শুক্রবার 19 রমজান 1445 - 29 মার্চ 2024
বাংলা

জনৈক ব্যক্তি যে মসজিদে  নামায পড়েন সেখানকার মুসল্লিরা সঠিক ওয়াক্ত হওয়ার আগেই ফজরের নামায পড়ে থাকেন; তিনি কি তাদের সাথে নামায পড়বেন?

প্রশ্ন

ফজরের নামায নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। এ ব্যাপারে মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে যে, তারা কী করবে? আমরা ফজরের নামায পড়ে মসজিদ থেকে রাত থাকতেই বের হই! ফজরের নামাযের এই জামাতে উপস্থিত হওয়া কি আবশ্যকীয়? নাকি ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর আমি বাসাতে নামায পড়ব? আশা করব, আপনি জবাব দিবেন। কারণ আমি সিদ্ধান্তহীনতায় আছি।    

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

ফজরের নামাযের ওয়াক্ত দ্বিতীয় ফজর তথা সুবহে সাদিক থেকে শুরু হয়। সেটি হচ্ছে দিগন্তে ডান থেকে বামে আড়াআড়িভাবে ফুটে উঠা সাদা রেখা। ফজরের নামাযের ওয়াক্ত সূর্যোদয় পর্যন্ত বিলম্বিত। ইতিপূর্বে 26763 নং প্রশ্নোত্তরে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক মানুষ ক্যালেন্ডারের উপর নির্ভর করে যে ভুল করে থাকে সেটা আমরা বর্ণনা করেছি। অধিকাংশ ক্যালেন্ডারে সুবহে সাদিকের সময় সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়নি। একাধিক আলেম এ বিষয়টি দ্ব্যর্থহীনভাবে ব্যক্ত করেছেন। তবে এ ভুলের পরিমাণ কতটুকু তা নিয়ে সমকালীন আলেমগণ মতভেদ করেছেন। কারো কারো মতে, এটি ৫ মিনিটের বেশি নয়। কারো কারো মতে, এটি প্রায় ৩০ মিনিট। আপনার দেশের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানা নাই। তবে, প্রত্যেক দেশের অধিবাসীর কর্তব্য একদল নির্ভরযোগ্য আলেমকে ফজরের ওয়াক্ত নির্ধারণ করা ও মানুষকে সেটা জানানো এবং ক্যালেন্ডারের ভুল সাব্যস্ত হলে তা থেকে মানুষকে সতর্ক করার দায়িত্ব দেওয়া। প্রমাণ ছাড়া ব্যক্তি বিশেষের এমন কোন দাবী করার অধিকার নাই যে, নামায ওয়াক্তের আগে পড়া হচ্ছে। বিশেষতঃ শহরাঞ্চলে ও নাগরিক সুবিধাসমৃদ্ধ স্থানগুলোতে ফজরের ওয়াক্ত নির্ধারণ করা কঠিন; যেহেতু ফজরের শুভ্র রেখা শহরের লাইটের আলোর সাথে মিশে যায়।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এমন একদল মানুষ সম্পর্কে যারা ফজরের ওয়াক্ত কখন হয় তা জানে না; তারা যাকে আস্থাভাজন মনে করে তাদের সংবাদের ভিত্তিতে নামায পড়ে; কিন্তু তাদের কারো কারো সন্দেহ থেকে যায়? জবাবে তিনি বলেন: যেহেতু তারা এ লোকের প্রতি আস্থা রাখেন এবং জানেন যে, ওয়াক্ত শুরু হওয়া সম্পর্কে এ লোক জানে; অতএব তাদের উপর কোন কিছু বর্তাবে না। যেহেতু তারা এমন কোন প্রমাণ পায়নি যে, তারা ওয়াক্তের আগে নামায পড়েছেন। যেহেতু তাদের কাছে এমন কোন প্রমাণ নাই এবং তারা যে লোকের প্রতি আস্থাশীল তার বক্তব্য গ্রহণ করেছেন; অতএব কোন অসুবিধা নাই। তবে কোন মানুষের যদি সন্দেহ হয় তাহলে তার উচিত সতর্কতা অবলম্বন করা। তাই ওয়াক্ত শুরু হয়েছে মর্মে যদি তার প্রবল ধারণা হয় কিংবা নিশ্চিত জ্ঞান লাভ হয় তখনই সে নামায পড়বে এবং তার কর্তব্য অপর লোকদেরকেও সতর্ক করা। তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে বলবে: পাঁচ মিনিট বা দশ মিনিট অপেক্ষা করুন; এতে তাদের কোন অসুবিধা হবে না। কারণ এক মিনিট আগে নামায পড়ার চেয়ে দশ মিনিট বা পনের মিনিট পরে নামায পড়া উত্তম।"[ফাতাওয়াস শাইখ বিন উছাইমীন; খণ্ড-১২, প্রশ্ন নং-১৪৬]

দুই:

অতএব, আপনার কর্তব্য হল- মসজিদের মুসল্লিদেরকে উপদেশ দেওয়া; যেন তারা এতটুকু দেরী করে যাতে করে তাদের প্রবল ধারণা হয় যে, ওয়াক্ত প্রবেশ করেছে। যদি তারা এতে সাড়া দেয় আলহামদু লিল্লাহ। আর যদি তারা যেভাবে পড়ে আসছে সে সিদ্ধান্তে অটল থাকে (অন্যদিকে আপনি মনে করেন যে, তারা ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামায পড়ছে) তাহলে আপনি অন্য কোন মসজিদ সন্ধান করুন যেখানে দেরীতে নামায পড়া হয়। যদি আপনি এমন কোন মসজিদ না পান তাহলে আমরা আপনাকে ঐ মসজিদের সাথেই নামায পড়ার পরামর্শ দিব; যাতে করে মসজিদে ফজরের নামায ত্যাগ করা আপনার প্রতি মন্দ ধারণার কারণ না হয় যে, আপনি নামায না পড়ে ঘুমিয়ে আছেন এবং আপনি যেন মসজিদে নামায পড়ার সওয়াব থেকে নিজেকে বঞ্ছিত না করেন এবং পরবর্তীতে নামায আদায়ের ব্যাপারে অলসতা না করেন। এরপর আপনি বাসায় ফিরে ওয়াক্ত প্রবেশ করার পর আপনার পরিবারকে নিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায় করবেন। শাইখ আলবানী এভাবে উপদেশ দিয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আপনি কি মসজিদে নামায পড়ার পরামর্শ দেন; নাকি বাসাতে? [কারণ মসজিদের মুসল্লিরা ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই নামায পড়ে।]

জবাবে তিনি বলেন:

"আমি একসাথে দুটো করার পরামর্শ দিচ্ছি। সে ব্যক্তি মসজিদে যাবেন। যদি তারা ওয়াক্তের আগে নামায পড়ে তাহলে ঐ নামায তার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। এরপর বাসায় ফিরে ওয়াক্তমত ফরয নামায পড়বে। বিশেষতঃ তার ফ্যামিলিকে নিয়ে পড়বে। তবে, এখানে এর চেয়ে আবশ্যক একটি বিষয় রয়ে গেছে; যা সব মানুষের পক্ষে করা সম্ভবপর হবে না। আর তা হল: মসজিদের মুসল্লিদেরকে এই জঘণ্য বিষয় সম্পর্কে সাবধান করা..."[সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নুর; ক্যাসেট নং-৭৬৭; মিনিট-৩২]

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ। 

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব