ অর্থ দিয়ে স্বর্ণ ক্রয় করা)-এর ক্ষেত্রে প্রতিনিধি বানানো। আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে এ ধরণের প্রতিনিধি বানানো জায়েয।

ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন:

“আমরা যতজন আলেম থেকে মুখস্ত করেছি তারা সকলে একমত যে, এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি বানানো জায়েয।”[আল-ইশরাফ (৮/৩১২) থেকে সমাপ্ত]

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে যদি স্বর্ণ কেনার পূর্বেই বিয়ের প্রস্তাবনা বাতিল করা হয় তাহলে লেনেদেন করার পূর্বেই প্রতিনিধিত্ব বাতিল হয়ে গেলো। সেক্ষেত্রে যে অর্থটি পাত্র তাদেরকে দিয়েছিল সেটাই তিনি ফেরত নিবেন; স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমার দিকে না তাকিয়ে।

ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:

“প্রতিনিধি বানানো— এটি উভয়ের পক্ষ থেকে একটি জায়েয চুক্তি। মক্কেল (নিয়োগদাতা) যে কোন সময় তার উকিলকে (প্রতিনিধিকে) বরখাস্ত করতে পারে এবং উকিল নিজেও যে কোন সময় ইস্তফা দিতে পারেন। কেননা এ চুক্তিটি হচ্ছে লেনদেন করার অনুমতি। তাই উভয়ের এটি বাতিল করার অধিকার রয়েছে; যেমনিভাবে কেউ যদি কাউকে তার খাবার খাওয়ার অনুমতি দেয়। দুইজনের একজন মারা যাওয়ার মাধ্যমে কিংবা পাগল হওয়ার মাধ্যমেও প্রতিনিধিত্ব বাতিল হয়ে যাবে। আমাদের জানা মতে এ বিষয়গুলো নিয়ে কারো দ্বিমত নাই।”[আল-মুগনী (৭/২৩৪)]

আর যদি স্বর্ণ কিনে ফেলার পর প্রতিনিধিত্ব বাতিল হয় তাহলে পাত্রের পাওনা হলো স্বর্ণ; প্রদত্ত অর্থ নয়। কেননা তারা ক্রয়ের ক্ষেত্রে তার প্রতিনিধি হিসেবে স্বর্ণ কিনে ফেলেছে। তাই যেন পাত্র নিজেই সেটি ক্রয় করেছে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব