Islam QA ওয়েবসাইটের জন্য দান করুন

আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্‌ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।

ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা ও পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করা এ দুটোর মাঝে কোন স্ববিরোধিতা নেই

03-11-2020

প্রশ্ন 224885

প্রশ্ন: আল্লাহ্‌ তার কিতাবে বলেছেন যে, তিনি আমাদেরকে নিছক তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আমরা কুরআনের অন্য কিছু স্থানে পাই যে, তিনি আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি কি স্ববিরোধিতা নয়?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা আর পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি এ দুটোর মাঝে কোন স্ববিরোধিতা নেই; কারণ ইবাদতটাই আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটা পরীক্ষা। এর মাধ্যমে জানা যায়— কে ঈমানদার, আর কে কাফের; কে অবাধ্য, আর কে বাধ্য। এরপর তিনি নেককারকে তার নেক অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন এবং পাপীকে তার পাপ অনুযায়ী শাস্তি দিবেন।

পরীক্ষা: বালা-মুসিবতের মাধ্যমে পরীক্ষার হেকমত হচ্ছে বালা-মুসিবতে পড়লে বান্দার কি অবস্থা হয় সেটা যাচাই করা: বান্দা কি সবর করে; নাকি হতাশ হয়ে পড়ে। আর নেয়ামত দেয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করার হেকমত হচ্ছে বান্দার অবস্থা ফুটিয়ে তোলা; বান্দা কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে; নাকি কৃতঘ্ন হয়ে যায়?!

প্রশ্নকারী ভাই এ দুটো বিষয়ের মাঝে স্ববিরোধিতা রয়েছে মর্মে দ্বিধাদন্দ্বে পড়ার কারণ বোধ হয় তিনি ধারণা করেছেন যে, ابتلاء (পরীক্ষা) শুধুমাত্র বিপদ-মুসিবতের মাধ্যমে হয়ে থাকে; এতে যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে সে সওয়াব পায়, আর যে ব্যক্তি অধৈর্য হয়ে যায় ও অকৃতজ্ঞ হয় সে গুনাহ কামাই করে ও শাস্তি পায়Ñ এটি ابتلاء (পরীক্ষা) অর্থ সম্পর্কে খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে এখানে ابتلاء দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে اختبار (পরীক্ষা)। এটি বালা-মুসিবত এর চেয়ে ব্যাপক। বনী আদমের সকল কর্মকাণ্ড, তার সকল বিষয়, জীবনের খুঁটিনাটি সবকিছু পরীক্ষার আওতাভুক্ত। তার জীবনটাই পরীক্ষা। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তার অসুস্থতা পরীক্ষা। তার সুখ-শান্তি পরীক্ষা। তার সম্পদ পরীক্ষা। তার রিযিক পরীক্ষা। তাকে ঘিরে যা কিছু আছে সবকিছু তার জন্য পরীক্ষা। তার ইলম পরীক্ষা। এ সবকিছু আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বান্দার জন্য তার চলার পথ নির্বাচন করার পরীক্ষা। বান্দা কি ডান পথ গ্রহণ করে; নাকি বাম পথ। বান্দা কি রহমানের বাধ্য হয়ে চলে; নাকি শয়তানের বাধ্য হয়ে চলে। এ কারণে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য-  কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।”[সূরা মুলক, আয়াত: ২] আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, আর তাঁর আর্‌শ ছিল পানির উপর, তোমাদের মধ্যে কে আমলে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।”[সূরা হুদ, আয়াত: ০৭] আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর আল্লাহ্‌ ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে এক উম্মত করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। কাজেই সৎকাজে তোমরা প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহ্‌র দিকেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছিলে, সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৪৮] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “তিনিই তোমাদেরকে যমীনের খলীফা বানিয়েছেন এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কিছু সংখ্যককে কিছু সংখ্যকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। নিশ্চয় আপনার রব দ্রুত শাস্তিপ্রদানকারী এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়াময়।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৬৫]

এ আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, মানুষকে সৃষ্টি করার পেছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘পরীক্ষা’। এ পরীক্ষা মধ্যে রয়েছে ইবাদতের দায়িত্বগুলো অর্পণ। সুতরাং যে ব্যক্তি যথাযথভাবে ইবাদত আদায় করবে – সকল কল্যাণকে অন্তর্ভুক্তকারী ইবাদতের ব্যাপকার্থক যে সংজ্ঞা তার ভিত্তিতে – সে সফলকাম। আর যে ব্যক্তি এতে কসুর করবে সে তার কসুর অনুপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:

আল্লাহ্‌ তাআলা জানাচ্ছেন যে, তিনি বিশ্বজগৎ, মৃত্যু, জীবন এবং পৃথিবীকে এর ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে তা দিয়ে সুশোভিত করেছেন পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। তিনি যেন পরীক্ষা করে নিতে পারেন তাঁর মাখলুকের মধ্যে কে কর্মে উত্তম। যার কর্ম হবে তার রবের পছন্দ অনুযায়ী। এর মাধ্যমে মাখলুক তাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে, বিশ্বজগৎকে যে লক্ষ্যে সৃজন করা হয়েছে সে বাস্তবায়ন করবে। সে উদ্দেশ্য হচ্ছে- রবের বন্দেগী করা; যে বন্দেগীর মধ্যে নিহিত রয়েছে রবের ভালবাসা ও আনুগত্য। এটাই হচ্ছে- উত্তম আমল। যে আমল তাঁর ভালবাসা ও সন্তুষ্টি অনুযায়ী পালিত হয়।[‘রওযাতুল মুহিব্বীন’ পৃষ্ঠা- ৬১ থেকে সমাপ্ত]

আল্লামা মুহাম্মদ আল-আমীন আল-শানক্বিতী (রহঃ) সূরা যারিয়াত এর ৫৬ নং আয়াত “আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি” এর তাফসির করতে গিয়ে বলেন: এ আয়াতে কারীমার গবেষণালব্ধ অর্থ হচ্ছে -ইনশাআল্লাহ্‌-: ‘শুধু আমার ইবাদতের জন্য’ অর্থাৎ তাদেরকে শুধু আমার ইবাদত করার নির্দেশ দেয়ার জন্য এবং দায়িত্ব অর্পণের মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। অতঃপর কর্ম অনুযায়ী আমি তাদেরকে প্রতিদান দিব: ভাল আমল করলে ভাল; খারাপ আমল করলে খারাপ।

আমরা গবেষণালব্ধ এজন্য বললাম যেহেতু আল্লাহ্‌র কিতাবের অনেক মুহকাম আয়াত এ অর্থটি নির্দেশ করে। আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর কিতাবের অনেক স্থানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে কর্মে উত্তম এবং তিনি তাদেরকে সৃজন করেছেন যাতে করে তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান দিতে পারেন।

আল্লাহ্‌ তাআলা সূরা কাহাফের প্রথমদিকে বলেন:

“নিশ্চয় যমীনের উপর যা কিছু আছে আমরা সেগুলোকে তার শোভা করেছি, মানুষকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ।”[সূরা কাহাফ, আয়াত: ৭]

এ আয়াতগুলোতে পরিস্কার করে দেয়া হয়েছে যে, সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে এ পরীক্ষা করা যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে উত্তম। এটি আল্লাহ্‌র ‘আমার ইবাদতের জন্য...’ আয়াতকে ব্যাখ্যা করে দিচ্ছে। কুরআন দিয়ে কুরআন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে কুরআন ব্যাখ্যার সর্বোত্তম পদ্ধতি।

এ কথা সুবিদিত যে, আমলের ফলাফল পরিপূর্ণ হবে না নেককারের নেকের প্রতিফল ও পাপীর পাপের প্রতিদান দেয়া ব্যতিরেকে। তাই, আল্লাহ্‌ তাআলা প্রথমে তাদেরকে সৃষ্টি করার গূঢ় রহস্য উল্লেখ করেছেন। এরপর তাদেরকে পুনরুত্থানের কথা উল্লেখ করেছেন: আর পুনরুত্থান হচ্ছে ভালো লোকের ভাল কাজের ও মন্দ লোকের মন্দ কাজের প্রতিদান দেয়া। সূরা ইউনুসের সূচনাতে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “সৃষ্টিকে তিনিই প্রথম অস্তিত্বে আনেন, তারপর সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফপূর্ণ প্রতিফল প্রদানের জন্য। আর যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত গরম পানীয় ও অতীব কষ্টদায়ক শাস্তি। কারণ তারা কুফরী করত।”[সূরা ইউনুস, আয়াত: ০৪] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “আর আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহ্‌রই। যাতে তিনি তাদের কাজের প্রতিফল দিতে পারেন যারা মন্দ কাজ করে এবং তাদেরকে তিনি উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন যারা সৎকাজ করে।”[সূরা নাজম, আয়াত: ৩১]

আল্লাহ্‌ তাআলা মানুষের এমন ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছেন যে, তাকে অহেতুক ছেড়ে দেয়া হয়েছে; তাকে কোন আদেশ বা নিষেধ করা হয়নি। তিনি আরও বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ধাপে ধাপে স্থানান্তরিত করে তাকে অস্তিত্বে এনেছেন; যাতে মৃত্যুর পর তাকে পুনর্জীবিত করতে পারেন অর্থাৎ তার কর্মের প্রতিদান দিতে পারেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে? সে কি বীর্যের স্খলিত শুক্রবিন্দু ছিল না? তারপর সে ‘আলাকায়’ পরিণত হয়। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাকে সৃষ্টি করেন এবং সুঠাম করেন। অতঃপর তিনি তা থেকে সৃষ্টি করেন যুগল নর ও নারী। তবুও কি সে স্রষ্টা মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নন?” [

[আয-ওয়াউল বায়ান ফি ইযাহিল কুরআনি বিল কুরআন (৭/৪৪৫) থেকে সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

কুরআনের তাফসির
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইটে দেখান